শিরোনাম
◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার

প্রকাশিত : ০৯ জুন, ২০২০, ০৫:৪০ সকাল
আপডেট : ০৯ জুন, ২০২০, ০৫:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] যশোরে পু‌লিশের নির্যাতনে কলেজ ছাত্রের কিড‌নি ড্যামেজ

র‌হিদুল খান, যশোর প্রতিনিধি : [২] দুটি কিডনি অকেজো হয়ে যশোরে ইমরান হোসেন নামে এক কলেজছাত্র মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। অভিযোগ, পুলিশি নির্যাতনে কিডনি বিকল হয়ে তার জীবনাশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

[৩] যশোরের পুলিশ সুপার বলছেন, তিনি ঘটনাটি শোনার পর পরই তদন্ত শুরু করেছেন। এই বিষয়ে পরস্পর বিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

[৪] ইমরান হোসেন যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের নিকার আলীর ছেলে। ইমরানের ভাষ্য, সে সদর উপজেলার কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে সে সলুয়া বাজার এলাকা থেকে নিজ বাড়ি ফিরছিলো। এসময় তার সঙ্গে একই এলাকার আরেকটি ছেলে ছিলো। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছুলে সাজিয়ালি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা তাদের গতিরোধ করে। এরপর সঙ্গে থাকা ছেলেটির ব্যাগ তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।

[৫] এসময় ভয়ে সে (ইমরান) দৌঁড় দেয়। পুলিশ ধাওয়া করে তাকে ধরে বেধড়ক মারপিট করলে সে জ্ঞান হারায়। পরে একটি ফার্মেসিতে তার জ্ঞান ফেরে। এসময় পুলিশ তার পকেটে গাঁজা দিয়ে আটকের কথা বলে। এরপর ইমরানের বাবাকে ফোন দিয়ে তাকে ছাড়তে ২৫ হাজার টাকাও দাবি করেন এক পুলিশ সদস্য। পরে ছয় হাজার টাকা নিয়ে তারা ইমরানকে ছেড়ে দেয়।

[৬] মারপিটের ঘটনা কাউকে বললে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে ফের পেটানোর হুঁমকি দেয় বলেও ইমরানের দাবি।
‘ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলিনি। তিনদিন পেটের ব্যথায় মরে যাচ্ছি বলে মনে হয়েছে। সহ্য করতে না পেরে মা-বাবাকে নির্যাতনের বিষয়টি জানাই। এরপর তারা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এখন যেন আমার পেটের মধ্যে সব ছিড়ে যাচ্ছে। কোনো ওষুধ শান্তি দিতে পারছে না। আমি মনে হয় বাঁচবো না’ বলছিলো ইমরান।

[৭] ইমরানের মা বুলবুুল বেগম বলেন, ‘এভাবে কেউ কাউকে নির্যাতন করতে পারে? ছেলেটারে শেষ করে ফেলেছে। ওর চিকিৎসা কীভাবে করাবো? বাঁচবে কি-না জানি না। আমি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চাই।’

[৮] ইমরানের বাবা নিকার আলী বলেন, ‘আমার ছেলেটা লেখাপড়া করে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন, কোনো খারাপ কাজের সাথে নেই সে। অথচ তাকে ধরে নির্যাতন করা হলো। ডাক্তার বলেছে, তার অবস্থা খুব খারাপ। আমি এই ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার ভিক্ষা চাই।’

[৯] ইমরানের চিকিৎসক যশোর জেনারেল হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জ্বল বলেন, ‘ইমরানের দুটি কিডনির ফাংশন খুবই খারাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় কিডনির ক্রিটেনিন ১ দশমিক ৪ থাকার কথা কিন্তু ইমরানের তা ছিল ৮ দশমিক ৮। আজ এটা আরো বেড়েছে। দ্রুত তার ডায়ালিসিস শুরু করতে হবে এবং আজই সেটা করা হবে। তবে বলা যাচ্ছে না, সে রিকভারি করবে কি-না। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।’

[১০] এ বিষয়ে সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মুন্সি আনিচুর রহমান বলছেন, ঘটনার দিন সকালে তিনি জরুরি কাজে কোতয়ালী থানায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন। এসে জানতে পারেন এএসআই সুমারেশ সাহা, এএসআই সাজদার রহমান ও চার কনস্টেবল ওই কলেজ ছাত্রকে আটক করেছিল কিন্তু সে অসুস্থ হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে তার বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়। ইমরানকে ছাড়তে কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন ক্যাম্প ইনচার্জ।

[১১] যোগাযোগ করা হলে, যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আশরাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। ওই ছেলেটি অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত কি-না সে খোঁজও নেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে ইনফরমেশন পাওয়া যাচ্ছে, তা হলো, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল ওই রাস্তা দিয়ে মাদকদ্রব্য আসবে। সেই অনুযায়ী ওই ছেলে দুটোকে আটক করেছিল পুলিশ। ওই সময় ইমরান নামে ছেলেটি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পড়ে গিয়ে সে আঘাত পায়। পিছু ধাওয়াকারী পুলিশ সদস্যরা তাকে কাদার মধ্যে থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

[১২] তিনি আরো বলেন, করোনাকালে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যত কম সংখ্যক মানুষকে গ্রেফতার করা যায়, ততোই ভালো। এমনকি কোনো ব্যক্তির শরীরের কাছাকাছি যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। ছেলেটির কাছে টাকা দাবির কথাও শুনেছি। যদি কোনো পুলিশ সদস্য টাকা লেনদেন বা শারীরিক নির্যাতনে জড়িত বলে প্রমাণিত হন, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়