শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০৯ জুন, ২০২০, ০৭:১৭ সকাল
আপডেট : ০৯ জুন, ২০২০, ০৭:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাদিয়া নাসরিন : নিকুন্তিলা, মা আমার-জীবন একটা রেইস, কখনো হেরে যাবি, হোঁচট খেয়ে টালমাটাল হবি, কাঁটার আঘাতে রক্তাক্ত হবি, কিন্তু সকল দুঃখ, জরা ও বাঁধা ডিঙিয়ে ওঠে দাঁড়াবি, আমি জানি তুই পারবি

সাদিয়া নাসরিন : আমার নিকুন্তিলা, (৭ জুন) জন্মদিন। পায়ে পায়ে ষোল ঘুরে এলি আজ। জীবনের আকাশে ডানা মেলার সময় হয়েছে এবার। তোর জন্মদিনে তোকে আবারো উপহার দিলাম এই খোলাচিঠি। গত দু’বছর ধরেই তোর জন্মদিনে এই চিঠিটা তোকে লিখি আমি। চিঠিটা তোকে লেখা। কিন্তু শুধু তোর জন্য নয়। এই পৃথিবীর সব নিকুন্তিলাকে আমি এই কথাগুলো বলতে চাই। জানি তুই এখনই তেমন করে সব বুঝে উঠতে পারবি না। কিন্তু বারবার পড়তে পড়তে একদিন ঠিক বুঝতে পারবি। যখন তুই আরো বড় হবি, আকাশের মতো একলা হবি, পাহাড়ের মতো মৌন হতে শিখবি, সেদিন বুঝতে পারবি, আমি তোকে কী বলতে চেয়েছিলাম।

 

নিকুন্তিলা মা আমার, তোরা খুব জটিল আর অনিশ্চিত একটা সময়ে এ পৃথিবীতে এসেছিস। তোদের সামনে কঠিন লড়াইয়ের পথ। ধর্মব্যবসা, পুরুষতন্ত্র, আর পুঁজিবাদ এই তিন পরাশক্তি যেখানে জোট বেঁধেছে, সেই লড়াইয়ের ময়দানে তোদের একা দাঁড়াতে হবে। মনে রাখবি, ‘যে পথে যেতে হবে সে পথে তুমি একা/নয়নে আঁধার রবে, ধেয়ানে আলোকরেখা।’ সব সময় মনে রাখবি, পুরুষতন্ত্রের নিয়মই হলো যে কোন কৌশলে মেয়েদের অধিকার বোধটুকু দুমড়ে মুচড়ে নষ্ট করা। মেয়েরা যখনই নিজের মুল্য বোঝার চেষ্টা করে, তখনই যে কোন মুল্যে সেই লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দেওয়াটাই পুরুষতন্ত্রের রাজনীতি।তোদের খুব সতর্ক থাকতে হবে যেন এই ভয়ঙ্কর রাজনীতির ফাঁদ পেতে অলঙ্কারের শেকল, কর্পোরেট হিজাব, বা পুঁজিবাদী সৌন্দর্য্যের প্রতিযোগীতায় এসবে ব্যস্ত রেখে তোদের স্বনির্ভরতার চিন্তা থেকে সরিয়ে না দিতে পারে।

 

মা, আমার! তোদের খুব সাবধান থাকতে হবে। এমন একটা সময় বিভ্রান্ত সময় তোদের অতিক্রম করতে হচ্ছে যখন মেয়েদের নিজেদের মুখেই বলাচ্ছে তারা স্বাধীনতা চায় না। মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু স্বনির্ভর হচ্ছে না। রোজগার করছে কিন্তু স্বাধীন হচ্ছে না। জীবনের সব সম্ভাবনা আর যোগ্যতাকে তুচ্ছ করে স্মার্ট দেখতে সব মেয়েরা কর্পোরেট বিয়ের রোশনাই, ক্যামেরার ফ্লাশলাইট এর আগ্রাসনে তলিয়ে যাচ্ছে দাসপ্রথার নতুন ফর্মে। শিক্ষিত স্ত্রী হয়ে বাচ্চাদের স্কুল, পরীক্ষা, বাজারঘাট, র‌্যাংকিং, বিলিং-ট্যাক্স এসব সামলাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী মেয়েরা। এসব দেখে আমার ভয় হয় এই পৃথিবীতে হয়তো আর বের হয়ে আসবে না একজন বেভ্যঁয়ার, ভার্জিনিয়া, ব্রাউন মিলার, অরুন্ধতী বা এড্রিয়ান। বাচ্চা আমার, তবু যুদ্ধ করে যেতে হবে শেষ অবধি। কখনোই লড়াই বন্ধ করা যাবে না। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। সবার আগে তোকে লড়াই করতে হবে নিজের সাথে। নিজেকে মুক্ত করতে হবে নিজের ভয় থেকে। সেই শক্তি, সামর্থ্য, ব্যক্তিত্ব তোকে অর্জন করতে হবে। মনে রাখিস, জ্ঞানচর্চা ছাড়া সেই ব্যক্তিত্ব গঠন হবে না। কোনো অবস্থাতেই নিজের উপর বিশ্বাস হারাবি না। নিজের উপর বিশ্বাস হারালে বৈষম্য আর অনিয়মকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা হারাবি। কখনোই নিজের উপর নকল বা বাড়তি কিছু চাপিয়ে বোঝা বাড়াসনে। না বাড়তি রঙ, না বাড়তি পোশাক। মনে রাখিস, পাথর চাপা ঘাস বিবর্ণ হয়ে যায়। বিবর্ণ মেয়েদের পক্ষে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, অধিকার বোধও আশা করা যায় না।

 

সব সময় মনে রাখবি, তুই নারী। এই বিশ্বে সভ্যতার উত্তরাধিকার ধারন করিস তুই। নারী বলে নিজেকে নিয়ে অহঙ্কার করতে শিখবি, রক্তের প্রতি কণাকে পবিত্র ভাবতে শিখবি। এই জীবন তোর। এর চালক তুই। তুই জানিস, আমি সেই নারী, যে সারাজীবন নিজের জীবন, নিজের ঘর আর নিজের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে গেছি। জীবনকে নিজের মতো করে যাপনের সক্ষমতার জন্য তোকেও লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। নিকুন্তিলা মা আমার। কোনো অবস্থাতেই ভুলে যাবি না, স্বাধীনতা একজন মানুষের প্রথম অধিকার। কোনো মূল্যেই, কোনো লোভেই, কোনো শেকলেই যেন সে স্বাধীনতা হাতছাড়া না হয়। এই স্বাধিনতাটুকু কেড়ে নেওয়ার জন্য অনেক চক্রান্ত হবে। তোদের ভালো-মন্দ বোঝাবে, সতীত্ব শেখাবে, নারীত্ব বোঝাবে, মাতৃত্বের মহিমার কথা বলবে, নত হতে শেখাবে। এসব ভুল শিক্ষা, এসব পাতা ফাঁদে পা দিবি না।

 

বাচ্চাটা, সম্পর্ককে অতিক্রম করার চেষ্টা করবি। জেনে রাখিস, প্রতিটি সম্পর্কই নিয়ন্ত্রণকামী এবং কোনো না কোনোভাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তাই সম্পর্কে সমতার কথা উচ্চারণ করতে কোনো কুণ্ঠা রাখবি না। যখনই নিয়ন্ত্রণ দেখবি, প্রতিরোধ করবি। অন্যায়, সে আয়তনে ওজনে যতোই ছোট হোক না কেন, তা থামাতে দেরী করবি না। চোখে চোখ রেখে কথা বলবি। যদি বিরোধ হয়, হবে। মনে রাখিস, তর্ক-বিরোধ মিমাংসার পর যে পথ তৈরি হবে সে পথ বোঝাপড়ার। সে পথেই হাঁটবি। নিজের মনের কথা মন দিয়ে শুনবি, মাথার কথা মাথা দিয়েই বিবেচনা করবি। অনেক সময় মন আর মাথার সংঘর্ষ হবে। সেই সংঘর্ষকে মোকাবেলা করেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অর্জন করবি। মনে রাখবি, জীবনটা একটা রেইস। কখনো হেরে যাবি, হোঁচট খেয়ে টালমাটাল হবি। কাঁটার আঘাতে রক্তাক্ত হবি। দুঃখ জরা আসবে বারবার। কিন্তু সকল দুঃখ জরা বাঁধা ডিঙিয়ে উঠে দাঁড়াবি। আমি জানি তুই পারবি। কারণ তুই সাহসী, শক্তিশালী। এই শক্তি কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সেই শক্তিতেই তুই সুন্দর থাকবি, সুন্দর জন্ম দিবি।

 

জীবনকে যাপন করার ক্ষমতা তুই হাতের মুঠোয় নিবি। সব সময় মনে রাখবি, তুই সুন্দর, সম্মানিত, অপার, অশেষ ও অমূল্য। এই পৃথিবী তোর, তুই যেমন ইচ্ছে তেমন করে বাঁচবি এই পৃথিবীতে। এই বিশ্বজগত তুই প্লাবিত করবি হাসি গানে। জয় করবি আকাশ-পাতাল। আমি সবখানে তোদের জন্য, তোদের হয়ে লড়াই করবো। এই আমরা, তোদের মায়েরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি যেন গন্তব্যে পৌছানোর জন্য রক্তাক্ত কাঁটাতার পেরুতে না হয় তোদের। আমরা লড়াই করে যাচ্ছি যেন বুনো পুরুষের তাড়া খেয়ে ছুটে না বেড়াতে হয় কোনো মেয়েকে, একটি মেয়েকেও যেন আর ছিন্নভিন্ন না করতে পারে, রক্তাক্ত করতে না পারে ওই মানুষখেকো পুরুষের পাল। মা আমার, সব শেষে আমার আশীর্বাদ তোর সাথেই থাকবে। জীবনকে যাপন করার ক্ষমতা তোর হোক। আলোর জীবন হবে তোর। আঁধার এলে জানবি, আলোর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমি আছি তোর জন্য। যখনই তোর একা লাগবে, আমি তোর সঙ্গে থাকবো। যখনই অন্যরা তোকে লড়াইয়ের ময়দানে একা করে দেবে, সন্দেহ করবে, প্রশ্নবিদ্ধ করবে, হেসে উড়িয়ে দেবে, তখনো আমি তোর সঙ্গেই থাকবো। আমি তোর সঙ্গেই আছি। আমি তোর পাশেই আছি। বাতিঘর কোথাও যায় না। একা দাঁড়িয়ে আলো দিয়ে যায়। আমি জানি, আমি সব নৌকা বাঁচাতে পারবো না এই আঁধার কালো থেকে। কিন্তু ঘরের শেষ বাতিটুকু ও জ্বেলে আলো দিয়ে যাবো আমি আমার নিকুন্তিলার জন্য, এই পৃথীবির সব নিকুন্তিলাদের জন্য। ইতি, মা। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়