শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ০৯ জুন, ২০২০, ১২:২২ দুপুর
আপডেট : ০৯ জুন, ২০২০, ১২:২২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া ইউএনওর আবেগঘন স্ট্যাটাস ভাইরাল

পিরোজপুর প্রতিনিধি: [২] জেলার ভান্ডারিয়ায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক বৃদ্ধের মরদেহ নিজ ঘরে ফেলে যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার লেখা আবেগ ঘন স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে।

[৩] নিজ ঘরে মরদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যান তার পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দাফন করেন। এমন ঘটনা ব্যথিত করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজমুল হাসানকে।

[৪] তিনি সোমবার (৮ জুন) নিজের ফেসবুক আইডিতে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়।

[৫] তার স্ট্যাটাসটি আমাদের সময়.কমের পাঠকদের জন্য হুবাহু তুলে ধরা হলো:

[৬] “এতো অস্বস্তি ঘুমে খুব কম সময়েই হয়েছে। রাত দু’টোয় বাসায় ফিরেছি এখন সকাল ৬টা বাজে শুধু এপাশ ওপাশ করলাম। কেন? আমার তো এরকম হয় না। ঘুমেতো কম্প্রোমাইজ নেই। আবেগের তো কোনো জায়গা নেই। এক মৃত ব্যক্তির গোসল, জানাজা, দাফন সম্পন্ন করে আসলাম আমরা।

[৭] রাত ৮টার দিকে ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু সাহেবের ফোন পেলাম। একটি ভিডিও কনফারেন্সে থাকায় একটু পরে তাকে কল ব্যাক করলে তিনি জানান, তিন চার দিন আগে রাজপাশা গ্রামে এক ভদ্রলোক এসেছেন ঢাকা থেকে তার নিজ বাড়িতে। অসুস্থ ছিলেন, আজ সন্ধ্যায় তিনি মারা গেছেন। মরদেহ গোসল করানো, দাফন করানোর জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আপন ভাইদের ফোনও বন্ধ।

[৮] চেয়ারম্যান সাহেবকে বললাম, চিন্তা করেন না আমরা সবাই মিলে দাফন করবো।

[৯] উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল ভাইকে ফোনে বললাম, ভাই সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল টিম রেডি করলো স্যাম্পল নেওয়ার জন্য। দাফনের জন্য একটি টিম রেডি। পুলিশ সদস্যরা যান আমাদের সঙ্গে। চেয়ারম্যান মহোদয় কয়েকজন গোরখোদকের ব্যবস্থা করলেন, যারা রাজপাশার মৃত ব্যক্তিটির শেষ ঘরটি তৈরি করলেন।

[১০] আমাদের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদ অসম্ভব ধার্মিক এবং একজন ক্কারী। তৌহিদকে বললাম যদি প্রয়োজন হয় তোমার একজনের জানাজা পড়াতে হবে। সেও প্রস্তুত হলো। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করা একটি কমিটির দু’জন হুজুর আমাদের সঙ্গে যান, যারা গোসল করার নিয়মটা বলে দেওয়ার জন্যেও মরদেহের কাছে যাননি। তৌহিদের ইন্সট্রাকশনে মানবিক গোরখোদক মনিরের সহায়তায় মরদেহের গোসল সম্পন্ন হয়।

[১১] আমরা সবাইকে প্রস্তুত হয়ে রাজপাশায় পৌঁছাই রাত সাড়ে ১১টায়। তখন পর্যন্ত মরদেহের গোসল হয়নি। কেউ কাছেও আসেনি। মরদেহটি ঘরের বাইরে আনার মতোও কেউ ছিলো না।হতভোগ্যের ঘরে তখন তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও ছেলে ছিলো। কিন্তু মরদেহটি বাইরে নিয়ে আনার জন্য হাতটি পর্যন্ত দিলো না কেউ। মরদেহ বাইরে আনলো ওই মেডিক্যাল টিমের তুহিন, আসাদসহ কয়েকজন, যাদের আমরা পিপিই পরিয়ে দেই। গোসলের সময় আড়াল দেয়ার জন্য একটি বিছানার চাদর থেকে শুরু করে মাটিতে নামানোর জন্য একটি গামছা পর্যন্ত ব্যবস্থা করতে অনেকবার বলতে হয়েছে আমাদের।

[১২] রাত ১টার দিকে গোসল শেষ করে এসিল্যান্ড তৌহিদের ইমমাতিতে আমি, ইউএইচএফপি
ও জহিরুল ভাই, ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টুলু সাহেবসহ মেডিক্যাল টিমের সদস্যসহ কয়েকজন আমরা জানাজা সম্পন্ন করি।

[১৩] কাদামাটি উঠান, জঙ্গল ঠেলে রাত দেড়টার দিকে মৃত সোহরাব হাওলাদাকে নিয়ে যাই তার ঘরের কাছে। সেখানে গিয়ে তার এক ভাইকে পেলেও কোনো লাভ হয়নি। কবরে নামালো সেই গোরখোদক মনিরসহ আরো দুইজন, যারা আত্মীয় না। রাত দুটোয় বাড়ি ফিরলাম।

[১৪] মনে হলো শরীর অসম্ভব ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়বো। এখন পৌনে সাতটা বাজে ঘুম আসে না। মরদেহ থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে বলে জানিয়েছে ডাব্লিউএইচও। একদম স্যাম্পল নেওয়া বা পোস্টমর্টেম এর সময় কেউ এক্সপোজ হতে পারে। মরদেহের চেয়ে একজন জীবিত কোভিড রোগী সংক্রমণ ছড়াবে বেশি, যিনি রাস্তা-ঘাট বাজারে থাকতে পারেন। মরদেহের মত এই ভয়টা যদি রাস্তায় থাকতো হয়তো সংক্রমণ আরো কিছু কম হতো। কোনো হতভাগ্যের যেন এরকম মৃত্যু না হয়।

[১৫] ধন্যবাদ ইউএইচএফপিও ডা, জহিরুল ভাই, ছোট ভাই এসিল্যান্ড তৌহিদ, ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু সাহেবকে। ওই রাতে এরকমভাবে একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব না নিলে মরদেহটি আজও পরে থাকতো। এখনো পরেই থাকতো ওই ঘরেই। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ, মেডিক্যাল টিমের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ।

[১৬] যে ব্যক্তিটি মারা গেলেন তিনি কিন্তু নিশ্চিত কোভিড আক্রান্ত না। সন্দেহেই এই অবস্থা। আমাদের হয়তো এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আরও। তবে আশাকরি এরকমটি আর না ঘটুক।সবাই ভালো থাকুন। আবার ভোর হোক। নির্ঘুম রাতের ভোর না, পরিতৃপ্ত ঘুমের স্নিগ্ধ ভোর হোক।সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়