রিতু পাখি
বড়লোকদের বাসায় কোটি কোটি টাকার টাইলস লাগানো হয়, সেগুলো নাকি দিনের একেক প্রহরে একেক রং ধারণ করে। বড়লোকদের বাড়িতে বাথরুমগুলো হয় অনেক বড়, কোনো বাথরুমে একুয়ারিয়াম থাকে, টয়লেট করার সময় ওনারা মাছের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বড়লোকদের বাড়িতে সুইমিংপুল থাকে। কারোটা বাসার সামনে, কারোটা ছাদে। ওনাদের ছেলেমেয়েরা নাকি একেকজন একেক তলায় থাকে। চা বানিয়ে নিতে নিতে ঠান্ডা হয়ে যায়। বড়লোকদের বাড়িতে অনেক ঘর থাকে, কিন্তু গেস্ট রুম থাকে না। বড়লোকদের আলাদা ড্রেসিং রুম থাকে, সেখানে দোকানের মতো কাপড় সাজানো থাকে। কোনোটা একদিন পড়া হয়, কোনোটা দুইদিন।
কোনোটা নতুন পড়ে থাকে, স্লিম হলে পড়বেন বলে জমিয়ে রাখে। এই বড়লোকদের জিজ্ঞেস করবেন তারা গার্মেন্টস ব্যবসা করে কিনা। এরা বলবে, না এদের অনেক ব্যবসা আছে, গার্মেন্টসটা একটা। কিন্তু গার্মেন্টস ব্যবসায় লাভ নাই, ব্যবসা ছেড়ে দিতে চান, পারছেন না। আসলে খোঁজ নিলে দেখবেন এদের বেশিরভাগই গার্মেন্টস ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছিল। মুনাফার যা উদ্বৃত্ত ছিল তা দিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করেছে। জাতে উঠতে হবে তো। কেউ পরিবহন, কেউ খাদ্য সামগ্রী, কেউ প্লাস্টিক, কেউ লেদার, কেউ প্লেন, কেউ রিয়েল এস্টেট, কেউ মেশিন, কেউ ওষুধ, কেউ কেমিক্যাল, কেউ বিদ্যুৎ, কেউ কেবল, কেউ ইলেকট্রনিকস, নানান ধরনের ব্যবসা করে নিজেদের পরিচয় বদলে ফেলেছেন। সব এখন গ্রুপ অব কোম্পানিজ হয়ে গেছে। কিন্তু শুরুর পুঁজিটা হয় ব্যাংক লুট, নয় গার্মেন্টস, অথবা স্মাগলিং দিয়ে শুরু। জাতে ওঠার জন্য এরা আবার কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আর প্রাইভেট মেডিকেলের সাথেও যুক্ত হয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল জাতে ওঠা। জাতে তারা ঠিকই উঠেছেন। তাই এখন গার্মেন্টস মালিকদের বকাঝকা করলে ওনারা অন্য পরিচয়ের লেবেলটা দিয়ে নিস্তার পান। কিন্তু নিস্তার পেয়ে কই যাবেন। সারা পৃথিবীতে বহু ব্যবসায়ী আছে। তারা ব্যবসা করলেও তাদের দেশে অন্তত নিজেরা অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখে ব্যবসা করেছেন। আর আমাদের নামিদামি ব্যবসায়ীরা নিজেদের পাছা বের করে এখনো দাড়িয়ে আছেন। একটা আইসিইউর জন্য তদবির করছেন। সাধারণ জনগণের জন্য বানানো হাসপাতালে প্রভাব খাটিয়ে একটা বিছানার জন্য যুদ্ধ করছেন। এদের প্রাইভেট চার্টার প্লেন শুধু ভাড়া করা না, অনেকের কিনে ফেলার ক্ষমতাও আছে। জনগণ এই ধনী শ্রেণিকে আগেও খারাপ চোখে দেখতো। এখন যে কি চোখে দেখে তা আমার আর বলার প্রয়োজন নেই। আমি শুধু ভাবছি তাদের বাড়ির টাইলসগুলো যখন একেক প্রহরে একেক রং দেয়, করোনাকালে কি রঙের ঝিলিক দিচ্ছে? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :