ডেস্ক রিপোর্ট : বয়স মাত্র ছয়। এর মধ্যেই বুঝতে শিখেছে বঞ্চনা কাকে বলে। বুঝতে হয়েছে- কৃষ্ণাঙ্গ আর শ্বেতাঙ্গের পার্থক্য। আর এটাও মনের মধ্যে গেঁথে গেছে- কৃষ্ণাঙ্গ বলেই বাবাকে হত্যা করেছে পুলিশ। আর তাই তো নিজেও বলতে শিখেছে, ‘বাবা এই বিশ্বকে বদলে দেবে, বাবাই বিশ্বে পরিবর্তন আনবে’। গত মঙ্গলবার জর্জ ফ্লয়েডের ছয় বছরের মেয়ে জিয়ানা এ কথা বলে। খবর সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হত্যার শিকার জর্জ ফ্লয়েড এখন গোটা বিশ্বে এক প্রতিবাদের নাম। বিক্ষোভের উত্তাপ যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভে সহিংসতা কমলেও বিভিন্ন রাজ্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতির
মধ্যে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন জর্জ ফ্লয়েডের সাবেক সঙ্গী রক্সি ওয়াশিংটন। এ সময় রক্সি শুধু নামে নয়, একজন ভালো বাবা ও ভালো মানুষ হিসেবে জর্জ ফ্লয়েডকে স্মরণ করার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। বাবার আদর ছাড়াই জিয়ানাকে বেড়ে উঠতে হবে বলে আক্ষেপ করেন তিনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে জিয়ানাও উপস্থিত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে আবেগঘন বক্তব্যে রক্সি বলেন, ‘আমি চাই সবাই জানুক, ওই পুলিশ কর্মকর্তারা আমার কাছ থেকে কী ছিনিয়ে নিয়েছে। দিনশেষে ওরা তো বাড়ি ফিরে যেতে পারে, পরিবারের কাছে ফেরে। কিন্তু জিয়ানা তো আর তার বাবাকে কাছে পাবে না। বাবাকে ছাড়াই ওকে বেড়ে উঠতে হবে। রক্সি আরও বলেন, ‘আমার সন্তানের জন্য আমি এখানে এসেছি। জর্জের জন্য আমি এখানে এসেছি। কারণ, আমি তার জন্য ন্যায়বিচার চাই। আমি ন্যায়বিচার চাই। কারণ, সে ভালো মানুষ ছিল। কে কি ভাবল তাতে কিছু যায় আসে না, সে ভালো মানুষ ছিল এটাই সত্যি। এটাই তার প্রমাণ।’
প্রতিবাদে সরব ট্রাম্প-কন্যাও :
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান প্রতিবাদে-বিক্ষোভে সরব হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছোট মেয়ে টিফানি ট্রাম্প। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ ও সামাজিক সাম্যের দাবিতে দেশটিতে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। শুধু টিফানি নন, তার মা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসও বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কালো স্ক্রিনের ছবি পোস্ট করেছেন। ১ জুন দিনভর বিক্ষোভকারীরা হোয়াইট হাউসের সামনে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এরপরই নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে পোস্ট দেন টিফানি।
উল্লেখ্য, ২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে হত্যার শিকার হন জর্জ ফ্লয়েড। সেদিন ফ্লয়েডের গাড়িতে জালনোট থাকার খবর পেয়ে তাকে আটক করতে গিয়েছিল পুলিশ। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। নিহত ফ্লয়েড নিরস্ত্র ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে তাকে কাতরাতে দেখা যায়। কৃষ্ণাঙ্গদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন ফ্লয়েড। এ হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আপনার মতামত লিখুন :