খান আসাদ
বিশ্বে যে খাবার উৎপাদন হয়, তা জনসংখ্যার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। উৎপাদিত ফসলের প্রায় ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়। কিন্তু পৃথিবীতে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন (প্রায় ১৩০ কোটি) দরিদ্র মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার পায় না। পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রায় বাইশ হাজার শিশু দারিদ্র্যের কারণে এবং প্রায় আড়াই হাজার মানুষ মারা যায় শুধু বিশুদ্ধ পানির অভাবে। পৃথিবীতে ১ শতাংশ লোকের মালিকানায় ৪৪ শতাংশ সম্পদ আছে। গত বছর অস্ত্র তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১৯১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের গবেষণায় কোন টাকা নেই। উপরন্তু স্বাস্থ্যসেবা হচ্ছে পণ্য। করোনার মত একটি ভাইরাস মোকাবেলার সক্ষমতা নেই। এই যে উপরের তথ্য, এর মানে কি? এর মানে কাঠামোগত বা সিস্টেমিক বৈষম্য ও সিস্টেমিক সহিংসতা, চলমান পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার। পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় একটি বিত্তবান শ্রেণির হাতে বিপুল সম্পদ এবং আরেকটি বিত্তহীন শ্রেণির চরম দারিদ্র্যে, অমানবিক দুঃষহ জীবন। এই বাস্তবতা কেন?
এই বাস্তবতার সূচনা হাজার তিনেক বছর আগের। মানুষকে যখন অস্ত্রের জোরে দাস বানানো হয়, দাস শ্রমের ব্যবহার করে সম্পদশালী দাস মালিক শ্রেণি গড়ে ওঠে। এর পর আসে জমিদারদের ভুমিদাসদের শ্রম শোষণ এবং এখন চলছে পুঁজিবাদের মজুরীদাসত্ব ও বাজারের মাধ্যমে শোষণ। পুঁজিবাদ মানে আইনিভাবে শ্রমশোষণ, অন্যদেশ যুদ্ধের মাধ্যমে সম্পদ লুণ্ঠন, ঋণের ফাঁদে ফেলে শোষণ, এবং সামরিকভাবে দুর্বল রাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে শোষণ। পুঁজিবাদ মানেই, শ্রম চুরি, যুদ্ধের মাধ্যমে লুটপাট বা ডাকাতি এবং ব্যবসার নামে চুরি। এই চোরেরা, এদের মিডিয়া (যেমন ফক্স) এবং এদের মগজধোলাই হয়ে যাওয়া অনুচরেরা এখন সাধু সেজে, আমেরিকায় কালোদের দোকান লুটের ব্যাপারটা ‘অনৈতিক’ বলছে। মহাকৌতুক যে, এরা একটি অনৈতিক চুরির ব্যবস্থাকে সমর্থন করছে কিন্তু সেই চুরির মাল যাদের শ্রমে তৈরি তাদের ওই মালের উপর দখলকে অন্যায় বলছে। এখানেই সম্ভবত পুঁজিবাদী মিডিয়া ও শিক্ষার সাফল্য। একটি চরম অমানবিক চুরি ও সহিংস ব্যাবস্থার পক্ষেও অনেক খেটে খাওয়া মানুষ আছে, যারা অনবরত ভিকটিম ব্লেমিং করে যাচ্ছে। বঞ্চিতের বিপক্ষে শোষকের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :