শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ০৫ জুন, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ০৫ জুন, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্লাজমা থেরাপির নামে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সম্পর্কে সচেতন হোন

এক সাসপেক্টেড কোভিড রোগীর জন্য প্লাজমা থেরাপি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে যা জানলাম তা রীতিমতো পিলে চমকানোর মতো। এই বিষয়ে আমি যাদের সাথে আলোচনা করেছি, তাদের মাঝে এমন একজন ছিলেন যিনি বাংলাদেশে হাতে গোণা কিছু মানুষ যদি এই থেরাপি বুঝে থাকেন, তাদের একজন। স্যারের সাথে বিস্তারিত আলোচনার চুম্বক অংশটুকু আমি সহজ ভাষায় লিখার চেষ্টা করছি। প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার খুব অনমনীয় দুটি শর্ত হলো, [১] ডোনার ভাইরাসমুক্ত, [২] ডোনারের রক্তে সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনোগ্লোবিউলিন যথেষ্ট শক্তিতে বিদ্যমান। একে একে দুটি শর্ত কিভাবে পূরণ করা হয় আলোচনা করছি।
ডোনারের রক্ত ভাইরাসমুক্ত প্রমাণ করার জন্য যা লাগে, সেটা হলো কনসিকিউটিভ দুটি পিসিআর নেগেটিভের পর ২৮ দিন সুস্থ জীবন যাপন করা। অর্থাৎ আপনি সিম্পটম ফ্রি বা পিসিআর নেগেটিভ মানেই আপনি ভাইরাস ফ্রি নন। ভাইরাল লোড বা ঘনত্ব আস্তে আস্তে কমতে থাকবে এবং আপনি সুস্থ হবার পরও ভাইরাস ফ্রি হতে ২৮ দিন সময় লাগতে পারে। তাই সুস্থ হবার ২৮ দিন পর থেকে আপনি নিরাপদ ডোনার। এর বাইরেও নিরাপদ ডোনার হবার জন্য আপনার রক্তের রুটিন স্ক্রিনিং এবং গ্রহীতার সাথে ক্রস ম্যাচিং আবশ্যক।
এবার আসি দ্বিতীয় শর্তে, সেটা হলো আপনি নিরাপদ ডোনার নিশ্চিত হবার পর আপনার রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনোগ্লোবিনের শক্তি মাত্রা দেখা হবে, সহজ ভাষায় যাকে বলে এন্ডিবডি টাইটার। স্যার আমাকে এটাও বললেন, আমি যদি ইলিজিবল রেডি ডোনার নিয়ে আসি, তবে উনি আমাকে প্লাজমা থেরাপির পুরো সেট আপ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেবেন। এরপর শুরু হলো ডোনার খোঁজা। রোগীর অভিভাবকগণ একজন পেয়ে গেলেন। আমি তাড়াতাড়ি তার ফোন নাম্বার নিয়ে কথা বললাম। কথা বলে জানতে পারলাম ডোনার ভদ্রলোক চার সপ্তাহ আগে পজেটিভ হয়েছিলেন, আর বারো দিন আগে তার কোভিড পিসিআর নেগেটিভ আসে। যেহেতু তার সিম্পটম চলে গিয়েছিলো, তিনি আর দ্বিতীয়বার নেগেটিভের জন্য টেস্ট করাননি। কথা বলেই আমি বুঝে গেলাম, উনি নিরাপদ ডোনার না। মাত্র বারো দিন ধরে তিনি সিম্পটম ফ্রি, এর উপর টেস্টও যথেষ্ট করা হয়নি।
আমি দেরি না করে সাথে সাথে সেই স্যারকে ফোন করলাম, জানতে চাইলাম কি করবো? উনি বললেন, এখনই মানা করে দিও না। উনাকে রিপিট পিসিআর করতে দাও, নেগেটিভের পর আমরা ইন্টিবডি টাইটার করে দিবো। উনাকে রেডি করা শুরু করো। তবে রোগীর অভিভাবকদের জানিয়ে দিও, ডোনার রেডি করতে সময় লাগবে। আগামী এক সপ্তাহে যেন উনার থেকে কোনভাবে রক্ত না নেয়া হয়। আমিও সেভাবেই রোগীর অভিভাবকদের বুঝালাম। স্বাভাবিকভাবেই উনারা আমার কথায় আশাহত হলেন এবং ডোনারকে সরাসরি সেই প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন যেখানে রোগী ভর্তি ছিলো। আমি আসলে মানবিক কারণে উনাদের বাঁধা দিতে পারিনি। কারণ যেহেতু আমি রোগী পরিক্ষা দেখতে পারছিলাম না, তাই আমি জানি না আসলে রোগীর কন্ডিশান কেমন। রোগীর এটেন্ডেন্টদের কথায় রোগী মুমূর্ষ। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি সায়েন্টিফিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এই ভেবে বাঁধা দেইনি, যে রোগীটা যদি কাল মারা যায়, তবে আজীবন উনাদের এটা মনে হবে আমার কারণে উনারা শেষ চেষ্টাটি করতে পারেননি। যাই হোক, সেই ডোনার সেই হাসপাতালে গেলো। পরদিন আমি খবর নিয়ে যা জানলাম, তাতে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
সেই প্রাইভেট হাসপাতালে কোন ধরনের রিপিট পিসিআর আর এন্টিবডি টাইটার ছাড়াই ট্রেডিশনালি ডোনারের ব্লাড কালেক্ট করা হয় এবং সেখান থেকে সেন্ট্রিফিউজ করে প্লাজমা আলাদা করে পরদিন রোগীকে ট্রান্সফিউজ করা হয়। এবং সেই হাসপাতাল এতোটাই শক্তিশালী পার্টি যাদের নাম মুখে নিলে আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিবে। আমি শুধু এতোটুকু বলতে চাই, যদি ২৮ দিনের আগের সুস্থ, রিপিট পিসিআর আর এন্টিবডি টাইটার ছাড়া কারও শরীরে কোভিড আক্রান্ত কারও প্লাজমা ট্রান্সফিউজ করা হয়, তার মানে তার শরীরে সরাসরি ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয়া। এই কাজ আমার জানামতে কিছু ব্যবসায়ী সেন্টারে করা হচ্ছে। বাকিটা আল্লাহই জানেন কার কপালে কি লিখা। তবে আপনাদের কাছে হাতজোর আবেদন, সায়েন্টিফিক এপ্রোচে না গিয়ে দয়া করে কোনকিছু সেন্টিমেন্টে করে ফেলবেন না। চিকিতসা একটা বিজ্ঞান এবং চিকিৎসক মানেই বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীদের ঘাড়ের উপর যখন ব্যবসায়ীরা চড়ে বসেন, তখন ফলাফল বোধহয় খুব ভালো কিছু হয় না। ড. জাহানারা আরজুর ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়