শিরোনাম
◈ তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ০৪ জুন, ২০২০, ১০:০৯ দুপুর
আপডেট : ০৪ জুন, ২০২০, ১০:০৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাবলু ভট্টাচার্য : করোনা মহামারীর মধ্যেই মুছে গেলো গ্রেট আন্দামানিক ভাষা পরিবারের প্রাচীনতম ভাষা ‘সারে’

বাবলু ভট্টাচার্য : একটি ‘ভাষা’-কে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিলো কোভিড-১৯। মূলত ছ’টি ভাষা পরিবারের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় ভারতে। ইন্দো-আরিয়ান, দ্রাবিড়, টিবেতো-বর্মান, অস্ট্রো-এশিয়াটিক, তাই-কাদাই এবং গ্রেট আন্দামানিক। করোনা মহামারীর মধ্যেই মুছে গেলো গ্রেট আন্দামানিক ভাষা পরিবারের প্রাচীনতম ভাষা ‘সারে’। চলে গেলেন ‘সারে’ ভাষার শেষ বক্তা লিচো। লিচো ছিলেন রাজা জিরাকের প্রথম সন্তান এবং তিনি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা ও ভাষার উত্তরাধিকার বহন করছিলেন। তার অবদান রয়েছে গ্রেট আন্দামানিজ ভাষার ব্যাকরণ ও অভিধান তৈরিতে। উপজাতির মধ্যে অন্যতম বুদ্ধিমান নারী তিনি, কাজ করেছেন আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জের শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে। ‘সারে’ ভাষার পাশাপাশি ‘জেরু’, ‘পুজুুক্কর’, ‘আন্দামানিজ’ ও ‘হিন্দি’ ভাষা জানতেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে সুদূর আন্দামান দীপপুঞ্জেও। ইতোমধ্যেই আন্দামানে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ জন। অঞ্চলিক অনেকেই দাবি করেছেন, তার শরীরে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা গিয়েছিলো। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ভুগছিলেন যক্ষ্মা এবং হৃদরোগে।

লিচোর মৃত্যুর পর গ্রেট আন্দামানিজ ভাষা পরিবারের মাত্র তিন জন সদস্য জীবিত আছেন, তাদের প্রত্যেকেরই বয়স ৫০ এর উপরে, তারাও বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। সবমিলিয়ে কভিড-১৯ এর বিস্তার নতুন করে এ মানুষগুলোর জীবন যেমন ঝুঁকিতে ফেলেছে তেমনি তাদের ভাষাকেও বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসী এ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো সেখানে বাইরের বাসিন্দাদের যেকোনো ধরনের প্রবেশ ও ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাছাড়া গোষ্ঠীগুলোকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে গান, নৃত্য ও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন প্রথাগত আয়োজনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু মহামারীর সময় দেখা যায়, সাধারণ জনগণের মৃত্যুর হারের তুলনায় আদিবাসী জনগণের মৃত্যুর হার চারগুণ বেশি। তাই করোনাভাইরাস বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অস্তিত্বের জন্য নতুন ঝুঁকি নিয়েই হাজির হয়েছে, আর এ আশঙ্কাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। আন্দামানি আদিবাসীদের সঙ্গে জিনগত সাদৃশ্য দেখা যায় আফ্রিকানদের। রয়েছে ভাষাগত কিছু মিলও। ধারণা করা হয় আফ্রিকা থেকেই প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরিযায়ন করেছিলেন তারা। ছড়িয়ে পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ গিনিতেও। তাই তাদের ভাষায় কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস লুকিয়ে আছে। ভাষার ব্যাকরণগত গঠনও আধুনিক ভাষার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। হয়তো আন্দামানিজ উপভাষাগুলো এশিয়ার প্রাচীনতম ভাষা। লিখিত নথি না থাকায় এর সঠিক তথ্য কেউ-ই দিতে পারেন না। ভাষাবিদরা মনে করেন, এই ভাষাগুলোর মধ্যেই তাই লুকিয়া আছে বিবর্তনের তথ্য।

আন্দামানে ১৭৫৫ সালে প্রথম উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে ডেনমার্ক। কিন্তু এই দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীরা প্রথম পৃথিবীর সামনে আসেন ১৮৫৮ সালে, ব্রিট্রিশরা যখন ফৌজদারী উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। তখন ৮০০০ অধিবাসীর বসবাস ছিল গোটা দ্বীপপুঞ্জে। কিন্তু ঔপনিবেশিকদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই আন্দামানে প্রবেশ করে নানান রোগের জীবাণু। ছড়িয়ে পড়ে সিফিলিস, যক্ষ্মা এবং অন্যান্য নানা রোগ। তবে ‘সারে’ ভাষা পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে গেলেও লিচোর কাজের মধ্যে দিয়েই তার অস্তিত্ব রয়ে গেছে খানিকটা। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের শিক্ষাদপ্তরে কাজ করতেন লিচো। ভাষাবিদ অনবিতা আব্বিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন সারে ভাষার। এই ভাষার ব্যাকরণের নিয়ম এবং অভিধান তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন লিচো। অনবিতা আব্বির সেই গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছিল ২০১৩ সালে। একমাত্র এই গ্রন্থই ইতিহাসের দলিল হয়ে ‘সারে’ ভাষার নথি বাঁচিয়ে রাখল। কিন্তু কথা বলার রইল না কেউ-ই। ২০০২ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর আজো বন্ধ হয়নি আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড। ক্রমাগত বেড়েছে পর্যটন। ফলে দূষণ জনিত কারণে শ্বাসরোগে আক্রান্ত হন অনেকেই। আর এখন করোনার সংক্রমণ। কোভিডের হানায় আমাজনের মতোই জীবনসংকট দেখা দিয়েছে এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও। করোনার আবহে আন্দামানে বন্ধ রাখা হয়েছে অনুপ্রবেশ। সংক্রমণের আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। হাজার হাজার বছরের প্রাণোচ্ছল এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব কি বর্তায় না প-িতদের উপর? ভাষার অবলুপ্তি এই প্রশ্নগুলোর সামনেই বারবার কাঠগড়ার দাঁড় করাচ্ছে ‘সভ্যতা’কে। সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান ও মিডিয়াম ডটকম। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়