কাকন রেজা : জর্জ ফ্লয়েড নামে একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশী নির্যাতনে মারা গিয়েছেন। তার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভে গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, আগুন দেয়া হয়েছে সরকারি বেসরকারি সম্পত্তিতে, ভাঙচুরতো রয়েছেই। কারফিউ উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এ খবরগুলো আমরা পাচ্ছি এবং দেখছি গণ ও সামাজিকমাধ্যমের কল্যাণে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের প্রতি পিপার স্প্রে প্রয়োগ করেছে, কখনো শক্তিপ্রয়োগে সরিয়ে দিচ্ছে। এসব নিয়ে এবং দেখিয়ে অনেকে সামাজিকমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘খালি আমাদের দেশের পুলিশদের খারাপ বলেন যারা তারা দেখেন।’ অবশ্য যারা এমনটা বলেছেন, তারাও সম্ভবত বিপরীত দিকের খবরগুলো দেখেননি। বিপরীত একটা খবরের কথা উল্লেখ করি। সেই খবরটিতে এমনটা বলা হয়েছে, যেখানেই বিক্ষুব্ধ জনগণ জমায়েত হচ্ছেন, সেখানেই হাঁটু গেড়ে বিশেষ ভঙ্গিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে দেখা যাচ্ছে।’ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি ক্ষমা চাওয়ার খবরও রয়েছে।
আমাদের একশ্রেণির স্বঘোষিত সুশীল রয়েছেন, যাদের দৃষ্টি ওয়ানওয়ে।
এইসব সুশীলরা আবার সুযোগ পেলে অন্যদের ব্যঙ্গ করতে ছাড়েন না। উপরে উল্লেখিত মন্তব্যকারীরা সেই শ্রেণির সুশীল। অথচ সাধারণ মানুষের মন্তব্যগুলো দেখলে দেখবেন, তারা যেমন নিন্দা করেছে, প্রশংসাও তাদের কম নয়। পুলিশের অনেক ব্যাপারেই তাদের নিন্দা রয়েছে। কিন্তু করোনাকালে পুলিশের ভূমিকায় তাদের প্রশংসার শেষ নেই। এই প্রশংসাই সত্যিকারের প্রশংসা। বিপরীতে যারা নিন্দার সময়েও প্রশংসা করেছেন, তাদের এখনের প্রশংসা মূলত মূল্যহীন এবং যাদের করা হচ্ছে সম্ভবত তাদের কাছেও।
আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করি তখন এক মুরুব্বি বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকতা দালালিতে পর্যবসিত হলে দু’দিক দিয়েই ক্ষতি। যার দালালি করবে সেও মনে মনে বলবে দালাল। আর বিরুদ্ধে যারা আছে তারা তো বলবেই।’ কথাটি শুনতে খারাপ শোনা গেলেও, অসত্য নয় একদমই। দালালি যা নরম ভাষায় তোষামোদি, সেটা করতে গেলে যার করা হয় সেও জানে কেন করা হচ্ছে। তাই সেখানেও মূল্য থাকে না, আর যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তারা তো বিক্ষুব্ধই থাকে। দু’কূলই নষ্ট হয়। সুতরাং যেখানে প্রশংসা করা দরকার সেখানে প্রশংসা, নিন্দার জায়গায় নিন্দা, এটাই সাংবাদিকতা।
আচ্ছা এমন নিন্দা-প্রশংসার ধারাবাহিকতায় জানতে ইচ্ছে করে, যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনকে আমাদের দেশের সেই সুশীলরা কিভাবে দেখছেন, যারা একসময় আমাদের দেশের এমন কর্মকান্ডের নিন্দা করেছেন, গণবিরোধী বলেছেন। কেউ কেউ আরো দুই পা এগিয়ে সন্ত্রাস হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন, তাদের বক্তব্য কী? মূলত দেখতে গেলে দুটি দিকেই দেখতে হয়। সমালোচনা মানে দুটি দিকেরই পর্যবেক্ষণ। না হলে, সমালোচনার আলোচনা পরিণত হয় ‘ভালোচনা’ নয় ‘মন্দালোচনা’য়। আর আমাদের দেশের মুশকিলটা এইখানেই। আমাদের বেশিরভাগই ‘ভালোচক’ নয় ‘মন্দাচক’, সমালোচক পাওয়া খুবই দুস্কর। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
আপনার মতামত লিখুন :