মো. নুরুল করিম : [২] বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। গত ৮ মাসে দুই উপজেলায় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৫৮০টি গরু। এর মধ্যে মারা গেছে ৩টি গরু।
[৩] প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ভাইরাস জনিত একটি রোগ। মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গের মাধ্যমে গরুর শরীরে ছড়ায়। এদিকে এ রোগের প্রতিষেধক ও সঠিক ওষুধ না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দুই উপজেলার গরুর মালিকরা।
[৪] জানা গেছে, গত ৮মাস আগে লামা উপজেলায় গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ উপজেলায় অন্তত ১হাজার ২০০টি গরু ও আলীকদম উপজেলায় গত এক মাসে ৩৮০টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে আলীকদম উপজেলায় মারা গেছে ৩টি গরু।
[৫] এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৩-১০৫ ডিগ্রিতে বেড়ে দাঁড়ায়। গরু খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শরীরে প্রচ- জ্বর আসে। পাশাপাশি গরুর শরীরের বসন্তের মতো গুটি গুটি চাকা দেখা দেয়। পরে সেখান থেকে পুঁজ জমে ফেটে গিয়ে মাংস খসে পড়ে। জ্বরের সঙ্গে মুখ দিয়ে এবং নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। ফলে দুধ উৎপাদনও কমে যায়। এই রোগ এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এডিস মশা ও মাছি। গরুর লালা থেকেও ছড়ায়। আক্রান্ত গাভী থেকে বাছুর দুধ পান করলে সেই বাছুরও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া আক্রান্ত গরুকে যে সিরিঞ্জ দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হয়, সেটি দিয়ে সুস্থ গরুকে ইনজেকশন দিলেও ছড়াতে পারে। খামারে কাজ করা মানুষের পোশাকের মাধ্যমেও এই ভাইরাস অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভাইরাস আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন এই রোগের অন্যতম বাহন।
[৬] আলীকদম উপজেলা সদর ইউনিয়নের গরুর মালিক ছাবের আহামদ সাংবাদিকদের জানায়, গত মাস খানেক আগে তার গাভীর গর্দানে একটি ফোস্কার মতো উঠে। পরে সেটির চামড়া উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। খাওয়া বন্ধ করে দেয় গাভিটি। স্থানীয় ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানোর পর গাভিটি সুস্থ হয়।
[৭] তিনি আরো বলেন, দু’সপ্তাহ আগে থেকে চারমাস বয়সী বাচুরের সারা শরীরে ফোস্কার মতো উঠে। বাচুরটি দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে প্রাণীসম্পদ অফিসে নিয়ে গেলে জানা যায় এ রোগের নাম এলএসডি। বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ইনজেকশান প্রয়োগ করায় বাচুরটি সুস্থ হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা সদর ইউনিয়নের আলী বাজারের উথোয়াইচিং মার্মার গরু, বিজয় ত্রিপুরা পাড়ার আন্দ্রে ত্রিপুরার গরু ও কলারঝিরির উপরে তঞ্চঙ্গা পাড়ার একটি গরু মারা গেছে বলে জানান, উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ ইবনে রাওহা। তিনি জানান, গরু গুলোর অবস্থান দূর্গম পাহাড়ি এলাকায়। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় গরুর বাচুর গুলো মারা যায়।
[৮] এদিকে লামা উপজেলার উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহসিন রেজা বলেন, ৭-৮ মাস আগে উপজেলায় লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছিল। ওই সময় সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় প্রায় ১২শ গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। পরিচর্যা আর প্রপার চিকিৎসায় সব কটি গরু সুস্থ হয়ে ওঠে। মাঝখানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। গত দু মাস ধরে পূণরায় বিভিন্ন স্থানে গরুর মাঝে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
[৯] এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রূপম চন্দ্র মহন্ত বলেন, ‘এ রোগটি শুধু আলীকদম ও লামা উপজেলায় নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগের টিকা আমাদের দেশে নেই। মশা-মাছি ও পোকার মাধ্যমে ছড়ায় লাম্পি স্কিন রোগ। তাই আক্রান্ত গরুকে মশা-মাছি থেকে দূরে রাখতে হবে। তবে প্রপার চিকিৎসা দিলে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। একই কথা বললেন লামা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. ইসহাক আলী। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :