শিরোনাম
◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাননি ড. ইউনূস: শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২০, ১১:২৮ দুপুর
আপডেট : ২৩ মে, ২০২০, ১১:২৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনা ভাইরাস – মানুষ আর মানবিকতা

শায়রুল কবির খান : একটা গল্পের মধ্যে দিয়ে লেখাটার মনযোগ দিতে চাই।
একজন স্ত্রীকে বুদ্ধি ও তার মানবিক মূল্যবোধের পরিক্ষার জন্য বলা হলো মনে-মনে তোমার পছন্দের ১০ জনের একটি নামের তালিকা তৈরি করো।
যথারীতি উক্ত ভদ্র মহিলা ১০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে সম্মতি জ্ঞ্যাপন করলেন।
পরিক্ষাকর্তা নির্দেশ প্রদান করলেন ১০ জনের নামের তালিকা থেকে ৫ জনকে বাদ দেবার জন্য।
তিনি নির্দেশ মোতাবেক ১০ জনের তালিকা থেকে ৫ জনকে বাদ দিলেন, রয়ে গেলেন ৫ জন।
এরপর বলা হলো ৫ জন থেকে ২ জন বাদ দেন। এবারও তিনি ৫ জন থেকে ২ জনকে বাদ দিলেন।
থাকলো ৩ জন অথাৎ স্বামী, ছেলে ও মেয়ে।
এখন বলা হলো এই তিনজন থেকে আরো একজনকে বাদ দিতে।
তালিকা তৈরি করেছেন মনে-মনে তাই চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না এই নির্দেশনা ছিল পরিক্ষাকর্তার।
এই ৩ জন থেকে একজনকে বাদ দেওয়া কঠিন পরিস্থিতি স্বামী,ছেলে, ও মেয়ে তাদের মধ্যে থেকে কি করে কাকে বাদ দেবেন।
শেষ পর্যন্ত চিন্তা করে মেয়েকে বাদ দিলেন।
মনে করলেন মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি চলে যাবে তাই মেয়েকে বাদ দেওয়া যায়।
এবার পরিক্ষাকর্তা ভদ্র মহিলাকে চুড়ান্ত পরিক্ষায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করালেন।
পরিক্ষক নিষ্টুর ভাবেই নির্দেশ দিলেন ২ জন থেকে ১ জনকে বাদ দিয়ে ১ জনকে বেছে নেবার জন্য।
পরিক্ষার্থী ভদ্রমহিলার শরীর স্তব্ধ হয়ে গেল, মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না, কপাল ঘামছে, চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, শরীর কেমন করছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না চোখ বন্ধ।
এই পরিক্ষা বুদ্ধি ও মানবিকতার প্রকাশ পাবে তাই ধৈর্যের সাথে বিচার বিবেচনায় ১ জনকে বাদ দিতে হবে।
হঠাৎ চোখ খুলে সিদ্ধান্ত জানালেন ঠিক আছে ১ জনকে বাদ দিলাম।
সিদ্ধান্ত জানিয়ে পাথরের মূর্তির মতো ঠায় বসে রইলেন।
পরিক্ষার্কতা কিছুক্ষণ নিরব থেকে ভদ্র মহিলাকে জিজ্ঞেসা করলেন, চুড়ান্ত তালিকা থেকে কাকে বাদ দিয়ে কাকে বেছে নিয়েছেন তার পরিচয় জানিয়ে ব্যাখা করুন কোন বিবেচনায় বাদ দিয়েছেন।

আমরা সবাই মানুষ তফাৎ মানবিক গুণাবলির।
মানুষের মধ্যে যদি মানবিক গুণাবলি না থাকে তাহলে এই দেহের কতটুকুই মূল্য থাকে?
নিঃশ্বাস বন্ধ হলেই দুনিয়ার সবকিছুই শেষ তাই না?
তারপরও কত হিসাব-নিকাশ, পাওয়া না পাওয়ার বেদনা, ভুল বুঝবুঝি, প্রতিহিংসা, একজন আর একজনকে চিরতরে শেষ করে দিতে দ্বিধাবোধ করি না। আরো কত কি?
যাক সে কথা এবার চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয় জেনে নেই।
চোখ বন্ধ রেখেই এক নিশ্বাসে বলে গেলেন৷
২ জনের ১ জন আমার স্বামী আর ১ জন ছেলে।
তার আগে ৩ জনের তালিকায় ছিল স্বামী, ছেলে ও মেয়ে।
৩ জনের মধ্যে থেকে মেয়েকে বাদ দিয়ে ছিলাম। এবার ২ জনের মধ্যে থেকে ছেলেকে বাদ দিলাম।
এই বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি চলে যাবে। ছেলে যখন বিয়ে করে সংসারী হবে তখন দ্বায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একসময় আলাদা হতেও পারে।

তখন আমার শক্তি আমার স্বামী। আমরা পরস্পর পরস্পরের বোঝা ঘাড় পেতে বহন করি।
স্বামী আমার অলংকার। আমি তার সঙ্গী প্রেরণার উৎস আমার বিবেচনায় মূল্যায়ন এর চেয়ে আর কিছু হতে পারেনা।

সম্মানিত পাঠকঃ
যে কারণে এই গল্প "নারী মহীয়সী" উপমা এসেছে তার রূপের বৈশিষ্ট্য নয়, তার মানবিক গুণাবলির মধ্যে দিয়ে।
সংসারে নারীর ত্যাগ খাতায় যোগ ফল টেনে হিসাব দেওয়া যাবে না।
একবার চিন্তা করুন এই নারী অথাৎ আমার গর্বধারীনি মা, স্ত্রী, বোন সন্তান যে পরিবারে জন্ম নিয়ে রক্তে মাংসে বেড়ে উঠেছেন সেই পরিবার ছেড়ে স্বামীর কাছে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন অতীতের সবকিছু মুছে দিয়ে।
আর এই মহীয়সী নারীকে মূল্যায়ন না করে আপনি সমাজে মহৎপ্রাণ পুরুষ হবেন কোন বিবেচনায়?
কিছুতেই সম্ভব হবে না।
প্রতিটি নারীর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা প্রায় একরকম থাকে।
তবে জীবন সংগ্রামে পথ পরিক্রমায় যে পরিবর্তন হয় তার পেছনের কারণ গুলো যৌক্তিক ভাবে সুবিবেচনার দাবি রাখে।
অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় অধিকারের নামে মানবিক গুণাবলি হারিয়ে যাচ্ছে।
তার ফলস্বরূপ এরকম পরিস্থিতি।
একটি দুটি ঘটনার উদাহরণ যথেষ্ট।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণে নারায়ণগঞ্জে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক স্ত্রী রোগী ইন্তেকাল হলে, তার স্বামী মরদেহ নিতে আসলেন না।
কয়েক দিন পর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিল সরকারি কবর স্থানে দাফনের ব্যবস্থা করেন।
রাস্তায় স্ত্রী মারা গেলেন স্বামী মরদেহ রেখেই পালিয়ে গেলেন।
মায়ের মৃতদেহ পরে আছে সন্তান খোঁজ নিচ্ছেন না।
এই যে মানুষের বিবেক বোধ হারিয়ে যাচ্ছে তার দায় কে নেবে? আর কি ভাবেই সমাজের রাষ্ট্রের কল্যাণে মানুষের বিবেক বোধ জাগ্রত হবে?
দ্বায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রনীতিকদের, গুণীজনদের সামষ্টিকগত বিবেচনায় নিয়ে।
নিজে ভালো থাকবো এই মানসিকতা থাকলে সামনের কাতারে আসা যায় না।
বর্তমান সংকটে কয়জন বিত্তবান শ্রেণির পেশাদার ব্যাক্তি সামনের কাতারে এগিয়ে এসেছেন?
এগিয়ে আসার মানবিকতার শক্তি ঈমান আর ইনসাফের মধ্যে দিয়ে।

মহামারি কারো কারো জন্য পরিক্ষাও বটে।
উসামা ইবন যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "প্লেগ শান্তির প্রতিক।
মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ তায়ালা তা দ্বারা তার বান্দাদের কতিপয় ব্যাক্তিকে পরিক্ষায় ফেলেছেন।
তাই কোনো এলাকায় এর প্রভাবের খবর পেলে তোমরা সেখানে যেয়ো না
এবং কোনো এলাকায় অবস্থান কালে সেখানে "প্লেগ লক্ষ্য করলে সেখান থেকে পালিয়ে যাবে না"। মুসলিম- ৫৬৬৬-(৯৩/..)।
আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে সংকট মোকাবেলা করেই তারপর চাই সবুজ প্রান্তরে সকলেই একত্র হতে।
মহান আল্লাহ সহায়।
আমিন।
লেখক: সহ-সভাপতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়