কাকন রেজা : গাড়িওয়ালাদের কি করোনায় ধরে না? প্রশ্নটা শুনে কিছুটা থমকে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই ঠোঁটের ডগায় কোনো উত্তর আসেনি। সাবেক এমপি, সেনাবাহিনীর জেনালের পর্যায়ের মানুষজন, সরকারের বড় চাকুরে কাউকেই তো ছাড়ছে না করোনা। এরাতো সবাই গাড়িওয়ালা ছিলেন, তবে এমন প্রশ্ন কেন? মনে হলো ওহ, গাড়িওয়ালাদের জন্য ঈদে বাড়ি যাবার নিষেধাজ্ঞাতো তুলে নেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে তারা ঈদে বাড়ি যেতে পারবে। অতএব প্রশ্নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর।
এমন একটি প্রশ্নের দুটি দিক রয়েছে। এক হলো স্বাস্থ্যগত। অন্যটা শ্রেণিগত। স্বাস্থ্যগত দিকটা হলো, ঢাকা বা নারায়নগঞ্জ থেকে যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছে তাদের কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে দু’সপ্তাহ ধরে। ওই যে, গোপালগঞ্জের সেই নারী স্বাস্থ্যকর্মীর কথাতো সবারই জানা। যাকে কোয়ারিন্টিনের নামে নির্জন মজা পুকুরপাড়ে ঝুপড়ি বানিয়ে রাখা হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে।
সে দিক ভেবেই বলা, যারা ঢাকা থেকে গাড়ি করে ঈদে বাড়ি ফিরবেন তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তারা ‘খুল্লাম খুল্লা’ ঘুরবেন, না তাদের ঘরে থাকতে হবে। গাড়িওয়ালাদের করোনায় ধরবে না, এমন ঘোষণাতো আর দেয়া যাবে না। সুতরাং বিষয়টিতে নজর দেয়া উচিত। স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনেরও উচিত খোঁজ রাখা ঢাকা থেকে আসা গাড়িওয়ালা মানুষদের ব্যাপারে। না হলে তাদের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস।
শ্রেণিগত দিকটার বিষয়ে বলতে গেলে, মূলত গাড়িওয়ালা অর্থাৎ উচ্চবিত্ত এবং গাড়িছাড়া মানে নি¤œবিত্ত এই দুই শ্রেণির মোটাদাগের ভাগটা দৃশ্যমান হলো গোটা ঘটনায়। অর্থাৎ আপনি গাড়ি অ্যাফোর্ড করতে পারলে, করোনাও অ্যাফোর্ড করতে পারবেন। মানে আপনি করোনা নিয়ে গ্রামেও যেতে পারবেন। যেহেতু উপসর্গহীন সংক্রমিত ক্রমেই বাড়ছে। সুতরাং আপনি আক্রান্ত কিনা তা আপনারও বোঝার উপায় নেই। তাই আপনি গাড়িওয়ালা হয়েও সংক্রমণ ছড়াতে পারেন এমন সম্ভাবনা অসম্ভবের নয়। তারপরেও গাড়িওয়ালা হিসাবে আপনি ছাড় পাবেন। যারা বাম-বাম করতে অস্থির হয়ে যান, শ্রেণি বিভাজনের এই বিষয়টি নিয়ে আলাপের প্রয়োজনটি তাদের ভেবে দেখা দরকার। প্রয়োজনে ঘরে বসে একটা লাইভ টকশো হয়ে যেতে পারে। বাম-ডানে’রা তাদের আলাপ করুক। সাধারণের মানুষের চিন্তা হলো, বন্ধ ছিলো সবার জন্যই বন্ধ থাকতো। অথবা খুলে দিলে তা সবার জন্যেই। মানে গণপরিবহণে চালু করে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা করা যেতো। যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে, গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধির অজুহাতে। দোকানপাট খুলে দেয়া হয়েছে সেই বিধির ভরসাতেই। আরেকটু বিধির আশ্রয়তো নেয়াই যেতো। ‘সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কী ভয়’, এমনটাও ভেবেও তো সাহস করা যেতো। খুলে দেয়া যেতো মানুষের বাড়ি ফেরার রাস্তা।
যাক গে, গাড়িওয়ালাদের করোনায় ধরে কিনা, এ নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। ধরে ভাই। সুযোগ পেলে কাউকেই ছাড়ে না এ ভাইরাস। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখন এমন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতিতে নিজেরাই নিজেদের ভরসার জায়গা তৈরি করতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে যতটা সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বাদ দিতে হবে পিছু লোকের কিছু কথা। জানি, আপনি বাসায় থাকলে, আপনার প্রতিবেশি বলবে, ‘ভয় পেয়ে বাসায় ঢুকছে।’ অথচ আপনি আক্রান্ত হলে ওই প্রতিবেশিই বলবে, ‘একে এলাকায় থাকতে দেয়া হবে না।’ অতএব এসব বেআক্কেল মানুষের কথা শোনার দরকার নেই। বেআক্কেলদের বদ কথা বাদ দিয়ে নিজের সুরক্ষার ব্যবস্থা করুন, সাবধানতা অবলম্বন করুন। মনে রাখবেন আপনি ও আপনারা সুস্থ থাকলে অন্যরাও সুস্থ থাকবে। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
আপনার মতামত লিখুন :