ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের ৬৪ জেলায় করোনার রোগী পাওয়া গেছে। তবে কোনো জেলায় মাত্র পাঁচজন রোগী আছে এমন জেলাও রয়েছে। করোনার সংক্রমণ বেশি রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোয়। ঈদে অনেকে ঢাকা ছাড়ছে। সংক্রমিত শহর বা জেলাগুলো থেকে গ্রামে যাচ্ছেন এসব মানুষ। এতে গ্রামাঞ্চলে করোনার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ বিশেষ করে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোয় বেশি। ঈদে শহরের মানুষ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। এতে গ্রামাঞ্চলে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের গঠিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কমিটির ঢাকা বিভাগের দায়িত্বরত বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, সরকার করোনার সংক্রমণ রোধে কতগুলো নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু মানুষ সেসব নির্দেশনা মানছেই না। মানুষ আসন্ন ঈদে বাড়ি যাচ্ছে। যেভাবে ফেরিতে উঠতে দেখেছি, গাদাগাদি করে পারাপার হচ্ছে তা দেখে শঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। করোনার সংক্রমণ গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়বে, এতে কোনো ভুল নেই। এটা যে কত বড় ডিজাস্টার হবে তা বোঝানো যাবে না। মানুষ কেন জানি মানছে না। ঈদের বাড়ি যাওয়ার সাথে জীবিকার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সামাজিকতা। তিনটি জিনিসকে ব্যালান্স করতে হয় স্বাস্থ্য, জীবিকা ও সামাজিকতা। এখন মানুষ কোনটাকে বেশি প্রেফার করছে।
আমাদের পরামর্শ হচ্ছে এই জাতীয় জনসমাগম বন্ধ করতে হবে। যদি এগুলো বন্ধ করা না হয় তা হলে করোনা সংক্রমণের অবস্থা দীর্ঘায়িত হবে। আমরা আশা করেছিলাম জুন মাসের শেষের দিকে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে; তা হবে না। জনসমাগম হলে সেটি দীর্ঘায়িত হয়ে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত চলে যাবে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, দেখা যাচ্ছে ঈদ উপলক্ষে অনেক মানুষ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। যারা বাড়ি যাচ্ছেন তারা করোনার সংক্রমণ ছড়াবেন। তার কারণ হলো উপসর্গ ছাড়াও অনেকে করোনা সংক্রমিত। তাদের তো চিহ্নিত করা যাবে না। যাদের কোনো উপসর্গ নেই, তারা নিজেরাও জানে না তারা করোনা পজিটিভ। এসব সংক্রমিত মানুষের সংস্পর্শে এলে সংক্রমিত হবে। গ্রামে গিয়েও পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে থাকবে। সুতরাং করোনা সংক্রমিতরা ভয়াবহ ঝুঁকি সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য। তারা গ্রামে যাবে, সেখানকার মানুষকেও ঝুঁকিতে ফেলবে।
অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে যারা ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি যাবে সে এলাকার মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে এবং হাত ধোয়া ছাড়া নাক-মুখ ও চোখে হাত দেওয়া যাবে না। কারও জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সরকারের দায়িত্ব হবে গ্রামে যাদের লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেবে তাদের দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষায় যাদের পজিটিভ পাওয়া যাবে তাদের আইসোলেশনে নেওয়া এবং তাদের সংস্পর্শে আসা মানুষগুলোকে কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮৫২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এসব নমুনা পরীক্ষায় ২৬ হাজার ৭৩৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি রোগী হচ্ছে ঢাকা মহানগরে, এর পরই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা। আর সবচেয়ে কম রোগী হচ্ছে মেহেরপুর জেলায় মাত্র পাঁচজন।
সন্দেহভাজন করোনার রোগীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ, নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট প্রদান কার্যক্রম আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। তবে আইইডিসিআরের করোনা রোগীর শনাক্তের তথ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শনাক্তের তথ্যে অমিল রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব নমুনা পরীক্ষায় মোট ২৫ হাজার ১২১ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাত ৮টায় আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনার রোগী সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৭৫ জন।
আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগের করোনা রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ১৩৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ১০ হাজার ৫০৪, ঢাকা জেলায় ৩৭৪, গাজীপুরে ৫৩৫, নারায়ণগঞ্জে এক হাজার ৫০৮, কিশোরগঞ্জ ২০৭, মাদারীপুরে ৬৯, মানিকগঞ্জে ৫৮, মুন্সীগঞ্জে ৩৮৩, নরসিংদী ১৭৪, রাজবাড়ী ২৭, ফরিদপুর ৬৯, টাঙ্গাইলে ৪১, শরীয়তপুরে ৭৩ এবং গোপালগঞ্জে ১১৫ জন শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ২ হাজার ৬৫ রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯৪০ জন, কক্সবাজারে ১৯৯, কুমিল্লায় ৩৭১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬৭, খাগড়াছড়িতে ৯, বান্দরবানে ৭, রাঙামাটিতে ২৭, লক্ষ্মীপুরে ১০১, নোয়াখালীতে ১৬৮, ফেনীতে ৯০ ও চাঁদপুরে ৮৬ জন শনাক্ত হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৬৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৪০, জামালপুরে ১৫২, নেত্রকোনা ১১২ এবং শেরপুর ৬৫ জন রোগী রয়েছে।
রংপুর বিভাগে ৫৬৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রংপুর জেলায় ২৪৮, গাইবান্ধায় ২৬, নীলফামারীতে ৫৩, লালমনিরহাটে ২৫, কুড়িগ্রামে ৫৮, দিনাজপুরে ৬৭, পঞ্চগড়ে ২০ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ২৯ জন।
খুলনা বিভাগে ৩৯৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলায় ৩৩, যশোরে ১০৯, বাগেরহাটে ১১, নড়াইলে ১৬, মাগুরায় ২৩, মেহেরপুরে ২৩, সাতক্ষীরা ৩০, ঝিনাইদহে ৪৫, কুষ্টিয়া ৩২ এবং চুয়াডাঙ্গায় ৮৯ জন রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে ৩৪০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩৪, জয়পুরহাটে ৯৭, পাবনায় ২০, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৬, বগুড়ায় ৫৬, নাটোরে ৪৪, নওগাঁয় ৪৫, সিরাজগঞ্জে ৮ জন রয়েছে।
সিলেট বিভাগে ২৪৫ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৪৮, মৌলভীবাজারে ৩৯, সুনামগঞ্জে ৪৬ জন ও হবিগঞ্জে ১১২ জন রয়েছে।
বরিশাল বিভাগে ১৬২ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ৬০, বরগুনায় ৩৭, ভোলায় ১৩, পটুয়াখালীতে ২৯, পিরোজপুরে ৭ এবং ঝালকাঠিতে ১৬ জন আক্রান্ত রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :