শিরোনাম
◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী

প্রকাশিত : ২২ মে, ২০২০, ১০:৪৫ দুপুর
আপডেট : ২২ মে, ২০২০, ১০:৪৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ঈদ সামনে রেখে করোনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মাদকের ছড়াছড়ি, আটকের চেয়ে বিক্রি বেশি !

আরিফুল ইসলাম, সরাইল : [২] ঈদকে সামনে রেখে করোনা পরিস্থিতির মাঝেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে যেখানে-সেখানে মাদক বিক্রি ও সেবন দুই-ই বেড়েছে বলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বহু ভুক্তভোগী মানুষের সঙ্গে কথা বলে তা জানা গেছে। এর মধ্যে গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা সেবনের হার সবচেয়ে বেশি। তবে যে পরিমাণে মাদক অভিযানের মাধ্যমে ধরা হয়, স্থানীয়দের তথ্যমতে তার থেকে প্রায় দশ গুণ বেশি মাদক এখানে বিক্রি হয়ে থাকে।

[৩] বৃহস্পতিবার (২১ মে) ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সরাইল উপজেলার বেড়তলা এলাকা থেকে র‌্যাব সদস্যরা ৫৮ কেজি গাঁজাসহ রাশেদ মিয়া (২৮) নামে এক যুবককে আটক করে সরাইল থানাপুলিশের কাছে সোপর্দ করার পর, এখানকার স্থানীয় সচেতন মহলের নানা লোকজনদের মাঝে হরেকরকমের আলোচনা শুরু হয়েছে।

[৪] এতোবড় মাদকের চালান আটক করায় সংশ্লিষ্ট র‌্যাব সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে কয়েকজন এই প্রতিবেদক'কে জানান, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে সরাইল উপজেলায় নানা ব্যবসায় ভাটা পরলেও এখানে মাদকের ব্যবসা জমজমাট। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে এখানে বিভিন্ন এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা গেছে। কিছুদিন আগেও পুলিশের বিরামহীন কঠোর অভিযানে যেসকল চিহ্নিত মাদক কারবারিরা গাঢাকা দিয়েছিল, তারা এখন বীরদর্পে এলাকায় মাদকের ব্যবসা চালিয়েছে। অপরদিকে আগের তুলনায় এখানকার পুলিশ মাদক উদ্ধার ও কারবারিদের রুখতে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এখানে যে পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়েছে, এরচেয়ে বেশি মাদক এলাকায় বিক্রি হচ্ছে।

[৫] এদিকে এখানে নানা প্রকার মাদক এত বিক্রির বিপরীতে এত কম চালান ধরা পড়ার পেছনে পুলিশের গফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয় মানুষেরা। তারা বলছেন, পুলিশের চোখের সামনে, থানার আশেপাশেও মাদক বিক্রির স্পট আছে। কেউ দেখেও দেখে না।

[৬] অপরদিকে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা অনেকের দাবি, তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন এবং সরাইল এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।

[৭] খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার মাঝেও ঈদকে সামনে রেখে এই অঞ্চলে মাদক পাচার থেমে নেই। সরাইল উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিদিনই নানাভাবে মাদক পাচার করা হচ্ছে। তবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝেমধ্যে মাদকের চালান আটকও হচ্ছে। বৃহস্পতিবার র‌্যাব মহাসড়কের সরাইল বেড়তলা এলাকা থেকে ৫৮ কেজি গাঁজাসহ রাশেদ মিয়া নামে যুবককে আটক করে। রাশেদ জেলার বিজয়নগর উপজেলার সেজা মোড়া এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরাইল থানার ডিউটি অফিসার এসআই খলিলুর রহমান।

[৮] এদিকে গত ১৮ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানাপুলিশের পৃথক অভিযানে ৯ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজা ও ৩৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল সহ মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় এলাকা থেকে বেবি সুলতানা (৩০) নামে এক নারী এবং সুজিত (৩৫) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ।
৯ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক বেবি সুলতানা সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার শরিয়তপুর গ্রামের দিলবর মিয়ার স্ত্রী। আর ৩৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিলসহ আটক সুজিত হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া এলাকার লাল মোহনের ছেলে।

[৯] এরআগে গত ৬ মে খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশের অভিযানে গাঁজা আটক হয়। সেই চালানে পুলিশ চার কেজি গাঁজা উদ্ধারের কথা দাবি করলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি আটককৃত গাঁজার পরিমাণ ছিল প্রায় সাত কেজি।

[১০] খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি কে এম মনিরুজ্জামান চৌধুরী জানান, মাদকসহ আটক কারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে।

[১১] অপরদিকে সরাইল পুলিশের অভিযানে গত ১৩ মে দুই কেজি গাঁজাসহ দুই জনকে আটক করে পুলিশ।সরাইলের কুট্টাপাড়া নামক স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়। আটকৃতরা হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার শিয়ালউড়ি গ্রামের মৃত কাছম আলীর ছেলে মো. আইয়ুব আলী (৩৯), এবং অপরজন ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ভবনকুড়া গ্রামের জহুর উদ্দিনের ছেলে মো. খালেদ (৩৮)।

[১২] সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন মুহাম্মদ নাজমুল আহমদ জানান, এখানে মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। জব্দকৃত মাদকসহ আটক কারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

[১৩] বৃহস্পতিবার মাদকের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনায় সরাইল থানার একজন পুলিশ অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখন নির্দিষ্ট স্পটের মধ্যে সামীবদ্ধ নেই মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা ভ্রাম্যমান হয়ে মাদক কেনাবেচা করে’। তিনি জানান, ‘১৮ থেকে ৩৫ বছরের ছেলেরা বেশি ইয়াবা ও ফেনসিডিলে আসক্ত। অনেকটা কৌতূহলবশত তারা মাদকের দিকে ধাবিত হয়েছে। তার পর্যবেক্ষণ বলছে, ‘যারা হেরোইনে বেশি আসক্ত ছিল, তারা ইয়াবার দিকে ঝুঁকেছে। কারণ হেরোইন খেলে মাদকসেবীরা ঝিমায়, আর ইয়াবা খেলে কর্মচাঞ্চল্য সাময়িক বৃদ্ধি পায়।’

[১৪] স্থানীয় একাধিক অভিভাবক এই প্রতিবেদককে জানান, ‘এত সহজে মাদক হাতে পৌঁছানোর ফলে তরুণসমাজ সহজেই এদিকে ঝুঁকে পড়ছে। এই পরিবেশে এত মাদক গ্রামে পাড়া-মহল্লায় কীভাবে ঢুকছে, সে দায় পুলিশকেই নিতে হবে।’

[১৫] মাদকের কুফল নিয়ে একজন চিকিৎসক জানান, ‘শুরুতে বেশ আগ্রহ নিয়ে কর্মচঞ্চলতা আছে ভেবে ইয়াবা সেবন করলেও পরবর্তীতে এক সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তখন মৃত্যু ছাড়া তার সামনে কোনও পথ থাকে না।

[১৬] কীভাবে এই জায়গা থেকে বের করা যায় এ প্রশ্নে এই চিকিৎসক জানান, ‘তরুণদের মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলা জরুরি। বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন সভার আয়োজন করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়