শাহীন খন্দকার: [২] যতই দিন যাচ্ছে দ্রুত বেড়ে চলছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। তবে মার্চ বা এপ্রিল মাসে ও নাগরিকদের মধ্যে যে সচেতনতা দেখা গেছে মে মাসের শেষার্ধে এসে আর সেটি দেখা যাচ্ছে না। শহরের কাঁচা বাজারগুলোতে ভীড় করে কেনা কাটা করছে মানুষ। মানা হচ্ছে না কোন ধরনের সামাজিক দূরত্ব। আর বাজার গুলোতেও নেই কোন ধরনের সচেতনতা কার্যক্রম।
[৩] সম্প্রতি রাজধানীর কাঁচাবাজার গুলো ঘুরে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাজার করছে ক্রেতারা। সেখানে এখন আর সময়ের যেমন বাধ্যকতা নেই, তেমনি পরিচ্ছন্নতার বালাইও নেই। ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে গ্লাবস বা মাস্ক পড়ার প্রবনতা যেমন কম, তেমনি নিরাপদ দূরত্ব বজায় চলার বিষয়টিতেও নেই কোন ভ্রুক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে রাজধানীর কাঁচাবাজার গুলো হয়ে উঠবে করোনাভাইরাস সংক্রমনের ক্ষেত্র। ফলে ঢাকার বিভিন্ন বাজার এলাকাগুলো নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও। যখন কোন বাজারে বা জনসমাগমস্থলে পুলিশ যাচ্ছে তখন মানুষ ভয়ে দূরত্ব বজায় রাখছেন কেউ পকেটে থাকা মাস্ক মুখে লাগাচেছন। পরে পুলিশ চলে গেলে তাদের পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
[৪] রাজধানীর কাওরান বাজার, টাউনহল ও শেখেরটেক, কৃষিমাকেটে দেখে যায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নানা পদক্ষেপের কথা বলা হলেও মানছেননা কেউ। মুরগীপট্টি, চাল, সবজি কেনা-বেচাএলাকায় দেখাযায়, সেখানে কোনো প্রকার সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায়না রেখেই ক্রেতারা অনায়াসে প্রবেশ করছেন এবং বের হচ্ছেন। বিক্রেতারা ও নিয়ম মানছেন না।
[৫] সালাম নামে এক মুরগি ব্যবসায়ী জানান, মার্কেটের পক্ষ থেকে করোনার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্ত মার্কেটে যারা আসছে তারা অনেকে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। মরিচ ব্যবসায়ী হোসেন জানান, করোনাকে কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা। এই স্থানে শতশত মানুষ শরীরের সঙ্গে আরেক শরীর স্পর্শ লেগে থাকে। দোকানদাররা দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করলে ও বাজারে আসা মানুষ তা মানছে না।
[৬] এদিকে, রাজধানীর ৫০টি স্থানে ট্রাক যোগে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। নির্দেশনা রয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্ত্বে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার। সেখানেও একই চিত্র দেখা গেছে। কোথাও সেই নির্দেশ না মানাহচ্ছেনা। সর্বত্র-ই ট্রাকের সামনে গা ঘেঁষে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছে। কাওরান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে এমন ভিড়ের দৃশ্য দেখা গেছে। কম মূল্যে পণ্য পেয়ে ক্রেতারা ওহুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
[৭] টিসিবি চিনি, ডাল, সয়াবিন তেল ও খেজুর বিক্রি করছে। পণ্য কেনার সময় নির্দিষ্ট দূরত্ব মানতে ক্রেতাদের দাঁড়ানোর জন্য বৃত্ত করে দেয়া হয়েছে। তবে কোনো ক্রেতাই তা মানছেন না। লাইনে দাঁড়ালেও একজন আরেক জনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন। সামাজিক দূরত্ব না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান বিক্রয় কর্মীরা। আনোয়ার হোসেননামে এক বিক্রে তাজানান, বার বার বলি দ‚রে থাকুন। কিন্ত কেউ মানেনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাজার করতে আসছেন তারা। চিকিৎসকরা জাানান, এভাবে খোলা কাঁচাবাজারে এসে বাজার করলে করোনার এই কঠিন সময়ে ঝুঁকি আরও বাড়বে। মানুষের সচেতেনতা খুব বেশি দরকার এখন।
[৮] এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সুদীপরঞ্জন দেব জানান, করোনা নিয়ে মানুষের এখনো অজ্ঞতা থেকে গেছে। এটা দূর করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্বের ওপর জোর দিতেহবে। অস্বাস্থ্যকর খোলা বাজারে যাওয়াটা এখন ঝুঁকিপূর্ণ।
আপনার মতামত লিখুন :