শিরোনাম
◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ২১ মে, ২০২০, ০৬:২৪ সকাল
আপডেট : ২১ মে, ২০২০, ০৬:২৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাতভর বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, কোটি মানুষ বিদ্যুৎবিহীন, ১২ জনের প্রাণহানি

রাশিদ রিয়াজ : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে সব্জি ও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে প্রায় সারারাত। ভোরের দিকে বৃষ্টির পরিমাণ কমে এলেও মাঝে মাঝেই দমকা হাওয়া বইছে। বৃহস্পতিবার (২১ মে) আকাশ মেঘলা রয়েছে।

বুধবার (২০মে) সন্ধ্যায় উপকূল ঘেষে ভারতে আঘাত হানে আম্ফান। এই ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস ছিল প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের মতো। ফলে তীব্র গতির এই ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা অঞ্চল দিয়ে। এর প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ ছিল মেঘলা। সন্ধ্যায় ঝড় আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের অন্য জেলাগুলোর মতো ঢাকাও শুরু হয় দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি। বৃষ্টি কখনও মুষলধারে আবার কখনও কম ছিল। তবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত রাত যত গভীর হয় তত বাড়তে থাকে। ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক এলাকায় গাছ, গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। গাছ পড়ে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দমকা বাতাসের ভয়ে অনেকেই রাতভর আতঙ্কে ছিলেন।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজও দেশের আকাশ মেঘে পরিপূর্ণ বৈরি থাকবে, দমকা বাতাস বইতে পারে থেমে থেমে। সারাদিন ঢাকা ও এর আওতাধীন জেলাগুলোর আকাশ সারাদেশের মতো মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। যদিও দমকা হাওয়া আর বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে । দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের উপকূলীয় অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও বিদ্যুৎ কর্মীরা ভোর থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করে। ঢাবায় ডেসা, ডেসকো কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত ফিরিয়ে আনতে গলদঘর্ম  হন। পিডিবি বলছে কোটি গ্রাহক এখন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। সারারাতের ঝড়বৃষ্টির পর এখন মেরামতের কাজ পুরোদমে চলছে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন  অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হচ্ছে।  বড় বড় গাছ উপড়ে বিদ্যুতের তারের উপর পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। কোথাও কোথাও উপড়ে পড়েছে বা ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।

পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের (আরইবি) সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অঞ্জন কান্তি দাশ বলেন, আম্ফানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। উপকূলের অধিকাংশ জেলা বিদ্যুৎবিহীন। আমরা ঝড় কমার পর ভোর থেকেই মেরামতের কাজে নেমে গেছি। বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠিসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কিছু কিছু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। আরইবির গ্রাহকদের মধ্যে ঢাকার আশপাশ ছাড়া কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, খুলনা, বরিশাল বেল্টে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে প্রায় ২০০ এর মতো। অসংখ্য বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে বড় বড় গাছ পড়ে। আমাদের দুই কোটি ৮৫ লাখ গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।’ দুপুরের মধ্যে আরও বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে উপকুলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ( ওজোপাডিকো) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন জানান, ‘এর আগে এই ধরনের ঝড় আসলে আমাদের কেউ দেখেনি। প্রায় সারারাতই ঝড় হয়েছে। ফিডারগুলো একটা পর্যায়ে এক এক করে সব বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি গ্রিডও বন্ধ হয়ে গেছিল। কোথাও ১৩২ লাইন ট্রিপ করে, কোথাও ওভার ভোল্টেজে ট্রান্সফরমার ট্রিপ করে। এতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আর আমাদের অসংখ্য খুটি ভেঙে গেছে ও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে।’

তিনি জানান, প্রায় ১২ লাখ গ্রাহকই ক্ষতিগ্রস্ত। সকাল থেকে আমাদের টিমগুলো বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ শুরু করেছে। আস্তে আস্তে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক করা হচ্ছে। বরিশাল, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছি। কিন্তু সেখানে আবার কিছু কিছু ফিডার চালু করা এখনও সম্ভব হয়নি।’ বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে তবে প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

এদিকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ ( পিজিসিবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘উপকূলীয় এলাকাগুলোতে আমাদের সমস্যা হয়েছে। ভোলা থেকে শুরু করে সুন্দরবন পর্যন্ত পুরো এলাকাজুড়েই চলেছে ঝড়ের তাণ্ডব। ফলে ক্ষতিও হয়েছে অনেক। আমাদের গ্রিডে এখন বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু বিতরণ লাইনের সমস্যার কারণে তারা বিদ্যুৎ নিতে পারছে না। আমাদের এখন একমাত্র সমস্যা কুষ্টিয়াতে। শহরসহ আশেপাশে বিদ্যুৎ নেই। আমরা ভেড়ামারা থেকে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছি। হাসপাতালগুলোতে জেনারেটর দিতে অনুরোধ করেছি।’

এর বাইরে পিডিবিরও বেশ কিছু লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারাও সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। আজ রাতের মধ্যে সরবরাহ ঠিক হবে বলে তারা আশা করছে।

এদিকে উপকূল এলাকার ফসল ও সব্জীর ক্ষেত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। তরমুজ, বাঙ্গি, মরিচসহ বিভিন্ন সব্জীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ো বাতাস ও জোয়ারের পানিতে কাঁচা ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধেরও ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর বাতাসের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদ–নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। পানির উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেশি হওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। জেলার শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

গতকাল সকাল থেকে পিরোজপুরের নদ–নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। সকালে জোয়ারের পানির চাপে মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চরের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলের খেত প্লাবিত হয়। সন্ধ্যায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। রাত নয়টার দিকে প্রবল বাতাসে জোয়ারের পানিতে মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে গ্রামের শতাধিক কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক শ হাঁস–মুরগি ভেসে গেছে।

ইন্দুরকানি উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মহসিন উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, রবি শস্যের খেত, আউশের বীজতলা ও কলাবাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাট্রিবিউন, প্রথম আলো, বিডিনিউজ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়