মহসীন কবির : [২] বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সারা রাত তাণ্ডব চালানোর পর ঘূর্ণিঝড় আম্পান এখন একেবারেই দুর্বল হয়ে গেছে। স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আম্পান সকাল পৌনে ৯টার দিকে রংপুর অঞ্চলের দিকে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাবে। সময় টিভি
[৩] আম্ফানের প্রভাব কমে যাওয়ায় মোংলা ও পায়রা, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, কক্সবাজারের মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ডিবিসি টিভি
[৪] ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এর প্রভাবে উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দেশের ছয় জেলায় এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। চ্যানেল২৪
[৫] ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, এটি ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। এ সময় প্রথমে গভীর নিম্নচাপ, পরবর্তীতে নিম্নচাপ আকারে বৃহত্তর ময়মনসিংহের উপর দিয়ে বিকেল নাগাদ মেঘালয় পৌঁছাবে। সে সময় বাতাসে গতিবেগ থাকবে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার। নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘালয় ও আসামের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।
[৬] এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেশের প্রধান প্রধান নদ -নদীগুলোতে পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আসাম, মেঘালয়ে বর্ষণ বাড়লে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানির সমতল আরও বাড়বে।
[৭] দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে গত ১৪ মে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে রূপ নিয়ে ১৮ মে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়। সুপার সাইক্লোনের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটারের বেশি হয়। আম্পানের কেন্দ্রে যা ২৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যায়। তবে ১৯ মে শক্তি হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসে এটি।
[৮] বুধবার (২০ মে) দুপুরে এটি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা ও সাগরদ্বীপে আঘাত হানে, যখন এটির গতি ছিল ১৭০ কিমি পর্যন্ত। এরপর সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা হয়ে কলকাতাতেও সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আঘাত হানে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আম্পান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মেহেরপুর হয়ে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ১৩০ কিমি পর্যন্ত উঠে যায়।
[৯] ঘূর্ণিঝড় আম্পান বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ শতাব্দীর প্রথম কোনো সুপার সাইক্লোন। আর ভারত সাগরে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন।
[১০] ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ খুলনা অঞ্চল এবং নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি, পরিবেশ, প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করায় এবং কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কারণে প্রাণহানি কম হয়েছে।
[১১] আম্পান সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানায় ভারতের রাজ্যটির বেশ কিছু জেলা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
[১২] মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, উত্তর চব্বিশ পরগণা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা (বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী জেলা) ধ্বংস হয়ে গেছে। কারো ভবিষ্যদ্বাণী মিলল না। পুরোটা বাংলার উপর দিয়ে গেলো। এলাকার পর এলাকা ধ্বংস। পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর— সব জায়গায় ধ্বংসের ছবি। রাজারহাট, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাবড়া— সব জায়গাই বিপর্যস্ত। ১৭৩৭ সালে এমন ভয়ঙ্কর ঝড় হয়েছিল। তখন অনেক মানুষের জীবনহানি হয়েছিল। এ বার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার ফলে জীবনহানি অনেকটা কম। ১০-১২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :