শারফিন শাহ্ : ডায়েরি মানে দিনলিপি। কেউ একজন দিনলিপিতে সাধারণত অসত্য তথ্য দেন না। আর লোকটা যদি হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাহলে তো কথাই নেই। বাংলা সাহিত্য তার মতো সত্যনিষ্ঠ লেখক কজন? মানিক লিখেছেন : [১] উপন্যাসের মজুরি পাওনা আছে। প্রকাশকরা সাধারণত টাকা দেয় না। মাঝেমধ্যে তাগাদা দিলে অল্প একটু। [২] বাজার সদাই, রান্না সব একা করছি। ডলি অসুস্থ। বাবাও আমাদের সাথে। মাত্র দুটো ঘর। এখানে বাবাকে কীভাবে রাখি। আমার দাদারা বড় চাকরি করে। তাদের বাবা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। সবকটা অর্থপিশাচ। গভর্নমেন্ট জব করার জন্য পড়েছে। বিদ্যার জন্য নয়। চাকরি পেয়ে বিজ্ঞানচর্চা ছেড়েছে। [৩] বাচ্চা মারা যাওয়ায় ডলি খুশি হয়েছে, বললো যাক বাবা, অনেক ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া গেলো! মা সন্তানের মৃত্যুতে খুশি। কী আশ্চর্য। এর জন্য দায়ী কারা? কোটি শিশুর ভালোভাবে বাঁচার অধিকার কেড়ে নিয়েছে কিছু মানুষ। কয়েটা সাম্রাজ্যবাদী। [৪] মুসলমানের দোকান থেকে সিগারেট কিনলাম। পথে কজন হিন্দু তেড়ে আসছে। বলছে ওই শালা মুসলমানের দালাল, কমুনিস্ট ঔপন্যাসিক যায়। কিন্তু আক্রমণ না করায় বাঁচা গেলো। কথার ওপর দিয়েই সব মিটে গেলো। [৫] শালার মানুষ। সুসময়ে তোরা কেন অমানুষ হয়ে যাস। [৬] চাকরিজীবী ছেলেকে বিয়ে করে বেকার মেয়ে সুখী হতে পারলে বেকার ছেলেকে বিয়ে করে চাকুরীজীবী মেয়ে সুখী হতে সমস্যা কোথায়? ডায়েরির প্রতিটা কথা যেন মানিকের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। আজও মানিকের মতো কোটি মানুষের হৃদয়ে যে এমন রক্তক্ষরণ হয় তা দূরদর্শী মানুষের পক্ষে বোঝা অসাধ্য নয়!
আপনার মতামত লিখুন :