যায়নুদ্দিন সানী
কোভিড-১৯ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সাথে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের হতভম্ব করে দেয়। চিকিৎসকরা ঠিক করে উঠতে পারে না কীভাবে চিকিৎসা দেবে। নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোকে কোভিড এবং নন-কোভিড হাসপাতালে বিভক্ত করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করতে বলেন। কোভিড-১৯ এর সিম্পটম থাকলে আইসোলেশনে রাখা হবে আর জানবার চেষ্টা করা হবে অসুখটি করোনাভাইরাসজনিত কিনা তা জানবার। সেজন্য যে পরীক্ষা, আরটি পিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ পলিমারেজ চেইন রিয়াকশান) সেটা করা হবে। সমস্যা দেখা দিলো এরপর থেকেই।
আইসোলেশনে যাদের রাখা হবে, তাদের ক্ষেত্রে দুটো সম্ভাবনাই থেকে যাচ্ছে। তিনি কোভিড-১৯ রোগী হতেও পারেন, আবার নাও হতে পারেন। যদি হন, তখন তিনি আইসোলেশনে থাকা অন্যান্য রোগীদের মাঝে রোগ ছড়াতে পারেন, আর যদি না হন, তাহলে আইসোলেশনে থাকা অন্য যেকোনো রোগীর কাছ থেকে রোগটায় সংক্রমিত হতে পারেন। সঠিক আইসোলেশান বলতে যা বোঝায়, সন্দেহজনক রোগীকে একাকী রাখা, খুব বড় স্কেলে সেই সেবা দেয়ার অবস্থা দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালেই নেই। ফলে স্বাস্থ্য সেক্টরে দেখা দেয় অরাজকতা। জ্বর আর কাশি নিয়ে আসা প্রতিটি রোগীকে তাই বলা হতে থাকে, ‘করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করে নিয়ে আসেন।’ দারুণ ব্যয়বহুল এই পরীক্ষার ব্যবস্থা সরকারি সব হাসপাতালে নেই। এছাড়াও পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট না থাকায় করোনা পরীক্ষায় দেখা দেয় সেশান জট। এদিকে আইইডইসিআর এই পরীক্ষা করা বন্ধ করে দেয়। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে দেখা দেয় এই পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের বিশাল ভিড়। লাইন এগিয়ে যায় মগবাজার পর্যন্ত।
ওদিকে বিভিন্ন জেলায় প্রাইভেট প্র্যাকটিশনাররাও অঘোষিতভাবে প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেন। সঙ্গে যুক্ত হয় নিজে আক্রান্ত হওয়ার ভীতি। যথেষ্ট পরিমাণ মানসম্পন্ন পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট না থাকায় চিকিৎসকরাও দ্বিধার ভেতরে পড়ে যায়, কীভাবে চিকিৎসা দেবে। জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট থাকা রোগীদের আউটডোর বেসিসে কীভাবে চিকিৎসা করা হবে, তা নিয়ে দেখা দেয় হযবরল একটা অবস্থা। অনভিপ্রেত এই অবস্থা কীভাবে সামাল দেয়া যায়, তা নিয়ে চলতে থাকে ব্রেন স্টর্মিং। ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন নির্দেশনা আসতে থাকে। বেশ কিছু প্রাইভেট হাসপাতালে সরকারি চাকরিজীবীদের পাঠানো হয় চিকিৎসা সেবা দিতে। ৩৯ তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের দ্রুততম সময়ে চাকরিতে যোগদান করানো হয়। এরপরেও পরিস্থিতি ঠিক নিয়ন্ত্রণে আসে না। প্রায়ই রিপোর্ট আসতে থাকে, অসুস্থ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। ঠিক কোথায় ভুল হচ্ছে, কী হতে পারে এর সমাধান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কী কী রাখা উচিত কিংবা উন্নত বিশ্ব এই ভাইরাস মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানা দরকার।
আপনার মতামত লিখুন :