শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২১ মে, ২০২০, ০৫:২৯ সকাল
আপডেট : ২১ মে, ২০২০, ০৫:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হয়তো কোনোদিনই তাদের পূর্ব জীবন আর ফিরে পাবে না

 

ড. সেলিম জাহান

কোনো দুর্যোগেই একটি দেশের সব জনগোষ্ঠী সমভাবে পরাস্ত হন না। তবে বেশির ভাগ দুর্যোগেই- তা সে যুদ্ধ-বিগ্রহই হোক, কিংবা ঘূর্ণিঝড়ই-প্লাবনই হোক, অথবা দুর্ভিক্ষ- মহামারীই হোক না কেন, অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন দরিদ্র ও প্রান্তিক গোষ্ঠী। এ গোষ্ঠীর মধ্যে একদিকে যেমন নানান প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন মানুষেরা আছেন, তেমনি আছেন জাতিস্বত্ত্বাভিত্তিক সংখ্যালঘুরা, একদিকে যেমন আছেন পরিবেশ শরণার্থীরা তেমনি আছেন নৃতাত্বিক ক্ষুদ্রগোষ্ঠীবৃন্দ। এবারের করোনা দুর্যোগও তার ব্যতয় নয়। সব দেশেই এ প্রবণতা বর্তমান। প্রথমেই যে কথাটা বলা দরকার, তা হচ্ছে করোনার আপাতন আর মৃত্যুর মাঝেই তো একধরনের বৈষম্য আছে। করোনায় যাদের প্রাণহানি ঘটছে তার মধ্যে ৭০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩০ শতাংশ নারী। এর আপাতন আর মৃত্যুর মধ্যে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অনুপাত বেশি। তেমনি যে সব ব্যক্তিবর্গ নানান রোগে - যেমন, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, প্রমেহ, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত অসুবিধায় - ভুগছেন, তারাও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর অন্যতম শিকার।
কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে, অবরুদ্ধ সময়ে নারীরা দু’টো ক্ষেত্রে অসম ফলাফলের শিকার হচ্ছেন। ঘরের অভ্যন্তরে গৃহকর্ম ও সেবামূলক কাজের ভার নারীদের ওপরে বেড়ে গেছে। এর সাথে সাথে নারীদের বিরুদ্ধে গৃহাভ্যন্তরীন সহিংসতাও বেড়ে গেছে। অবরুদ্ধ অবস্হায় ঘরের মধ্যে মতানৈক্য, সংঘাত, খিটিমিটি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে। দ্বিতীয়ত : এ পর্যন্ত যতোটুকু জানা গেছে, তাতে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুরা অনানুপাতিকভাবে করোনার শিকার হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার মধ্যে যদিও মাত্র ১৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ, কিন্তু করোনা সংক্রমণে তাদের অনুপাত ২৫ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে প্রতি ৩ জন করোনা আক্রান্ত মানুষের মাঝে ১ জন নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু। বলা হচ্ছে যে কৃষ্ণাঙ্গ ও কিছু কিছু দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হতে পারে। যুক্তরাজ্যে জাতীয় স্বাস্থ ব্যবস্থার ৫৮ শতাংশ চিকিৎসক ও সেবিকাই দক্ষিণ এশীয় বংশোভূত।
নৃতাত্ত্বিক সংখ্যলঘুদের অনানুপাতিকভাবে করোনার শিকার হওয়ার পেছনে নানান কারণ রয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও অসমতা। দারিদ্র্যের কারণেই এ জনগোষ্ঠী একই বাড়িতে গাদাগাদি করে বসবাস করে। যৌথ নিরাপত্তা সে ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে। ফলে সঙ্গনিরোধ সেখালে বাতুলতা মাত্র। সেই সঙ্গে এ জাতীয় মানুষ কর্মসংস্থানের যে স্তরে কাজ করে, সেখানে কাজ ও আয়ের জন্য তাদের বাইরে আসতেই হয়। ফলে সামাজিক জনদূরত্ব সেখানে কাজ করে না। নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুরা যেখানে বসবাস করে, সেখানে সামাজিক সেবার বিস্তৃতি ও মান উভয়েই বড় সীমিত। সব মিলিয়ে করোনা কালে এ সব জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা বড়ই কম।
তৃতীয়ত : আরেক জাতীয় বৈষম্যও তো করোনা ক্ষেত্রে কাজ করে। বহু উন্নত দেশেই খাদ্য কিনতে গেলে হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকাদের প্রয়োজনীয় সেবাদান অস্বীকার করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশে চিকিৎসক বা সেবিকাদের ভাড়া বাড়িতে থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। তারা এ জাতীয় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা করোনা রোগী নিয়ে কাজ করেন। আমরা করোনা আক্রান্ত হলে যারা আমাদের বাঁচিয়ে তোলেন, তাদের প্রতিই আমাদের বৈষম্যমূলক আচরণ। চতুর্থত : করোনার অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রেও তো অসাম্য রয়েছে। করোনা অবরোধে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের কাজ নেই, আয় নেই, সঞ্চয় নেই। ফলে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে, জীবনে বেঁচে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে যখন স্কুল খুলে দেয়া হচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে যে, অবরুদ্ধ সময়কালে ঘরে বসে বিত্তবান পরিবারের সন্তানেরা তাদের পড়াশোনা যতো ভালোভাবে অব্যাহত রেখেছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা তা করতে পারেনি। ব্রিটেন এর বড় প্রমাণ। সত্যিকার অর্থে, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যে সামনের দিনগুলো তাদের কাছে তমসাচ্ছন্ন। বিত্তবানদের সেসব চিন্তা নেই। তারা শুধু ভালো আছেন তাই নয়, প্রয়োজনে তারা নির্জনতায় সরে যাচ্ছেন। পঞ্চমত : করোনা-উত্তর কালেও আমাদের জীবন ও জগৎ যখন পুনর্বাসিত ও পুনর্গঠিত হবে, তখনও অগ্রাধিকার পাবে বৃহৎ শিল্প ও বিত্তবানেরা। উপেক্ষিত হবে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তখনও প্রক্রিয়া ও ফলাফলের দিক থেকে একটি বৈষম্য ও অসাম্য বিরাজ করবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হয়তো কোনোদিনই তাদের পূর্ব জীবন আর ফিরে পাবে না। করোনা বর্তমান পৃথিবীতেই অসাম্যের স্থিত দেয়ালকে আরো পোক্ত করেছে এবং সেই সঙ্গে বৈষম্যের নতুন দেয়াল সৃষ্টি করেছে। সুতরাং করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুই শেষ কথা নয়, তার সৃষ্ট বিভাজিত পৃথিবীও এক বিরাট প্রশ্ন। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়