রবিউল আলম : বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক ঘুড়ি। ঘুড়ি উড়ানো বাঙালির রক্তের সাথে নেশায় পরিণত হয়েছিল। হাকরাইন, বৈশাখ, জৈষ্ঠ্যমাসে ধান কাটা শেষ করে কৃষক ঘুড়ি নিয়ে মেতে উঠতো, রাজা বাদশা, ফকির মিসকিন, কিশোর যুবক, বুড়ো সবার কাছে ঘুড়ি আলোচনার বিষয় ছিলো। বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় ঘুড়ি মেলা, ঘুড়ি প্রতিযোগিতা রং-বেরংয়ে ঘুড়ি ছিলো চোখে পড়ার মতো। সাপ, বিচ্ছু, বাঘ, কুমির মার্কা ছিলো ঘুড়ি। ঘুড়ি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, একে অন্যের ঘুড়ি কেটে আনন্দ উপভোগ, একযোগে চিৎকার, পাড়ার ছেলেদের কাটা ঘুড়ির পেছনে, সেকি দৌড়।
খাল-বিল, পুকুর দৌড় থামানো সাধ্য কার। হাত, পা, নাক মুখ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নাই । আলোচনার বিষয় কয়টা ঘুড়ি কাটলো, কয়টা ঘুড়ি দরলো। কে কতো রিল সুতা মাঞ্জা দিয়েছে। কী সুতা কিনেছে। কোথায় যেন হারিয়ে গেলো দিনগুলো। বেশ কিছুকাল আকাশে ঘুড়ি দেখি নাই। দেখার হয়তো সময়ও ছিলোনা, ঘুড়ি দেখার মন মানসিকতাও ছিলনা, সময় কোথায়।
ছেলেদের, বাদাইমাগিরি কে দেখতে চায়, ছেলেরাও লেখাপড়া থুইয়া ঘুড়ি নিয়া বাদাইমা হইতে চায় না বলেই ঘুড়িকে ভুলে গিয়েছিলাম। এখন আকাশে-বাতাশে, বাড়ি ঘরের ছাদে, যেদিক আপনার চোখ যাবে, করোনার ঘুড়ি ভাইরাস হয়ে আকাশে উড়ছে। নতুন করে, নতুন ভাবে, ভাবতে হচ্ছে ঘুড়ি নিয়ে।ঢাকার প্রতিটি বাড়ির ছাদ এখন ঘুড়ির দখলে।
শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক, মধ্যবয়সী, বুড়া-বুড়ি থেকে সবার আগমন ঘটে ছাদে। করোনার বিনোদন এখন ঘুড়ির মাঝে। ঘুড়ি এখন আকাশের ভাইরাস। শত কোটি টাকার বাণিজ্য ছাড়িয়ে গেছে ঘুড়ি, নাটাই, সুতো। ঈদ কী আমরা ঘুড়ি নিয়েই কাটাতে হবে। সেমাই কি বাড়ির ছাদে নিয়েই খেতে হবে, কারো বাড়িতে আপনার আমন্ত্রণ নাই বলে। সেমাইতো খেতেই হবে, নামাজের পরে। করোনার সৃষ্টি নতুনভাবে ঘুড়ি মেলা, বাঙালি সংস্কৃতি ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে। লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
আপনার মতামত লিখুন :