ডেস্ক রিপোর্ট : করোনা মহামারি মানুষের মাঝে তৈরি করেছে আতঙ্ক। অনেক সময়, সহজাত মানবিক আচরণই যেন ভুলে বসছেন অনেকে। তবে, সবক্ষেত্রে চিত্রটা এমন নয়। এর মাঝেও কিছু কিছু উদ্যোগ মানুষের মনে দাগ কেটে দিচ্ছে, এই যেমন পুরান ঢাকার বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহীন ফকিরের অতি মানবিক আচরণের কারণে বেঁঁচে গেল একটি পরিবার, করোনা আক্রান্ত জাহিদুর-কামরুন্নাহার দম্পতি পেলো একটি ফুটফুটে সন্তান। এই মানবিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা এবং সীমাহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদেরই একজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে উঠেন, বাংলাদেশ পুলিশের এই অবদানকে তারা চিরদিন হৃদয়ের গভীরে ধারন করবে । চারদিকে সব খারাপ খবরের মাঝে একটি অন্যরকম ভালো সংবাদ । অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস. এম. মোস্তাক আহমেদ খানের স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে পুরো ঘটনাটি। আমাদেরসময়ডটকমের পাঠকদের জন্য নিচে স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো :
স্মৃতি হয়ে থাকবেঃ একদিকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছিলো, অন্যদিকে করোনার লক্ষণ প্রকট ছিলো পুরোন ঢাকার নারী কামরুন্নাহারের শরীরে। করোনায় বন্ধ ছিলো রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলো। কামরুন্নাহারকে কোথায় চিকিৎসা করাবেন আর কোথায় সন্তান প্রসব করাবেন এই নিয়ে মহামুশকিলে পড়ে যান স্বজনেরা।
উপায়ান্তর না পেয়ে পুলিশের সহায়তা চেয়ে কল দিলেন তার স্বজন। বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহীন ফকির মানবিক দায়িত্বে দ্রুত ওই বাসায় যান। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও তার স্বামীকে পিপিই, হ্যান্ড গ্লোভস, মাস্ক পরিয়ে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে পুলিশের গাড়ীতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এবং পরীক্ষায় করোনা সনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে নিজ বাসাতেই চিকিৎসা চলছিলো এতদিন ওই সন্তানসম্ভবা কামরুন্নাহারের ।
গত ১১ মে সকাল অনুমান সাড়ে আটটায় কামরুন্নাহারের প্রসব বেদনা শুরু হলে কোন অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে না পেরে তার স্বামী আবার থানা পুলিশের সহায়তা চান। বংশাল থানা দ্রুত সেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কামরুন্নাহারকে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন।
পুলিশ ওই নারীকে সহযোগিতা করেই দায়িত্বের ইতি টানেনি, বরং নবজাতক সন্তান ও পরিবারটির নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে থাকেন।এক পর্যায়ে ওসি শাহীন ফকির জানতে পারেন সেই নারীর স্বামী মোঃ জাহিদুর রহমান বংশাল এলাকায় একটি দোকানে কাগজের ব্যবসা করেন। উনার স্ত্রী করোনা পজিটিভ হওয়ায় ব্যবসা সমিতি থেকে তাকে দোকানে যেতে নিষেধ করা হয়। এতে বিপাকে পড়েন তিনি। ব্যবসায় বন্ধ থাকায় পড়েন আর্থিক সংকটে। এমন অবস্থায় কালক্ষেপন না করেই পুলিশ জরুরী খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির হন জাহিদুরের বাসায়।
বর্তমানে প্রসূতি কামরুন্নাহার ও নবজাতক শিশু সূস্থ্য আছে। এক সপ্তাহ পরে মা ও শিশুর করোনা ভাইরাস পরীক্ষা হবে। মা ও শিশু এবং তার পরিবারে সাথে পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন
কামরুন্নাহারের স্বজনরা এই মানবিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা এবং সীমাহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একজন কেদে উঠে বলেন বাংলাদেশ পুলিশের এই অবদানকে তারা চিরদিন হৃদয়ের গভীরে ধারন করবে।।
আপনার মতামত লিখুন :