শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৮ মে, ২০২০, ০২:৫১ রাত
আপডেট : ১৮ মে, ২০২০, ০২:৫১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] অনলাইন ক্লাসে জবির অনাগ্রহ

অপূর্ব চৌধুরী, জবি প্রতিনিধি : [২] করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দেশের অন্যান্য খাতের মত শিক্ষা খাতও চরম সংকটে পড়েছে।এই সময়েই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরু করেছে অনলাইন ক্লাসের প্রক্রিয়া। কথা উঠছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট কমিয়ে আনতে অনলাইন ক্লাসের যৌক্তিকতা নিয়েও।কেউ বলছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে।

[৩]এ অবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কয়েক মাসের সেশনজট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দীর্ঘদিনের বন্ধের ক্ষতি পোষাতে সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি কমিয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হবে।

[৩]জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ফারজানা মীম বলেন, পুরো পৃথিবী বর্তমান সময়ে এক চূড়ান্ত সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে রয়েছে। মার্চ মাস থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গত ২৪ মার্চ ইউজিসি তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইন ক্লাসের আহ্বান জানায়, যা অবিবেচনাপ্রসূত ও ছাত্রদের জন্যে হয়রানিমূলক সিদ্ধান্ত। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, বাংলাদেশের অনলাইন ক্লাস করানোর মত বাস্তবতা তৈরী হয়নি। এখনো টেকনোলজির এতটাও ডিজিটালাইজেশন হয়নি যে আমরা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবো। কারণ অনলাইন শিক্ষার কার্যক্রম চালাতে গেলে যে সকল উপাদান প্রয়োজন তার কিছুরই সরবরাহ নেই।

[৪] সেই শিক্ষার্থী আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থীরই অনলাইন ক্লাস করার ডিভাইস নেই, অনলাইন ক্লাস করার মত ইন্টারনেট এক্সেসও নেই এবং গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট কানেকশন খুবই দুর্বল। সবচেয়ে বড় কথা, এই মহামারীর সময়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে সুস্থ থাকাই যেখানে বড় চ্যালেঞ্জ সেখানে ইন্টারনেটের ব্যয়বহুল খরচ একজন শিক্ষার্থী জোগাবে কিভাবে?এই করোনা মহামারীতে আমাদের পর্যাপ্ত মানসিক স্থিরতাও নেই যা শিক্ষার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তাই অনলাইন ক্লাস গ্রহণের সিদ্ধান্ত হলে আমরা তা মেনে নিবো না।

[৫]জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, এই মুহুর্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস নেওয়া প্রহসনমূলক কাজ হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে ভালো নেটওয়ার্ক সুবিধা নেই, স্মার্ট ডিভাইসও সবার কাছে নেই। তবে অনলাইনে ক্লাস নেয়া গেলে ভালো হতো, আমাদের এই সময়টা নষ্ট হতো না। অনলাইনে ক্লাস নিলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। তারা অনলাইনে ল্যাব করবে কিভাবে? ল্যাব ছাড়া তো কিছুই বুঝবে না তারা। বাহিরের দেশ ও আমাদের ফেসিলিটিজ এক না। আমাদের সব শিক্ষকদের কাছেও এখনো স্মার্ট ফোন নেই। ডিজিটাল ক্লাসের মেথড সম্পর্কে অনেক শিক্ষকই অবহিত নন। এই মুহুর্তে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হবেন।

[৬]জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন আমরা যদি ভাবি এর মধ্যেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো ক্ষতি হবে না! তাহলে এই ধারণা ভুল। আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ও ডিভাইসের ব্যবস্থা নেই। এখন অনলাইনে ক্লাস শুরু করলে যাদের সামর্থ্য আছে তারা আসবে আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা আসতে পারবে না। এতে করে বৈষম্য তৈরি হবে।

[৭] তিনি আরও বলেন,করোনায় সারাবিশ্বের শ্রম বাজারে যে শুন্যতা তৈরি হবে আগামী দুই বছর নতুন কোনো চাকুরি হয় কিনা সেটাও সন্দেহ। তাই খুব তাড়াতাড়ি সার্টিফিকেট দিয়ে বের করে দিয়ে আমরা কিছু শিক্ষিত বেকার তৈরি করবো, আর কিছু না। অনলাইন ক্লাস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা ওনার আন্তরিকতা, এর বাস্তবতা ভিন্ন। তবে আমি শিক্ষার্থীদের বলবো, তারা যেনো এই সময়টা নষ্ট না করে। সাধারণ পাঠ্যসূচির বাহিরে গিয়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, বিশ্ব সাহিত্য নিয়ে অধ্যয়ন করার এখনই সময়।

[৮]ইউজিসির চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি অনলাইন ক্লাস করে পোষাবে না এটা আমরা সবাই বিশ্বাস করি। বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনলাইনে ক্লাস বা পড়াশোনার মতো সুযোগ-সুবিধা নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তাদের অভিজ্ঞতায় অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হয়তো একটি সেমিস্টারের সেশনজট মোকাবিলা করতে পারবে। এটা তারা নিজেদের মত ব্যবস্থা নিবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

[৯]তবে এই ব্যাপারে ভিন্ন কথা বলেন ইউজিসির সাবেক এক চেয়ারম্যান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে অনলাইন ক্লাস নেয়া আমাদের জন্য কঠিন কিছু না। অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। সেই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যদি পারে তাহলে অন্যরা নয় কেনো? সমস্যা আমাদের উপাচার্যদের মধ্যে। তাদের কাছে মেথড নেই। তারা চিন্তা করতে পারে না। তারা উদ্যোগ নেক, ইউজিসি তাদের সহায়তা করবে। কিন্তু তারা তো প্রথমেই 'না' বলে দিচ্ছে। ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের কোনো উদ্যোগই নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়