নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্তের ৭০ শতাংশ শহরের। শহরের মধ্যে দামপাড়া, পাহাড়তলী-সরাইপাড়া, হালিশহর-সাগরিকা এবং কাট্টলী এলাকায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি।
এর মধ্যে দামপাড়া এলাকায় ৪২ জনের মতো আক্রান্ত পাওয়া গেছে। এর বেশির ভাগই পুলিশ সদস্য। তবে নগর পুলিশের দাবি, তাদের মোট আক্রান্ত ৫২ জনের মধ্যে দামপাড়া ব্যারাকে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ১০–এর বেশি হবে না। ঠিকানার সুবিধার্থে নমুনা পরীক্ষার সময় দামপাড়ার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়।
নগরের চারটি এলাকার পাশাপাশি চারটি উপজেলায় করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণে এসব এলাকায় আক্রান্ত বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কিছু গুচ্ছ এলাকায় যেখানে লোকসমাগম বেশি হয়, সেখানে করোনা আক্রান্তের হার বেশি। যেমন দামপাড়া, পাহাড়তলী সরাইপাড়া, হালিশহর ও কাট্টলী উল্লেখযোগ্য। জেলার মধ্যে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া ও সীতাকুণ্ডে আক্রান্ত বেশি।
চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় নগরের দামপাড়ায়, ৩ এপ্রিল। এর কয়েক দিন পর ওই ব্যক্তির ছেলেরও করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর ১২ এপ্রিল দামপাড়ার পুলিশ ব্যারাকে একজনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ জনের করোনা পাওয়া যায় দামপাড়া পুলিশ লেইনে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে, দামপাড়া এলাকায় ৪২ জনের তথ্য দেখাচ্ছে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদর) মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মোট পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে ৫২ জন। এর মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের ১৭ জন এবং সদরঘাট থানার ১৩ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ব্যারাকে থেকে সর্বোচ্চ ১০ জন আক্রান্ত হয়।
নগরের হালিশহর ও সাগরিকায় মোট ২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া পাহাড়তলী সরাইপাড়া এলাকায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। উত্তর কাট্টলী ও সংলগ্ন আকবরশাহ এলাকায় ১১ জন এবং পাহাড়তলীতে ৬ জন এবং ডবলমুরিং এলাকায় ৭ জন রোগী পাওয়া যায়।
আক্রান্ত দক্ষিণ চট্টগ্রাম
শনাক্ত হওয়া ৬৪১ রোগীর মধ্যে নগরে রয়েছে ৪৬৩ জন। উপজেলাগুলোতে রয়েছে ১৭৮ জন। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা শীর্ষে অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত সাতকানিয়ায় ৩২ জন, পাশের লোহাগাড়ায় ২৬, পটিয়াতে ২৬ জন এবং বাঁশখালীতে ১৭ রোগী শনাক্ত হয়েছে। উত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে সীতাকুণ্ডে ২৩ জন এবং রাঙ্গুনিয়ায় ১৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
সাতকানিয়ায় প্রথম এক রোগী মারা যান এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা আত্মীয়স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশী অন্তত ১০ জন এরপর আক্রান্ত হয়। সিভিল সার্জন জানান, রোগী শনাক্ত হওয়ার পরও অনেকে লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্ব মানেননি। যার জন্য সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় রোগী বেড়েছে। পটিয়ায়ও একই কারণে রোগী বেশি পাওয়া যায়।
তরুণ–যুবকেরা বেশি আক্রান্ত
আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—২৬ শতাংশ, সংখ্যায় ১৪৮ জন। এরপর রয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৪ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রয়েছে ১৯ শতাংশ। ঘর থেকে বের হওয়ার প্রবণতা যাঁদের কম, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কম। অনূর্ধ্ব–২০ পর্যন্ত ৯ শতাংশ এবং ৫০–ঊর্ধ্বদের ১০ শতাংশ।
মোট আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৫২ জন। একইভাবে ষাটোর্ধ্ব আক্রান্তের হার মাত্র ১০ শতাংশ। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, তরুণ শ্রেণি সাহস দেখিয়ে লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব না মেনে বের হয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এ অবস্থায় লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি যত বেশি মানা হবে, ততটাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে। মহিলারাও ঘরে থাকে বলে আক্রান্ত কম।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশের সংখ্যা মোট ৫২ জন। তাদের পরিবার এবং অন্য কর্মীসহ (সিভিল স্টাফ) এই সংখ্যা ৬০ জনের কাছাকাছি। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) বিশেষ শাখার উপকমিশনার মো. মনজুর মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ বেশি আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ বাইরে ডিউটি করেন তাঁরা। তবে সব সদস্যদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। সূত্র : প্রথম আলো
আপনার মতামত লিখুন :