দেশ রূপান্তর : করোনা দুর্যোগে এতদিন বন্ধ ছিল সব ধরনের নাটকের শ্যুটিং। কিন্তু গত ১৫ মে টিভি নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো শ্যুটিং করার ক্ষেত্রে শিথিলতা আনার ঘোষণা দিয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে তারা জানায়, কেউ যদি শ্যুটিং করতে চান তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে শ্যুটিং করতে পারবেন।
শুক্রবার রাতে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয়শিল্পী সংঘসহ সংশ্লিষ্ট আরও সংগঠনের নেতাদের যৌথ সিদ্ধান্তে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এ সময় ৬টি শর্তও জুড়ে দেয় সংগঠনগুলো। শর্তগুলো হচ্ছে
১. আন্তঃসংগঠনের পক্ষ থেকে করোনাকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুসরণ করে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শ্যুটিং বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধির তথ্যাবলি স্ব স্ব সংগঠনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সেই নিয়মে শ্যুটিং করতে হবে।
২. লকডাউনের সময় সরকারি সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমতি সংগ্রহ করে শ্যুটিং করতে হবে। শিল্পী, কলাকুশলীরা শ্যুটিংসংশ্লিষ্ট যেকোনো ধরনের কাজ নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করবেন। এর সঙ্গে আন্তঃসংগঠন বা স্ব স্ব সংগঠন কোনোভাবেই সম্পৃক্ত থাকবে না।
৩. শ্যুটিং করতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে, অথবা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আন্তঃসংগঠন বা স্ব স্ব সংগঠন কোনো দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। সম্পূর্ণ দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, চিত্রগ্রাহক, রূপসজ্জাশিল্পীসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সবার।
৪. বর্তমান করোনা পরিস্থিতি এবং আন্তঃসংগঠনের সিদ্ধান্ত ভালোভাবে অবগত হয়ে যারা শ্যুটিং করতে আগ্রহী সেই শিল্পী, কলাকুশলী, প্রযোজক স্ব স্ব সংগঠনের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর এই মর্মে ক্ষুদে-বার্তা অথবা ই-মেইল পাঠাবেন। যেখানে লিখতে হবে, ‘আমি দুর্যোগকালীন সময়ে আন্তঃসংগঠনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হয়ে নিজ দায়িত্বে স্বেচ্ছায় শ্যুটিংয়ে অংশগ্রহণ করছি। আমি সংকটে নিপতিত হলে এর দায়ভার সম্পূর্ণভাবে আমার।’
৫. সরকার পরিস্থিতি বিবেচনায় যে ঘোষণা দেবে সবাইকে সেটা মেনে নিয়ে কাজ করতে হবে। অথবা কাজ বন্ধ রাখার পরিস্থিতি উদ্ভব হলে তা বন্ধ করতে হবে।
৬. আন্তঃসংগঠন এই শিথিল সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় বাতিল করতে পারে।
ঘোষণা প্রসঙ্গে ডিরেক্টর গিল্ডের সভাপতি অভিনেতা-নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু জানান, ‘করোনা পরিস্থিতি বর্তমান সময়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে আন্তঃসংগঠনসমূহ এই সময়ে শ্যুটিং সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও সেটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, সরকার সাময়িকভাবে লকডাউন শিথিল করেছে। ফলে কিছুসংখ্যক শিল্পী-কলাকুশলী-প্রযোজক নাটক নির্মাণ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট সংগঠনে অনুরোধ করেন। তারই প্রেক্ষিতে ১৭ মে থেকে সংশ্লিষ্ট শ্যুটিং ইউনিট সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে সরকার এবং আন্তঃসংগঠনের নিয়মকানুন মেনে শ্যুটিং শুরু করার ব্যাপারে সাময়িক শিথিলতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এদিকে শ্যুটিং করার ক্ষেত্রে শিথিলতা আনলেও অনেক পরিচালকই বলছেন তারা শ্যুটিং করবেন না। এমন সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে নির্মাতা অমিতাভ রেজা বলেন, ‘শোবিজ অঙ্গনের অর্থনীতিকে সচল রাখার তাগিদেই হয়তো সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সতর্ক থেকে কাজ করতে হবে। যদিও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কতটা কাজ করা সম্ভব সেটা বলতে পারছি না। তবে আমি নিজে প্রস্তুতি না নিয়ে, প্রটোকল না নিয়ে শ্যুটিংয়ে নামব না। আর সংগঠনগুলো সবার ভালোর দিকটা বিবেচনা করেই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তের বিষয়ে তেমন কিছু বলতে চাই না।’
পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘শ্যুটিং বন্ধ ছিল, এতে আমরা অনেক বিপদে পড়েছি এটা সত্য। এখন শ্যুটিং ওপেন করে দিচ্ছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে জনসমাগম করে শ্যুটিংয়ে যাব না। যদি পারি ভার্চুয়ালি শ্যুটিং করব, না হলে নয়। অন্যের ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। তবে অনেকেরই হয়তো কাজ না করে উপায় থাকবে না। রুটি রুজির ব্যাপার যেহেতু সেই কথা ভেবেই হয়তো সংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমি এই অবস্থায় শ্যুটিং করব না।’
নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি শ্যুটিং করতে চাই না। আর যে শর্তগুলো দিয়েছে সে শর্তগুলো মেনেও শ্যুটিং করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমি অপেক্ষা করব। ঈদের পরে যদি অবস্থা স্বাভাবিক হয় তখন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই শ্যুটিংয়ে নামব।’
আপনার মতামত লিখুন :