শিরোনাম
◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২০, ০৯:৩২ সকাল
আপডেট : ১৬ মে, ২০২০, ০৯:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল বিপণনে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে উদ্যোগ নেবে সরকার : কৃষিমন্ত্রী

আনিস তপন : [২] শনিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনলাইনে (জুম প্ল্যাটফর্মে) মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।

[৩] কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের শাকসবজি ও মৌসুমি ফলসহ কৃষিপণ্যের পরিবহন এবং বাজারজাতকরণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারছে না। বড় শহরের বাজারে ক্রেতার আগমন প্রায় না থাকায় ও জনগণের আয় হ্রাস পাওয়ার কারণে বাজারে কৃষিপণ্যের চাহিদা হ্রাস ও পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে পাইকার ও আড়তদারা কৃষিপণ্য ক্রয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে অধিকাংশ উৎপাদিত ফল ও সবজি। করোনা পরিস্থিতিতে কৃষিপণ্যের বিপণন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

[৪] কৃষি সচিব মো: নাসিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনলাইন মতবিনিময় সভায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্‌রিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনা‌ইদ আহ্‌মেদ পলক, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আফম রুহুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমান, চাঁপাই নবাবগঞ্জের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ,এবং জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন যোগ দেন।

[৫] ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনার কারণে তরমুজ চাষিরা উৎপাদিত তরমুজের অধিকাংশই বিক্রি করতে পারে নি। যা বিক্রি করেছে তার ভাল দামও পায় নি। ইতোমধ্যে আম, লিচু, আনারস, কাঁঠালসহ মৌসুমি ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এসব মৌসুমি ফল সঠিকভাবে বাজারজাত না করা গেলে চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে, দেশের অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। অথচ এই সময়ে করোনা মোকাবিলায় দৈহিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মৌসুমি পুষ্টিকর ফল গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

[৬] সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রাকের জ্বালানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে যাতে ট্রাকের ভাড়া কম হয়। পুলিশ ব্যারাক, সেনাবাহিনীর ব্যারাক, হাসপাতাল, জেলখানাসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে কৃষকের কাছ থেকে আম কিনে সরবরাহ করা গেলে আমের বাজারজাতকরণে কোন সমস্যা হবে না বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এই সংকটের সময়ে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।

[৭] মতবিনিময় সভাকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পরিচয় পত্র ইস্যু এবং ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়াতে হবে। এই মধু মাসে বিদেশি ফল যেমন আপেল, আঙ্গুর প্রভৃতি আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

[৮] সকল ধরনের কার্গো লঞ্চ চালু আছে জানিয়ে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী বলেন, শুধু আম-লিচু নয়, সব মৌসুমি ফলের বাজারজাতকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে হবে, তা নাহলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

[৯] পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্‌রিয়ার আলম বলেন, গত কয়েক বছরে আমের ভাল দাম না পাওয়ায় রাজশাহীতে আম চাষ কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পরিচয় পত্র ইস্যু, তাদের যাতায়াতে হয়রানির কমানো, ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো, এবং বিশেষ করে আমে ফরমালিন বা ক্ষতিকর কিছু নেই মর্মে জনগণকে সচেতন ও আশ্বস্ত করতে হবে বলে তিনি জানান। ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে সকল গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর পরামর্শও প্রদান করেন তিনি।

[১০] আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর ‘এক শপ’ অ্যাপস চালু করা হবে যার মাধ্যমে সারা দেশের চাষিরা পণ্য বেচাকেনা করতে পারবে। এর মাধ্যমে চাষিদের পণ্য এনে মেগাশপের পাশাপাশি ডোর টু ডোর গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে।

[১১] ড. আতিউর রহমান বলেন, স্থানীয় মার্কেটে আমের চাহিদা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষিখাতে অতিরিক্ত বাজেটের প্রয়োজন হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

[১২] বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, এই সংকটের সময় তারা পাশে থেকে কাজ করবে। আম-লিচু পরিবহণের কোন সংকট হবে না বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

কৃষিমন্ত্রী জানান, আজকের সভায় পাওয়া সুপারিশ অনুযায়ী:

১. হাওরে ধান কাটা শ্রমিকদের যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠানো হয়েছে, তেমনি অন্যান্য জেলা হতে ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, প্রয়োজনে তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রত্যয়নপত্র প্রদান ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা নেয়া,

২. মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, পরিবহণের সময় যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মাধ্যমে কোনরূপ হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা,

৩. বিআরটিসির ট্রাক ব্যবহারে উদ্যোগ

৪. স্থানীয়ভাবে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো,

৫. পার্সেল ট্রেনে মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণের আওতা বাড়ানো, হিমায়িত ওয়াগন ব্যহার করা যায় কিনা

৬. ফিরতি ট্রাকের বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল হ্রাস

৭. ত্রাণ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল অন্তর্ভূক্ত করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অনুরোধ জানানো,

৮. অনলাইনে এবং ভ্যানযোগে ছোট ছোট পরিসরে কেনাবেচার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ,

৯. প্রাণ,একমি, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যারা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে জুস, ম্যাঙ্গোবার,আচার, চাটনি প্রভৃতি
তৈরি করে,তাদেরকে এবছর বেশি বেশি আম-লিচু কেনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা এ বছর বেশি করে আম কিনবেন বলে জানিয়েছেন।

১০. মৌসুমি ফলে যেন কেমিক্যাল ব্যবহার করা না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসন,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করাসহ ‌ সুপারিশগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বাস্তবায়নরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

[১৩] সভায় জানানো হয়, এ বছর ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে এবং প্রত্যাশিত উৎপাদন ২২ লক্ষ ৩২ হাজার মে.টন। রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নাটোর, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে অধিকাংশ আমের ফলন হয়। লিচুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে এবং প্রত্যাশিত উৎপাদন ২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। অধিকাংশ লিচুর ফলন হয় রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলায়। কাঁঠালের আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন ১৮ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়। অন্যদিকে, আনারসের আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন ৪ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। আনারসের সিংহভাগ উৎপাদন হয় টাঙ্গাইলে।

[১৫] এছাড়া, এ সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধান, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, দেশের শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানিকারক সমিতি, সুপারশপ মালিক সমিতি, আম-লিচু চাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদার এবং সংশ্লিষ্ট এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ সংযুক্ত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়