শিরোনাম
◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২০, ০৬:৫৪ সকাল
আপডেট : ১৬ মে, ২০২০, ০৬:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হে আমার স্বদেশ, স্বকাল, ভাবীকাল..

দীপক চৌধুরী : আমরা আমাদের দায়িত্বটি সহজেই ভুলে যাই। মনগড়া কথা বলি। নাজেহাল করি। ইতিহাস ভুলে থাকি। আমরা কেন ভুলে যাই, বিজ্ঞানীরা আমাদের তারকা। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, কুস্তি, ফিল্মস্টার, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা নিয়ে নানা আলোচনা করি, টেবিল চাপড়াই। ড্রইংরুম মাথায় তুলি। কিন্তু বর্তমানের এই দুঃসময়ে? কখনো কী আমরা একজন বিজ্ঞানী নিয়ে বিতর্কের পর্যায়ে কফির কাপ ভেঙেছি। কাউকে আঘাত দিতে নয়, বাস্তবতার নিরিখে সত্য উচ্চারণ করতে শিখিনি। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ড. সমীর সাহা বা তার মেয়ে অনুজীব বিজ্ঞানী ড. সেজুতি সাহার ‘জেনোম সিকোয়েন্স’ আলোচনা বা ড. বিজন শীলের করোনাভাইরাস বিষয়ক বিশ্লেষণ এই সময়ে কিছুটা হলেও আশাজাগানিয়া খবর দেয় আমাদের। বিশেষ করে এখনকার গণমাধ্যমগুলোর প্রশংসনীয় ভূমিকাও আমরা লক্ষ্য করছি। ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধারা জীবন দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ডাক্তার, নার্স, সংবাদকর্মী, সেনাসদস্য, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য, আনসার বাহিনীর সদস্য ঝুঁকি নিয়েও কাজ করছেন। সম্ভবত এটাকেই দায়িত্ব বলে থাকে। বিচারকের কাজ বিচারক করবেন, পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, বিজ্ঞানীর কাজ বিজ্ঞানী করবে। কিন্তু বিজ্ঞানীর কাজ যদি রাজনীবিদ করেন তাইলেই বিপত্তি ঘটে থাকে। দায়িত্ব ঠিকমতো পালিত হয় না। দায়িত্বহীন আচরণ করে কী করোনাযুদ্ধে জয়ী হতে পারবো? গোটা বিশ্বের আতঙ্ক করোনাভাইরাস। বিশে^ প্রাণ হারিয়েছেন তিন লাখ ছুঁই ছুঁই মানুষ। এর লক্ষণ শরীরে দেখা দিলে নিজেরাই এটি পরীক্ষা করার তাগিদ অনুভব করি। এই সংক্রমণ ব্যধির ভয়াবহতা আমাদের এই তাগিদ শিখিয়েছে। যেসব বিখ্যাত ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয়ে জীবন দিচ্ছেন তাও উদ্বেগের। এরমধ্যে কিছু কিছু প্রশ্ন আমাদের ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করে। বিখ্যাত ও বরেণ্যব্যক্তত্ব জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর পর পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ এসেছে। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠেছে তিনি তো বেশকিছুদিন ধরেই অসুস্থ। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তির আগে উনি একটি বেসরকারী হাসপাতালে বেশকিছুদিন ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, তখন কেন ভয়ঙ্কর সংক্রমণ করোনার পরীক্ষা করা হয়নি কেন? কান ধরে টান দিলে যেমন মাথা আসে তেমিন বেশকিছু প্রশ্ন এসে যায় তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

কিছুদিন আগে চিকিৎসক সুস্মিতা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও তার বাবা গৌতম আইচ সরকারকে ভর্তি করাতে পারেননি। তিনি কিন্তু করোনায় যে আক্রান্ত হয়েছিলেন তা নয়। পুরানো জটিলব্যধিতে কিছুদিন থেকেই ভুগছিলেন। সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়ে এবং মেয়ে ডা. সুস্মিতার বাবা হয়েও এতোটুকু সুবিধা পাননি। গণমাধ্যমে দেখলাম, সুস্মিতা আক্ষেপ করে বলেছেন, আমি ডাক্তার হয়েও ডাক্তার পরিচয় দিয়েও বাবার অন্তিমকালের সুচিকিৎসা করাবার সুযোগ পেলাম না। এরচেয়ে আর বড়দুঃখ কী থাকতে পারে? মৃদুমধুর হাসিময় মুখ দেখে আনন্দে, আবেগে বিগলিত হয়ে একদিন যে পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন, সেইপিতা মেয়েকে ডাক্তার বানিয়েছিলেন ঠিকই, মেয়েকে নিয়ে পিতার বুকভরা যে স্বপ্নটি ছিল অন্তিমযাত্রার পূর্বমুহূর্তে কী সেটি দেখে যেতে পেরেছেন তিনি? এ ব্যর্থতা কী গৌতম আইচ সরকারের? না, এটি আমাদের কষ্ট। এটি আমাদের অব্যবস্থার পরিণতি। দায়িত্বহীনতা? এর উল্টোপিঠের চিত্র কী রকম ভয়াবহ তাও সামাজিক যোগাযোগের কল্যাণে জানতে সক্ষম হয়েছি আমরা। দায়িত্ব বলতে যে একটি জিনিস থাকতেই হয় তাও আমাদের সমাজের অনেকেই ভুলে যান। কয়েকদিন আগে দেশের দুতিনটি নামকরা গণমাধ্যমে প্রচারিত হলো বিভ্রান্তিকর সংবাদ। এসব সংবাদে সংখ্যালঘু একটি পরিবারের সামাজিক সম্মান লুট করে নেওয়া হয়েছে। নড়াইলের কালিয়ার ঘটনা। করোনা উপসর্গ নিয়ে সেখানকার স্থানীয় বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী মারা যান।

তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের নাম দীপ রায় চৌধুরী। এ পরিবারে ডা. সেতু রায় নামেও একজন চিকিৎসক রয়েছেন। করোনা উপসর্গ থাকায় যেরকম সতর্কতা মানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তাও যথাযথ পালিত হয়েছে। কিন্তু মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে ঘিরে ঢাকার একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘স্বজনেরা এগিয়ে না আশায় মৃতব্যক্তির সৎকার করলেন ইউএনও।’ সংবাদের মর্মার্থ এ রকম : করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় লাশ সৎকারে নাকি স্বজনেরা কেউ এগিয়ে আসেননি। আরেকটি পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘করোনা সন্দেহে মৃত বাবার মুখাগ্নি করতে বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া ছেলের অস্বীকৃতি।’ চটকদার শিরোনামে প্রলুব্ধ হয়ে অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেছেন, মন্দ মন্তব্য জুড়ে দিয়েছেন। প্রয়াতের ভাতিজা প্রবীর রায়ের মাধ্যমে জানা গেছে, সংবাদটি এতোই বিকৃতও মিথ্যা তথ্যে ভরপুর যে, ফেসবুকের সুবাদে সামাজিকভাবে পরিবারটিকে ভীষণভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করা হয়। খবর নিয়ে আরো জানা গেছে, কালিয়ার ইউএনও মো. নাজমুল হুদা বলেছেন, ‘মুখাগ্নি করেছেন ছেলে দীপ রায়।’ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেতো প্রয়াতের ছেলেকে কেউ কেউ ‘কুলাঙ্গার’ বলে গালি দিয়েছেন। আসলেই তার কী অপরাধ? এই গালি কী তার প্রাপ্য ছিল? একদিকে পিতা হারানোর বেদনা ও যন্ত্রণা অন্যদিকে সামাজিক আক্রমণ! ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা ছাড়া কী? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এ দায় কার? সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব কী অসহায় মানুষকে নিয়ে তামাশা করা?

করোনা সম্ভবত, আমাদের জীবনাচার, সংযমতা ও মানবিকতা নতুন করে উপলব্ধি করতে শিখাচ্ছে। পারস্পরিক বিশ্বাস, ভালবাসা ও দায়িত্ববোধ নানানভাবে। যেন, আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কাচ দেখার পরও সাবধান হচ্ছি না। হে আমার স্বদেশ, স্বকাল, ভাবীকাল..।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এটাই তো দায়িত্ববোধ, মানবতা। শেখ হাসিনা মানবতার নেত্রী। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের দুর্ভোগ, অর্থকষ্ট উল্লেখ করে বলেছেন, ‘প্রতিটা জায়গায় মানুষের কষ্টটা দূর করাটাই লক্ষ্য। সেটাই চাই। এত বেশি মানুষ, হয়তো অনেক বেশি দিতে পারব না। কিন্তু, কিঞ্চিৎ পরিমাণ দিলেও যেন দিতে পারি, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।’ ৫০ লাখ পরিবারের প্রত্যেককে আড়াই হাজার করে টাকা নগদ অর্থ পাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের একটা দায়িত্ব আছে, আমি ইতিমধ্যে একটা তালিকা করতে বলে দিয়েছি, সকল মসজিদে ঈদ-রমজান উপলক্ষে আমি কিছু আর্থিক সহায়তা দেব, সেই তালিকাটাও আমরা করে দিচ্ছি।’ দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সাত হাজার কওমি মাদ্রাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে বলেন সেই পদক্ষেপও আমি নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘আমাদের অনেক মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে এতিমখানা আছে, তারা খুব একটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৮৬৫টি কওমি মাদ্রাসায়, যেখানে এতিমখানা আছে, সেখানে আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।’ এ খাতে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন মাদ্রাসায় কতজন এতিম আছে, আমরা হিসাব নিয়েছি, সে হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক মাদ্রাসায় আমরা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যারা এতিম-অসহায় যারাই আছে, কোনো শ্রেণিই যেন অবহেলিত না থাকে, সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি’, যোগ করেন তিনি।

আমরা জানি, বঙ্গবন্ধুকন্যার চিন্তা চেতনা। তার মহানুভবতা। অথচ, এদেশে দরিদ্র এতিম শিশুদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে রাজনীতিতে। কোমলমতি কিশোরেরা না চাইলেও সুকৌশলে আওয়ামী লীগবিরোধী বানানো হয়। কওমি থেকে একটি ভোটও নৌকায় পড়েনি আর পড়বে বলেও মনে হয় না। মাদ্রাসাকে ব্যবহার করা হয়। ধর্মান্ধতার অস্ত্র শান দেয়া হয়। নির্বাচন এলে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে, নৌকা ঠেকাতে ওরা সবাই এক হয়। গণতন্ত্রের যুদ্ধে একদিকে আওয়ামী লীগ অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন, মুসলিম লীগ, জাগপাসহ সমমনারা। বিএনপি-জামায়াতের পাল্লায় এসব ভোট পড়বে। এটা পরিষ্কার। নৌকার জন্য যারা কাজ করেন তারা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেন। তারা জানেন, এই যুদ্ধ আদর্শের যুদ্ধ। করোনাকালে প্রাণান্তকর চেষ্টায় প্রমাণিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সকল মানুষের। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন এই দুটি শর্তই তার রাজনীতির প্রথম ও প্রধান অঙ্গীকার। শেখ হাসিনা এতিমদের দেন। আরেক নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খান। এটাই দায়িত্ব আর দায়িত্বের তফাৎ!

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়