শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১৬ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান ড. আনিসুজ্জামান

কুলদা রায় : অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের অধিকাংশ শিষ্য বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলবাদী। কোনো না কোনোভাবে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে মেনে নিতে পারে না। স্বাধীনতা যুদ্ধকে বলে বেহাত বিপ্লব। যেন বিপ্লবটা তারা করেই ফেলেছিলো, মাঝখান থেকে শেখ মুজিব, মনি সিংহরা এসে সেই বিপ্লবটাকে ছিনতাই করে নিয়ে গেছেন। বেচারা বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলবাদীরা জানেও না বিপ্লব জিনিসটা কী? কার জন্য বিপ্লব? আর কীসের জন্যই বা বিপ্লব? একটু সন্ধান করলেই দেখা যায়, তাদের বাপদাদারা মুসলিম লীগের পাঁড় নেতা ছিলেন। বাঙালির উদার অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল চেতনাকে তারা গলাটিপে মারতে চেয়েছেন। তারাই আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের দালালি করেছেন। তাদের ছেলেপিলেরা লেখাপড়া শিখে মুসলিম লীগে যেতে পারেনি সত্যি।

 

কিন্তু মুসলিম লীগকে ছাড়তেও পারেনি। তারা মুসলিম লীগ, পাকিস্তানপন্থা আর পাকিস্তানের মিত্র চীনাপন্থার একটা জগাখিচুড়ি বানিয়ে মওলানা ভাসানীর আড়াল নিয়ে রহস্যময় বিপ্লব করতে চেয়েছেন। কোথাও কোথাও তারা চরমপন্থী হিসেবে বন্দুকবাজি করেছেন। ডাকাতি করেছেন। শত্রু হিসেবে বিবেচনা করেছেন বাঙালির উদার ঘরানার অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তিকে। ফলে তারা মিত্র হয়েছেন আইয়ুব খানের। একাত্তরে পাক বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছেন। কেউ কেউ ইন্ডিয়া গেলেও সেখানে যুদ্ধের ময়দানে না গিয়েও যুদ্ধের সংগঠকদের ব্যক্তিগত জীবনে অন্যায়ভাবে উঁকি মেরে ‘অলাতচক্র’ নামে ফিকশন লিখেছেন। দেশ স্বাধীনের পর এই তারাই স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। ১৯৭৪ সালে যখন দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মরেছে, তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে সৃষ্টি করেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো পাকিস্তানপন্থী সামরিক অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা। তারাই পরে সামরিক শাসকের দলে যোগ দিয়েছেন। জামায়াতের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন জানিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীতা করেছেন। তালেবানী বিপ্লবের জন্য জঙ্গিবাদীদের চিন্তক হয়েছেন।

ঘোর সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী হেফাজতিদের সংগঠক হয়েছেন। তাদের চিন্তা কর্মতৎপরাতা সবসময়ই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার সৃষ্টি করছে। ভাষা সাম্প্রদায়িকতাও তাদের অন্যতম কীর্তি। রবীন্দ্রনাথ তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। সব জাতপাত, ধর্ম সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে যিনি নিজেকে ঘোষণা করেছেন নিজের গানে এবং মত ও পথে সেই লালনকে তারা বানাতে চাইছেন গোঁড়া মুসলমান। এই বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলবাদীরা বিদেশি বইপত্র পড়েই জ্ঞানগরিমা বাকোয়াজি অর্জন করলেও বাংলাদেশের পাশের দেশের লেখা বাংলা বইপত্রের ব্যাপারে খড়গহস্ত। তাদের একজন আবার ভারতীয় বাংলা বইয়ের বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবিতে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদের হুমকি দিয়েছিলেন। আহমদ ছদ ছফা, ফরহাদ মজহার, সলিমুল্লাহ খান, এই বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলবাদের তিন প্রধান। তারা ৩ জনই ভয়ানক ঘড়েল। নবীন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা মাঝে মাঝে ক্যামোফ্লেজও ধারণ করেছেন। তবে আধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের শিষ্যদের মধ্যে স চেয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন আনিসুজ্জামান।

 

তিনি আগোগোড়া উদার, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিপন্থী মানবিক বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে কখনোই তার বিচ্যুতি ঘটেনি। ফরহাদ মজহাররা যখন হেফাজতিদের দিয়ে সাম্প্রদায়িক তা-ব চালিয়ে মুক্তবুদ্ধিকে ভিন্নমতাবলম্বীদের খতম করতে চেয়েছে, একটি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাষ্ট্রের পক্ষে হিটলারের গোয়েবলসের মতো অমানবিক আওয়াজ তুলেছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, ঠিক তখনি আনিসুজ্জামানই মেরুদ- সোজা রেখে স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে নাগরিকের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন থাকবে, ধর্ম না পালনের অধিকারও থাকতে হবে। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম হতে পারে না। কোনো বিশেষ ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারে না। রাষ্ট্র হবে সর্বতোভাবে ধর্মনিরপেক্ষ। এখানেই তিনি অনন্য, আধুনিক। উদার মানবিক। সভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান। আনিসুজ্জামানের প্রস্থানে শ্রদ্ধা জানাই। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়