শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১৬ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্যার, আপনার অন্তিম যাত্রায় লেখা থাকুক কালের ধ্বনি

সৌমিত জয়দ্বীপ : মহীরুহ তো তিনি ছিলেনই, তার গুণের কারণে। গদ্য ছিলো নির্ভার, তবে খুব গভীর ও আকর্ষণকামী নয়। জ্ঞান রাখতেন অনেক কিছুরই, যদিও গুণ সেসবকে ছাপিয়ে গিয়েছিলো। তবে ঠিক সংকটত্রাতা ছিলেন বলে মনে হয় না। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একটি ঘরানার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শান্ত-নরম-মনোরম। অনেকে ‘রাবীন্দ্রিক’ বলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথেরও লড়াইয়ের ইতিহাস আছে, ড. আনিসুজ্জামানের যা আছে তাহলো সারল্য। ওই সারল্য দিয়ে অজাতশত্রু হওয়া যায়, সংকটত্রাতা হওয়ার মতো লড়াকু ধারায় যাওয়া যায় না বৈকি। তাকে ‘অজাতশত্রু’ আখ্যা দিয়েছিলেন অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফ, পা-িত্যের মাপকাঠিতে যিনি ঋজু তো বটেই, ব্যক্তিত্বের মাপকাঠিতেও ঋজু ছিলেন।

 

আহমদ শরীফরা আনিসুজ্জামানদের ঠিক বিপরীত ঘরানায় জীবনযাপন করেছেন। রাষ্ট্রের সংকটকালে অ্যান্তোনিও গ্রামসি কথিত একদম অর্গানিক ইনটেলেকচুয়ালের ভূমিকা নিয়েছেন এবং যারপরনাই মহীরুহও ছিলেন। প্রয়াত অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীরা এই ধারারই পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নিশ্চয়ই একটি ধারার ইন্টেলেকচুয়াল হিসেবে গণ্য হবেন, তবে তার উল্লেখিত সহকর্মীদের মতো পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল তিনি হতে চেয়েছেন বলে মনে হয় না। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের সবচেয়ে লিবারেল ঘরানার চর্চা করেছেন। জাতীয়তাবাদকে তিনি বুঝেছেন তারই মতো সহজ-সরল সনাতনী পথে। সেটাই তার পক্ষে উচিতকর্ম ছিলো। জীবনমানসের চর্চায় তিনি এতোটাই উদারনৈতিক ছিলেন যে, নিরাপদ ঝুঁকি পর্যন্ত নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেছেন বলে মনে হয় না। অসাম্প্রদায়িক তো তিনি ছিলেনই। সেটা জীবনাবধি মান্য করে গেছেন। এমনকি স্বভাবের বাইরে গিয়ে বিরাট এক বিস্ময়কর মন্তব্য করেছিলেন কয়েক বছর আগে। ধর্ম পালন না করার অধিকারও নাগরিকের আছে। কিন্তু সেই মত রাষ্ট্রের শিরদাঁড়া কাঁপাতে পারেনি। ক্ষমতার দাঁড়িপাল্লায় বাটখারা হয়ে গেলে, অন্যকেই শুধু মাপা যায়, নিজের ওজনটা মাপার হক তখন শুধু পাল্লাওয়ালার হাতেই তুলে দেওয়া হয়।

 

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের প্রয়াণ একটি অধ্যায়ের প্রয়াণ তো বটেই। সঙ্গে একটি বিপ্লব-অমনস্ক উদার ঘরানার সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কটিরও প্রয়াণ। এমনকি গত কিছুদিনে যতোজন মান্যবর প্রয়াত হয়েছেন বাংলাদেশে, প্রভাবের নিক্তিতে তিনিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার চলে যাওয়ায় তাই একটি অনিবার্য শূন্যতা তৈরি হলো। তবে এই শূন্যতাবোধ এখন উপলব্ধ হবে না। হবে আরও কিছুকাল পরে। বহুজনকে তিনি একদম নানা আয়োজনের ভরকেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। সেই সক্ষমতা তার ছিলো। তার সারল্যের বহু ব্যবহার হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অসংখ্য শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায়, কিংবা যেকোনো চাকরিতে। একাডেমিশিয়ান হিসেবে এমন শক্তিশালী রেফারেন্স হয়তো আর কেউ আসবেন না। এ কথাগুলোর সত্যাসত্য হয়তো কখনোই যাচাই করা সম্ভব হবে না। কারও আনুকূল্যে চাকরি হয়েছিােল, এ কথা স্বীকার করার হিম্মত খুব কমজনই রাখেন। আজকাল ফেসবুক আছে বলে শুধু ‘বিনম্র শ্রদ্ধা’ জানিয়ে গোপন সেই ব্যাপারটির একটি অপ্রকাশযোগ্য প্রতিদান দেওয়া হয়ে যায়। তাকে নিয়ে তেমন কোনো বিশ্লেষণমূলক লেখাপত্র ফেসবুকে পাওয়া যে গেলো না, শুধুই চর্বিতচর্বণ শ্রদ্ধা ও শোক ছাড়া, সেটা তাই বিস্ময়কর লাগেনি, স্বাভাবিকই লাগলো। অনেক গুণগ্রাহী তিনি রেখে গেলেন এটা সত্য। তবে ভবিষ্যতের অনেকেই অনুগ্রাহী হওয়া থেকে বঞ্চিত হলো, এটাও সত্য। আপনার অন্তিম যাত্রায় লেখা থাকুক কালের ধ্বনি, বিদায় স্যার। শ্রদ্ধা জানাই আপনার প্রতি। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়