শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১৬ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চীন পারলো, আমরা পারলাম না এখনো

রহমান শেলী : একটি সত্য ঘটনা দিয়ে শুরু করি। আমার এক বন্ধু রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে। সে সার্কুলার দিলো, লোক নিয়োগ করবে। ম্যানেজারের জন্য আসল সাতজন বিবিএ আর বাবুর্চির জন্য আসল একজন ডিপ্লোমা। অথচ তার দরকার ম্যানেজার একজন আর বাবুর্চি তিন জন। ভাইভা নেয়া হলো। বেতন অফার করা হলো ম্যানেজারের জন্য আট হাজার টাকা আর বাবুর্চির জন্য আঠার হাজার টাকা। বিবিএ ম্যানেজারের চাকরি করবেন। কারণ বাজারে চাকরি নেই। বাবুর্চি করবেন না, কারণ তার আরও বড় বেতনের অফার আছে।
ঘটনা সত্য। কারো রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থাকলে তিনি তা ভালো করে জানেন। তাহলে ভাবুন, আপনি বিবিএ নাকি ডিপ্লোমাধারী! চাকরি কোনটা রেডি আছে বাজারে! এবার চীনের কথায় আসি। চীন একবার একটানা চৌদ্দ বছর হাইয়ার ডিগ্রি দেয়া বন্ধ রেেেখছে। বলেছে, সবাই ডিপ্লোমা করবে একমাস থেকে তিন বছর বা চার বছর। চীন আর ভারতকে আমাদের দেশের সাথে তুলনা করলে আমাদের অবস্থানটি বুঝতে পারবো। কারণ ভারত একটি বড় অর্থনীতির দেশ। চীন ও ভারতের অর্থনীতি বিশ্বে বর্তমানে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও দশম। তাহলে ভাবুন আমাদের দৌড় কোথায়।
বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুসারে জিডিপি পার ক্যাপিটা- ১২,০০০ এর অধিক হলে তবে তাকে উন্নত দেশ বলা যায়। চীনের জিডিপি পার ক্যাপিটা ১০,০০০ এর মতো। যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার জরিপ ও রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত ও চীন দুটোই উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। উন্নত দেশের সারিতে যোগ দিতে তাদের আরও কত বছর লাগে সেটা বলা মুশকিল। চীন কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে অনেক আগে। চীনে রাস্তার উপর যেসব বাজার বসতো, সেগুলোতে একেকটা পণ্যের বিরাট স্তুপ থাকতো। আর কেনার সময় দর কষাকষি করা যেত। বলা যেতে পারে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল চীনের নতুন অর্থনৈতিক যুগ। কৃষকরা যদি বেশি উৎপাদন করতে পারতো, তারা অতিরিক্ত আয় করতে পারতো। এটা চীনাদের ভাবনায় বা গবেষণায় ছিল। আর আমাদের দিকে তাকালেও বলতে পারি, আমাদের উৎপাদন কিন্তু খারাপ নয়। তা না হলে রংপুরে টমেটোর কেজি দুই টাকা হয় কী করে। অথচ একই সময় ঢাকায় কিন্তু ত্রিশ টাকা কেজি। তাহলে এটা কিসের আলামত তাও ভাবা দরকার। আমাদের রাস্তাঘাটগুলো মাত্র হচ্ছে। যেখানে চীন বড় বড় রাস্তা করে মাঠ বানিয়ে রেখেছে অনেক আগেই। বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে গাড়ির বড় জ্যাম চিনেই লেগে থাকতো। আর এখন সেখানে রাস্তা ফাঁকা। ১৯৮৫ সালের দিকে সাংহাই নদীর অপর তীরের যে ভগ্নদশা ছিলো, সেটা সত্যিই অবাক করেছিলো। সেখানে একটা ব্রিজ পর্যন্ত ছিলো না। এখন সেখানে গড়ে উঠেছে কতশত ব্রিজ আর টানেল। আছে আন্ডারগ্রাউন্ড রেল লাইন। আর সাংহাই এর আকাশরেখা এখন তো ম্যানহাটানের প্রতিদ্বন্দ্বী। তারপরেও অর্থনৈতিক এই সাফল্যের সুফল একশ ত্রিশ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীনে সব মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই সময়কালের মধ্যে চীনে পঁচাশি কোটিরও বেশি মানুষকে দারিদ্রের কবল থেকে মুক্ত করা হয় এবং ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে দেশটিতে চরম দারিদ্র বলে কিছু থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চীন যেন সারা বিশ্বের জন্য একটি ওয়ার্কশপ বা কারখানায় পরিণত হয়েছে জাতীয়তাবাদী শক্তির সাথে গৃহযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালের পহেলা অক্টোবর কমিউনিস্ট নেতা চেয়ারম্যান মাও জেদং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত সাত দশকে দেশটিতে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটেছে। নজিরবিহীন সম্পদ অর্জন করেছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। চীন আজ শুধু এশিয়া মহাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেও পরাক্রমশালী এক রাষ্ট্র। চীনকে আটকাতে ট্রাম সরকার আমদানীর উপর টেক্স বসানোর চিন্তা করছে।
বলা হয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য চীনে যাও। ইসলামে এই কথা আছে বলে শুনে এসেছি। থাকুক আর না থাকুক আমাদের নতুন প্রজন্মরা চীনে শিক্ষা নেবার জন্য নিজের নামটি তালিকায় রেখেছে। অহরহ যাচ্ছেও এখন। আমাদের অজপাড়া গায়েও চীনাদের পদচারণ এখন। বুড়িচং থানার রামপুরে একটি জুতা কারখানা আছে, সেটি চীনাদের ব্যবস্থাপনায় দেয়া হয়েছে। মালিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কারণ কী? তিনি অনেক কিছু বললেন, এর মধ্যে একটি কথা বললেন, আমাদের কর্মচারীরা সঠিক সময়ে আসতো না। আর এখন আগে এসে বসে থাকে। তাহলে বলবো, আমাদের অনেক কিছুতে পরিবর্তন আনতে হবে। এর মধ্যে মন ও মানসিকতার পরিবর্তন আগে করতে হবে। আর না হয় পরাধীনতার দুইশ বছরের গ্লানি মুঁছতে পারব না। লেখক : কথা সাহিত্যিক ও পুলিশ সুপার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়