শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০২০, ০৭:৩২ সকাল
আপডেট : ১৫ মে, ২০২০, ০৭:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]জন্মের ১৫ বছরেও মেলেনি শিমলার পিতৃ পরিচয়!

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : [২] ‘‘রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বাবা আমাকে দেখে অন্য দিকে ফিরে থাকে। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যায়। সবাই বাবার আদর পায়, আমি বাবার কোন আদর পাইনা। সবাই বাবাকে বাবা বলে ডাকে, কিন্তু আমি বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারছি না। আমার কি অপরাধ?’’ এই বলে হাউমাও করে কেঁদে উঠলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিনের ব্রাহ্মনগাঁও গ্রামের শেখ আজিজুর রহমান সুমনের কিশোরী কন্যা শিমলা আক্তার (১৫)।

[৩] শুক্রবার (১৫ মে) সকালে ব্রাহ্মনগাঁও শহীদ ময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার এ কান্নায় উপস্থিত প্রায় শতাধীক মানুষের চোখ অশ্রুশিক্ত হলো। সবাই নিরবেই চোখ মুছে নিলেন। কিন্তু কেউই শিমলাকে শান্তনা দিতে এগিয়ে আসলেন না। কারণ গত ১৫ বছর এলাকাবাসী শিমলার বাবা ও তার পরিবারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও শিমলাকে তার বাবার পরিচয় বা আদর ফিরিয়ে দিতে পারেননি। বরং এ ব্যাপারে কেউ এগিয়ে গেলে তার বাবার সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক লাঞ্চিত হতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তাদের নানা বিপদে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্ঠা করেছে। তাই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এখন আর কেউ শিমলাকে শান্তনা দিতে এগিয়ে আসেনা। কারণ এলাকাবাসী জানে শিমলার পিতৃ পরিচয় তারা ফিরিয়ে দিতে পারবে না।

[৪] এলাকাবাসী জানায়, ২০০৪ সালের দিকে উপজেলার ব্রাহ্মনগাঁও গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে শেখ আজিজুর রহমান সুমন একই গ্রামের ছবির মোল্লার মেয়ে সাথীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর সেই সূত্রে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও গড়ায়। কয়েকদিন পর সাথী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি টের পেয়ে কেটে পড়ার চেষ্টা করে সুমন। কিন্তু এলাকাবাসীর তোপের মুখে তা সম্ভব হয়নি। তৎকালীন কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আতাউর রহমান ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রামীন সালিশের মাধ্যমে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। সাথীকে বাড়ী নিয়ে যায় সুমন ও তার পরিবার। বিয়ের ৩ মাসের মধ্যেই ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় একটি হাসপাতালে জন্ম হয় আজকের এই শিমলার। ওই সময় সুমন হাসপাতালে তার স্ত্রী ও নবজাতককে রেখে পালিয়ে যায়। কিন্তু সাথীর দরিদ্র পরিবারের পক্ষে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা সম্ভব না হওয়া থানার ওসি তা পরিশোধ করেন এবং নগদ কিছু অর্থ ও শিশু খাদ্য দিয়ে বাড়ীতে পাঠান। এরপর থেকে একটি দিনের জন্যও সুমন তার স্ত্রী-কন্যার খোঁজখবর নেয়নি।

[৫] শিমলার নানা ছবির মোল্লা ও নানী সালেহা বেগম জানান, ওই সময় অসুস্থ্য মেয়ে ও নবজাতককে নিয়ে তাদের বাড়ীতে ফেরার পরও সুমন তার বাড়ী না নেওয়ার কারণে স্থানীয় কিছু মানুষ নানা ধরণের কথা বলাবলি করছিল এবং সুমন গংরা নানাভাবে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছিল। অশেষে লজ্জা ও ভয়ে তারা বাড়ী ছাড়া হয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর গাজীপুরের টঙ্গীতে ছিলেন। পরিবারের খরচ ও বাড়ী ভাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বিধায় ১ বছর আগে নাতনিকে নিয়ে গ্রামের বাড়ী ফিরে আসে। কিন্তু পূনরায় শুরু হয়েছে সুমন গংদের হুমকি-দামকি। তারা স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসা শিমলাকে লেখাপড়া কারাচ্ছে। সেখান থেকে এবার জেডিসি পরীক্ষা দিবে। ইতিমধ্যে শিমনার মা সাথীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু শিমলার কি হবে? তারও তো ভবিষ্যৎ আছে? তারা তাকে নিয়ে কোথায় যাবো? তারা চায় সুমন তার মেয়েকে পরিচয় দিয়ে ফিরিয়ে নিক।

[৬] এ ব্যাপারে কথা হয় শিমলার বাবা শেখ আজিজুর রহমান সুমনের সাথে। তিনি বলেন, তাকে পিতৃ পরিচয় দেইনি কে বলেছে? জন্ম নিবন্ধনে তো পিতা হিসেবে আমার নামই লিখছে। শুধু জন্ম নিবন্ধনে বাবার নাম লিখলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নে তিনি উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যান।

[৭] তৎকালীন ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান আকন্দ ফারুক জানান, ওই সময় স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে গ্রাম্য সালিশে তৎকালীন ওসির ও স্থানীয় প্রায় হাজার খানেক এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে সুমন বিয়ে করে সাথীকে। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি করা সুমন দলের প্রভাব খাটিয়ে পরে তা অস্বীকার করে। তবে বিষয়টি মানবিক, মেয়েটি এখন খুব অসহায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়