শিরোনাম
◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলার নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও) ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ফসফরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের

প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০২০, ০৭:১৫ সকাল
আপডেট : ১৫ মে, ২০২০, ০৭:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘আইসোলেশন, আইসোলেশন এবং আইসোলেশন’

ড. মীজানুর রহমান : ফিফার ক্রমবিন্যাসে বাংলাদেশের অবস্থান ২০৮তম, আইসিসির ক্রমবিন্যাসে বাংলাদেশ নবম। করোনা শনাক্তকরণ টেস্টিংয়ে আমাদের অবস্থানও প্রায় একই পর্যায়ে। অনেক ম্যাচ খেলে আমাদের অবস্থান উন্নত করতে হবে। করোনাও অনেক টেস্ট করে আমাদের অবস্থান উন্নত করতে হবে। অতএব, কোভিড টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছে, ডঐঙ বলেছ। সঙ্গে সঙ্গে টকশোর বুদ্ধিজীবীরাও বলছে। যদিও নোয়াম চমোস্কি বলেছেন, করোনার স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলা বিশেষজ্ঞদের কাজ, বুদ্ধিজীরীর নয়। শুরুতে আমাদের আইইডিসিআরের একটি মাত্র কেন্দ্রে করোনা টেস্ট হতো দিনে ১০০-২০০টি, যা ছিলো একেবারেই অপ্রতুল। সবাই বললো টেস্ট বাড়াতে। বাড়ছেও ক্রমাগত। আজ পর্যন্ত ৪১টি কেন্দ্রে টেস্ট শুরু হয়েছে। এ সংখ্যা শীঘ্রই ৫০টি হয়ে যাবে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে দৈনিক ১০ হাজার বা তারও বেশি টেস্ট করা যাবে। ১৩ মে দেখলাম একজন বুদ্ধিজীবী বলেছেন, দৈনিক এক/দুই লাখ টেস্ট করা দরকার। তাও হয়তো করবো, গুণীজনের পরামর্শ বলে মানতেই হবে।

 

আমি আগেও লিখেছিলাম টেস্টে শনাক্তকৃত রোগী এবং বিগত ১৪ দিনে সে যাদের সংস্পর্শে এসেছিলো তাদের শনাক্ত করে সমাজের বা পরিবারের অন্যদের থেকে আলাদা না করা গেলে এই টেস্টের কোনো তাৎপর্য নেই। কেবল বিশ্ব টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া। এখন পর্যন্ত করোনার কোনো স্বীকৃত ওষুধ নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। যেমন নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা গেলে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা, কিডনি সমস্যা হলে ডায়লোসিস, ডায়াবেটিস মাত্রা ছাড়ালে ইনসুলিন। এই চিকিৎসা উপসর্গ দেখেই দেওয়া যায়, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ডায়াগনোস্টিক টেস্ট করা যেতে পারে। কোভিড টেস্ট লাগবে কেন? শুনেছি অন্যান্য কস্ট বাদ দিয়ে কেবল আর্থিক কস্ট (চৎরপব)ই নাকি ৩ হাজার টাকা, এটা কেবল কিটের দাম, যা এখন পর্যন্ত সরকারই বহন করছে। ল্যাব সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচ বাদই দিলাম। কিট উৎপাদনকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের মোড়লদের দিয়ে এ ব্যবসাটি চালাচ্ছে নাতো?
বিশেষজ্ঞ না হয়েও একথা বলার জন্য অনেকে বিরক্ত হবেন বা সমালোচনা করবেন জেনেও ঝুঁকি নিয়েই বলছি, শনাক্তকৃত রোগী ও তার সংস্পর্শে আসা লোকদের জরুরি ভিত্তিতে সংঘনিরোধ না করা গেলে বন্ধ করা হোক এই টেস্ট ম্যাচ। উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করুন। কিছুদিন আগেও অতিমাত্রায় টেস্ট দেওয়ার জন্য আমরা চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য হয় বলে সমালোচনা করতাম। আগে চিকিৎসকরা এতো টেস্ট দিতো না। মেধাবী চিকিৎসকরা উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করতো। এখনো কোভিড টেস্ট না করা থাকলে উপসর্গ দেখে বা সহজে করা যায় এমন অন্যান্য কিছু টেস্ট করে চিকিৎসা দিন। সুস্থ হলে প্রয়োজনে এন্টিবডি স্টে করে হার্ড ইমিউনিটির দেওয়াল তৈরির কাজে লাগান। আরেকটা কথা টকশোর বুদ্ধিজীবীরা বলেন বাংলাদেশ অনেক সময় পেয়েও প্রস্তুতি নেয়নি। সময়মতো প্রস্তুতি নিলে আমরা বেঁচে যেতাম। আমাদের সরকারি কর্মকর্তা ও নেতারা প্রস্তুতি সম্পর্কে আগাম কিছু অতিকথন করে সবাইকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং টকশোর বিষয়বস্তুর যোগান দিয়েছেন মাত্র। সমগ্র জাতির একমাত্র পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল (ঋঁষষ গধৎশবঃ ঈড়াবৎধমব) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিমাসে ৫০০ রোগীর আইসিইউ সেবার প্রয়োজন দেখা দেয়, সর্বোচ্চ ১০০ জনকে এ সেবা দেওয়া যায়।

 

স্বাভাবিক সময়েও একটি আইসিইউ বেড পেতে পুরো ঢাকা শহর ঘুরতে হয়। ৫ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ বেড রাতারাতি বাড়ানো যায় না। ৫০ বছরে কেন বাড়েনি সেটা ভিন্ন আলোচনা। এ কাজের জন্য জনবল একেবারে নেই বললেই চলে। একই কথা, পিসিআর মেশিন টাকা দিয়ে কেনা গেলেও টেকনিশয়ান নেই, গত ৮ বছরে কোনো হেলথ টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
অতএব, কোভিড টেস্ট চলছে লক্ষ্যহীন ও মানহীনভাবে। এর সংখ্যা বাড়িয়েই সমস্যার সমাধান হবে না। সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে কিট বিক্রেতারা। যেমনটি পরীক্ষায় কার্যকারিতা নিশ্চিত হওয়ার আগেই রেমডেসিভির তৈরি করে কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি দাম হাঁকছে প্রতি ডোজ ৬,০০০ টাকা, একজনের পূর্ণাঙ্গ ডোজের জন্য খরচ হবে ৬০,০০০ টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতি ডোজের দাম সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা হওয়া উচিত, এ আরেক ‘বালিশকা-’।

 

হাসপাতালে এবং টেস্টিং সেন্টারের দীর্ঘ লাইন কমানোর জন্য ২-৩ জন ডাক্তারের সমন্বয়ে একেকটি স্কোয়ার্ড গঠন করে সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা দিয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী ফোন করলে ওই রোগীর বাড়িতে চলে যাবে। রোগীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের আইসোলেশনের বিষয়টি বুঝিয়ে দেবে এবং উপসর্গ অনুযায়ী কিছু ওষুধ দিয়ে আসবে। বাড়িতে আইসোলেশনের সুযোগ না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনের ব্যবস্থা করবে। আগে কখনো শ্বাসকষ্ট ছিলো না, কিন্তু নতুনভাবে সর্দি-শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে অক্সিজেন সুবিধা সংবলিত হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অক্সিজেন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলেই বেঁচে যাবে প্রাণ। ভেন্টিলেটর সবার লাগবেও না। আর লাগলেও সবার কাপালে তা জুটবে না। এই নিয়ে হৈচৈ করেও কোনো লাভ নেই। আমাদের দেশে করোনা আক্রান্তদের শতকরা ১/২ ভাগের ভেন্টিলেটর লাগে। রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে এক শতাংশেরও ভেন্টিলেটর দেওয়া সম্ভব হবে না। আমেরিকাতেও ভেন্টিলেটর থেকে ফিরে আসে প্রতি ১০ জনে একজন।

 

অতএব টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট নয়। নিজেকে এবং অপরকে করোনাক্রান্ত ভেবে আইসোলেশন, আইসোলেশন এবং আইসোলেশন। সব কিছু বিশ্বস্বাস্থ্য সংখ্যার পরামর্শ বা ইউরোপ-আমেরিকার মতো করতে হবে কেন? মনে রাখতে হবে আমাদের কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার নেটওয়ার্কটি বিশ্বের সেরা। ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত, যা পৃথিবীতে কোথাও নেই।
তাছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা বিশ্বে অনুকরণীয়। গুড় আর লবণের মিশালে শররত বানিয়ে আমরা ডায়রিয়া মোকাবেলায় বিশ্বের রোল মডেল। করোনা বৈশ্বিক সমস্যা হলেও আমাদের সমস্যাটা আমাদের আর্থ-সামাজিক ও নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই মোকাবেলা করতে হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ১৩ মে বলেছেন, করোনার টিকা আবিষ্কারের কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না। এইচআইভি ভাইরাসের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়েছে। পৃথিবীতে মাত্র ২৫টি রোগের টিকা ব্যবহৃত হয়। বাকি রোগগুলো নিয়েই মানুষ টিকে আছে। আমাদেরও আমাদের মতো করে টিকে থাকতে হবে। লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়