আজহারুল হক : [২] জীর্ণ শীর্ণ ছোট্ট শিশু রাব্বি। বয়স তার নয় বছর। যে বয়সে হাতে থাকার কথা
বই-খাতা, কলম সেই বয়সে রিকশার কঠিন হাতল আকড়ে ধরে পাঁচটি আঙ্গুল। হ্যা, পাঁচটিই আঙ্গুল! হাতও যে একটি। বাম হাত, ডান হাতটি নেই। কাটা পড়েছে বেশ কবছর আগে। তবু শরীরের এই ঘাাটতি, নয় বছরের পথ শিশুটি রাব্বির কাছে তুচ্ছ।
[৩] এক হাতেই রিকশার হাতল চেপে ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌর এলাকায় এভাবেই জীবন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে অসহায় শিশু রাব্বি। এতে তার জীবিকার চাকা সচল থাকলেও দিনশেষে প্রায় অচল হয়ে পড়ে ছোট্ট শরীর। রাব্বি কাজ করতো গফরগাঁও পৌর এলাকার একটি চায়ের দোকানে। ধোয়ামোছার কাজ। একহাতে যতটুকু করা যায়। তা থেকে যা আয় তা দিয়ে পেট চলতো। করোনাভাইরাসের করাল থাবা পড়েছে তার জীবিকাতেও। চা দোকান বন্ধ। বন্ধ রাব্বির কাজ। কিন্তু ক্ষুধা কি আর থমকে থাকে? সেই তাড়নায় ভাড়ায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ে পথে নামে শিশুটি। একহাতে আর কতটুকু জোর? তাই একজনের বেশি যাত্রী তোলারও সাধ্য নেই তার। আর দুজন যাত্রী রিকশায় চড়লে দম যায় যায় অবস্থা। নিদারুণ এই দৃশ্য গফরগাঁওয়ের পৌর এলাকার মানুষের চোখ এড়ায়নি। নিয়তির লেখা ভাগ্যে, বিশ্রামের পরিবর্তে রিকসার প্যাডেল ঘুরাচ্ছে নয় বছরের শিশু রাব্বি। সকালে পরম মমতায় যখন পেট পুড়ে খেয়ে ছোট্ট বন্ধুদের সাথে গল্প ও আড্ডা দেয়ার কথা তখন শিশু রাব্বি যাচ্ছে দুমুটো খাবার যোগার করার তাগিদে রিকসা নিয়ে। এক হাতে রিকশা চালানোর একটি দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে জনৈক শহিদুল ইসলাম তার ফেসবুকের টাইমলাইনে পোষ্ট করেন। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গফরগাঁওয়ের বিভিন্ন মহলে। অসহায় শিশুটির পাশে এগিয়ে আসেন গফরগাঁও পৌর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক তাজমুন আহমেদ। রাব্বির হাত থেকে ছাড়িয়ে দেন রিকশার হাতল। দায়িত্ব নেন তার ভরণপোষণের। সঙ্গে আগুনে পুড়ে যাওয়া রাব্বির আরেক বন্ধু জনিরও দায়িত্ব নেন তিনি। যুবলীগ নেতা তাজমুন আহমেদের ভাষায়, মানুষের জন্য কিছু করতে পারা সবার ভাগ্যে হয় না। তিনি বলেন, ‘পথশিশুরা তো এই সমাজেরই অংশ। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। এই শিশু দুটির দায়িত্ব নিতে পেরে ভালো লাগছে।’
[৪] জানা যায়, রাব্বির জন্ম যশোরের রেলস্টেশন এলাকায়। কে বাবা, কে মা সে কিছুই জানে না। বছর দুই আগে পথ চলতে চলতে যশোর থেকে গফরগাঁওয়ে চলে আসে সে। সেই থেকে সেখানেই আছে।
আপনার মতামত লিখুন :