শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০২০, ০৫:০৬ সকাল
আপডেট : ১৩ মে, ২০২০, ০৫:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভাসমান মানুষ যাবে কোথায়

নিউজ ডেস্ক : ‘বাজান, শইলডা ভালা না। প্রতিদিন খাবার দিয়ে যায় মানুষ। খিচুড়ি খাইতে আর ভালো লাগে না। বুকটা জ¦ালাপোড়া করে। ভাত খাইতে খুব মন চায়।’ রবিবার রাত সাড়ে ৮টা। বিজয়নগর পানির ট্যাংকির পাশে ফুটপাতে পঞ্চাশোর্ধ শীর্ণকায় মনোয়ার খাতুন বসে ছিলেন খাবারের আশায়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে এসব ভাসমান মানুষকে প্রতিদিনই খাবার দেওয়া হয়। মনোয়ারা খাতুনের সেই খাবারের জন্যই অপেক্ষা। দৈনিক আমাদের সময়

বয়স ৫০ পেরোলেও মনোয়ারা খাতুনকে দেখলে মনে হবে বৃদ্ধা। স্বামী-সন্তানহীন মনোয়ারার আদিনিবাস ময়মনসিংহ। তবে ঢাকার ফুটপাতেই কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় দেড় যুগ। এখন শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। বের হয়েছিলেন ভাতের খোঁজে। কিন্তু শরীর আর চলছে না। রাস্তার পাশেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এসব ভাসমান মনোয়ারারা এখন করোনায় তলিয়ে গেছে। বেকার হয়ে মানুষের সাহায্যে নিয়ে জীবনধারণ করছেন।

মনোয়ারা খাতুনের মতোই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছে। ফুটপাত, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল কিংবা রেলস্টেশনেই কেটে যায় তাদের জীবন। ঘরহীন এসব মানুষের অনেকেরই থাকার জায়গা না থাকায় তারা রাত কাটাতে বেছে নেয় এসব স্থান। আবার অনেকের ঘর থাকলেও জীবিকার প্রয়োজনে বা অন্য কারণেও খোলা আকাশের নিচে কাটাতে হয়।

এসব মানুষের আবাস মূলত কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, গ্রিনরোড, মৌচাক, গুলিস্তান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা, শাহবাগ, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতসহ খোলা জায়গা। গত বছরের জুনে জাতীয় সংসদে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষের সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘বস্তিশুমারি ও ভাসমান লোক গণনা জরিপ-২০১৪’তে এ হিসাব উঠে আসে। তার পর ছয় বছরে নতুন জরিপ হয়নি।

নদীভাঙন, কর্ম না থাকা, উচ্চ বাড়িভাড়াসহ নানা কারণেই বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। জরিপে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা আলাদা করা হয়নি। তবে ভাসমান মানুষের মধ্যে কাজ করা বিভিন্ন এনজিওর হিসাবে রাজধানীতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ রয়েছেন যারা ভাসমান জীবনযাপন করেন।

এর বাইরে রাজধানীতে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক রিকশাচালক রয়েছেন, যারা বিভিন্ন গ্যারেজ ও তার আশপাশে ভাসমান জীবনযাপন করেন। পরিবার ছেড়ে দলবদ্ধভাবে তারা সেখানেই খুপড়ি তুলে জীবনযাপন করেন।

দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর এ মানুষগুলোও অনেকটা বেকার হয়ে যায়। দিন আনা দিন খাওয়া এসব মানুষের জন্য মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তাও। রাজধানীর ভোটার না হওয়ায় এসব মানুষরা পাচ্ছেন না ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দেওয়া সহায়তাও।

কামরাঙ্গীরচরে একটি রিকশা গ্যারাজে থাকেন রিকশাচালক ইশরাফিল। রিকশা নিয়ে বের হলেই গ্যারাজ মালিককে একশত টাকা দিতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে দৈনিক গ্যারাজ খরচ দিয়ে ৭০-৮০ টাকা থাকে। প্রায় ২৫ দিন রিকশা নিয়ে বের হইনি। এখন যা আয় হয় তা দিয়ে নিজেরই চলে না। সংসারে কিছু দেওয়ার সুযোগ নেই।

সরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ যেমন নেওয়া হয়নি, ঠিক তেমনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকেও কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। উত্তর সিটির পক্ষ থেকে নামকাওয়াস্তে কিছু কর্মসূচি থাকলেও দক্ষিণ সিটি একেবারে উদাসীন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ভূঞা বলেন, ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বস্তি এলাকার মানুষের মধ্যে। আর ভাসমান মানুষের জন্য সাবান বিতরণ, হাত ধোয়ার জন্য বেশ কয়েকটি পয়েন্ট করাসহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশনের বেশ কয়েক কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা কথা বলতে চাননি।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় প্রায় ৫০ দিনের বেশি সময় ধরে পনেরশ মানুষকে দুই বেলা খাবার খাওয়াচ্ছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। তিনি বলেন, রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক ভাসমান মানুষের দুই বেলা খাবার খাওয়ারই সুযোগ নেই। রাস্তায়ই দিনযাপন করতে হচ্ছে। তাদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিপুলসংখ্যক মানুষ খাবারের জন্য এলেও তাদের সাপোর্ট দেওয়ার সক্ষমতা আমার নেই।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক, সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ রয়েছে। তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার অধিকার রযেছে। বিশেষ করে এ করোনাকালে রাষ্ট্র অন্য নাগরিকদের মতোই তাদের পাশেও দাঁড়াবে, এটিই স্বাভাবিক। তবে এখনো আশাব্যঞ্জক কিছু দেখছি না। যদিও উন্নত বিশ^ এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের ইচ্ছে থাকলেও সেভাবে সম্ভব নয়। কিন্তু রাষ্ট্রের যেমন তার অন্য নাগরিকদের নিয়ে ভাবনা রয়েছে। একইভাবে এসব ভাসমান মানুষদের নিয়েও সমানতালে ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের সব ভাসমান মানুষদের ক্রান্তিকালে খাবার পৌঁছে দেওয়া কঠিন কাজ। বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক সংস্থাগুলোকে এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। যারা ভাসমান মানুষদের নিয়ে কাজ করে তাদের সহায়তার মাধ্যমে অন্তত করোনাকালে খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়