আব্দুন নূর তুষার : আরএনএন ভাইরাসের মিউটেশন বা অভিযোজনের দ্রুততা বেশি, অভিযোজনের সময়কাল কম ও তারা বারবার অভিযোজিত হয়ে টিকে থাকার প্রায় সব উপায় ব্যবহার করে। তাদের ভাইরাল প্রুফরিডিংয়ের সক্ষমতার উপরে ভিত্তি করে ক্ষয়ক্ষতির ক্ষমতা। যতো নতুন স্ট্রেইন হবে অর্থাৎ প্রুফরিডিং ঠিকমতো না হলে ভ্যাকসিন বানানো কঠিন। প্রুফরিডিং ভালো হলে ভ্যাকসিন বানানো সোজা। কারণ এটা বারবার একই চেহারায় আসে। তখন টিকাও একইভাবে কাজ করে। সবাইকে টিকা দিয়ে দিতে পারলে সে আর মানবশরীরকে হোস্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না। প্রুফরিডার যদি ভালো হয় বানান ঠিক থাকবে রোজ। তাহলে একটা ডিকশনারি দিয়ে কাজ হবে। প্রুফরিডার খারাপ হলে একেকদিন একেক বানান হবে। কোনো ডিকশনারিতেই সেই শব্দ পাবেন না। ভ্যাকসিনকে ডিকশনারি ভাবেন আর ভাইরাসকে বানান। তাহলে মিউটেশনে এই প্রুফরিডিং বিষয়টা বুঝতে সোজা হবে। একই সঙ্গে দুটো ভাইরাস আক্রমণ করলে তারা নিজেদের মধ্যে জেনেটিক মেটেরিয়াল আদান প্রদান করেও নতুন ভাইরাল স্ট্রেইন তৈরি করতে পারে।
যেটা মারাত্মক হতেও পারে। এটাকে রিকম্বিনেশন বলে। এজন্য ভাইরাস, ড্রাগ রেজিসট্যান্টও হয়ে যায়। তখন একসঙ্গে একাধিক ওষুধ ব্যবহার করা হয় যাতে এই ভাইরাসকে মেরে শেষ করা যায়। দুই দশকে বিভিন্ন গবেষণায় ২৫ থেকে ৪৪ শতাংশ ক্ষেত্রে নতুন ইনফেকশনের কারণ হিসেবে কোনো না কোনো আরএনএ ভাইরাস পাওয়া গেছে। প্রতি বছর ২ থেকে ৩টি নতুন আরএনএ ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। অন্য প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণও বেড়েছে। ইবোলা, মার্স, সার্স, লাসা ফিভার, চিকুনগুনিয়া, জিকা এবং এখন করোনা। ভাইরাল ডিজিজে তাই আমরা আমাদের অ্যান্টিবডির উপরেই নির্ভরশীল থাকি। আমরা যদি ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধ ব্যবহার করে ভাইরাল শেডিং বাড়াতে পারি বা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিকে ধীর করতে পারি, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তখন ভাইরাসের বংশ নির্বংশ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বারবার তাই প্রাণীকুলকে বিরক্ত না করতে পরামর্শ দিয়েছেন। যেকোনো প্রাণী খেতে নিষেধ করেছেন। পুরনো ইয়েলো ফিভার, জিকা, ও ফ্লু আবার ফিরবে বলেও বলেছেন। শুধু তাই নয় পোলার আইস ক্যাপ গলে কোটি বছর আগের জমে থাকা লার্জ ভাইরাস আসার কথাও বলেছেন।
এবার বলি। পৃথিবীতে এখনো মানুষের ব্যবহার উপযোগী কোনো আরএনএ ভ্যাকসিন নেই। আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন আছে তবে সেখানে ভাইরাল প্রোটিন বা রিভার্স ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে পাওয়া ডিএন এ ব্যবহৃত হয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভাইরাস ব্যবহার করা যায়। ফ্লু ভাইরাসের টিকা আছে, কিন্তু এর কার্যকাল ৬ মাস থেকে এক বছর। অতএব, ভ্যাকসিনের আশায় বসে থেকে লাভ নেই। খুব তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন আসবে না। যদি আসে তবে ভালো ওষুধ আসবে প্রথমে। স্বাস্থ্যবিধি মানুন। সাবান, মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব এই অসুখ থেকে বাঁচার এটাই উপায়। যতো দেরিতে আপনি আক্রান্ত হবেন। ততোই আপনার বাঁচার সম্ভাবনা বেশি। কারণ আশা করা যায় ততোই এই ভাইরাস দুর্বল হয়ে আসবে। এখানেই তকদির ও বিজ্ঞানের মেলবন্ধন। প্রস্তুতি ও প্রতিরক্ষা যতো বেশি, তকদির ততোই আপনার পক্ষে থাকবে। আল্লাহ আমাদের শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন হাত-পা দিয়ে নয়, মাথা দিয়ে। হাতি, ঘোড়া, গরু, গাধা সবারই আমাদের চেয়ে শক্তি বেশি। আমাদের কেবল বুদ্ধি বেশি। বোকার মতো কাজ না করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :