শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০২০, ০৬:১২ সকাল
আপডেট : ১৩ মে, ২০২০, ০৬:১২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনাকালে মানবিকতার বাঁধনে পৃথিবী হয়ে উঠুক আপন বসতবাড়ি

মো. আবদুস সামাদ ফারুক : করোনাভাইরাসের নৃশংস আঘাতে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষ নিহত। বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চল এই বিভীষিকাময় মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, ইরান, চীন, কানাডা, পেরু, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইকুয়েডর, সৌদি আরব। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানও মারাত্মকভাবে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকারসহ বহু বড় বড় বিশ্ব নেতাকে করোনার ছোবল স্পর্শ করেছে। মৃত্যুর মিছিল, মৃত্যুভয়, আতঙ্ক, কারফিউ, লকডাউন গৃহবন্দিত্ব, দেখামাত্র গুলি, প্রশাসনের সহায়তায় সেনাবাহিনী, চিকিৎসা সামগ্রী সংকট বিশেষ করে পিপিই, মাস্ক, ভেন্টিলেটর, ডাক্তার ও নার্স, বেড সংকট, করোনা সন্দেহে বৃদ্ধা মাকে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া, করোনায় মৃতের দাফন কাফনে নিকট আত্মীয়রা থাকে ভিত, অতি দরিদ্রদের খাদ্য অভাব, লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন, সরকারের বিস্তৃত খাদ্য সহায়তা, ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া, শারীরিক দূরত্ব মান্যকরণ শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত এক বহুমাত্রিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

 

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েক লাখ গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকায় আসা আবার ফেরত যাওয়া এবং আবার পায়ে হেঁটে আসা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে চীনের তৈরি জীবাণু বলে অভিযোগ করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন এবং অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ সমস্যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর অভাবনীয় পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকাংশে তুলনা করা যায়। এই মহামারি বিশ্ব অর্থনীতি, জীবন-জীবিকা, স্থাস্থ্য ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এক গভীর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে যার প্রভাব হবে দীর্ঘ মেয়াদি। আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে ষাট বছরের মধ্যে প্রথমবার এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য কোটা। দক্ষিণ এশিয়া গত এক দশক ধরে যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছিলো তা থুবড়ে পড়ার শঙ্কা। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা খোদ যুক্তরাষ্ট্রে হবে ২০ শতাংশ এবং উন্নত ও উন্নয়নগামী দেশগুলোতে তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচের দেশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।

 

ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৈরি পোশাক, কৃষিসহ অন্যান্য সেক্টরে প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। প্রায় ৪ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এক কোটি মানুষকে রেশনিংয়ের আওতায় আনার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ৯৫৬১৯ কোটি টাকা যা জিডিপির ৩.৩ শতাংশ অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি তথা খাদ্য নিরাপত্তা প্রাধান্য পাবে সংশোধিত বাজেটে ও পরবর্তী ৩ বছরের বাজেট।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার না খেয়ে ৩ কোটি মানুষ মারা যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। আনন্দের বিষয় হাওড় এলাকার বোরো ফসল প্রায় ঘরে উঠেছে। আগাম বন্যা ও শিলাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ফসল ঘরে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মহামারি মোকাবেলায় সরকারি যন্ত্র বিশেষ করে ডাক্তার, নার্স, মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মী মানুষের হৃদয়ে পৌঁছতে পেরেছেন।

 

 

 

পাশাপাশি দেশপ্রেমিক মানুষ সামাজিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ফসল কাটার আহ্বান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শার্ট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোকেরা সাময়িকভাবে কামলার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। উৎসবের মেজাজও লক্ষ্য করা গেছে।
এই রোগের প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্বের তাবৎ বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ভ্যাকসিন পেতে আরও সময় লাগবে। এই রোগ বুঝিয়ে দিলো ‘সময় নেই, সময় নেই’ বলে যে চিল্লাচিল্লি চলছিলো সেই সময় এখন পেয়ে গেলে। করোনার ভয়াবহতা চলছে বহু মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এ এক দুর্বিষহ বৈরী সময়। জীবনানন্দ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দেখেছিলেন, করোনা দেখতে হয়নি। অনেক কষ্টে লিখেছিলেন ‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন’। যদিও জীবনানন্দ এ রকম পঙক্তি লেখার জন্য জন্ম নেননি। করোনা একদিন বিদায় নেবে। কিন্তু গভীর ক্ষত রেখে যাবে। এই বৈরী সময় যে শৃঙ্খলা, মানবিকতা ও সহমর্মিতা শেখালো তার চর্চা করে এক শান্তিময় পৃথিবী আমরা দেখতে চাই। ঈষৎ সংক্ষেপিত। লেখক : সদ্য অবসর প্রাপ্ত সিনিয়র সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়