শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০২০, ০২:১০ রাত
আপডেট : ১৩ মে, ২০২০, ০২:১০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনাভাইরাস: বাংলাদেশে নার্সদের সুরক্ষা কি অবহেলিত?

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটস নামে নার্সদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন বলছে, সেবা দিতে গিয়ে দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫২০ জন নার্স কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।  সংগঠনটির হিসেবে, রাজধানী ঢাকার ০৯টি কোভিড হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন প্রায় এক হাজার নার্স।বিবিসি বাংলা

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এমন একজন নার্সের সাথে কথা হয় বিবিসি বাংলার যিনি রাজধানী ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র নার্স হিসেবে কাজ করা একজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নার্স বিবিসি বাংলাকে জানান, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় দেড় মাসের মতো কাজ করার পর তিনি নিজেও আক্রান্ত হন করোনাভাইরাসে।

এর পর পর তার পরিবারের আরো তিন জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পরে। ১১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।

তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে আস্থা নেই তার। যার কারণে রোগীদেরকেও সেবা দিতে ভয় কাজ করে তার মধ্যে। "আমি রোগীদের সেবা দেই কিন্তু কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। আমি তাদের কাছে গিয়ে সেবা দিতে পারি না," তিনি বলেন।

"আমি যে সেবা দিতে যাবো আমার নিরাপত্তাটা কোথায়। দিন শেষে বা এক সময় তো আমাকে পরিবারের কাছে ফিরতে হয়। তাদের নিরাপত্তাটা কোথায়।"

ওই নার্স বলেন, হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদেরকে পর্যাপ্ত পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোও মানসম্পন্ন নয় বলে তাদের সন্দেহ রয়েছে।"কেএন-৯৫ নামে যে মাস্ক দেয়া হয়েছে, সেটিও তো আসল নয়," তিনি বলেন।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ওই নার্স বলেন, তিনিসহ শুধু ওই হাসপাতালেরই ২৫ জনের বেশি নার্স সেবা দিতে গিয়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাও নিয়েছেন। যারা ছাড়া পেয়েছেন তাদের এখনো আরো ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার কাজে যোগ দিতে চান বলে জানান।

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকা নার্সদেরকে দিনে ১২ ঘণ্টা করে সপ্তাহের ৭দিন সেবা দিতে হচ্ছে। আর এর পরের ১৪ দিন থাকতে হচ্ছে কোয়ারেন্টিনে। ১২ই মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। দিনটিকে উপলক্ষ করে নার্সদের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারো সামনে এসেছে।

সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটসের করা গত মাসের এক জরিপ বলছে, ৮৬ শতাংশ নার্স পূর্ণ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম পায়নি।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাব্বির মাহমুদ বলেন, গত ১৯শে এপ্রিল থেকে ২৪শে এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইনে একটি জরিপ করে তারা এই তথ্য পেয়েছেন। ওই জরিপে অংশ নিয়েছিল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ৭০০শর বেশি নার্স।

"একটা ফুল পিপিই বলতে বোঝায় যে তার মধ্যে হাত, মুখ, চোখসহ পুরো শরীরের সুরক্ষার সব কিছু থাকবে। কিন্তু ফুল পিপিই পাননি ৮৬ শতাংশের মতো নার্স।" তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসার পর পিপিই-এর সরবরাহ বেড়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচতে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় সেটিও ৮৬শতাংশ নার্স পাননি।

মি. মাহমুদ জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি তালিকাভুক্ত নার্সের সংখ্যা ৭০ হাজার। এর মধ্যে সরকারি নার্স রয়েছেন ৪০ হাজারের মতো।

তবে জনসংখ্যার অনুপাতে পুরো বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখ নার্স দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, প্রতি একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিন জন করে নার্স থাকাটা আদর্শ। আর প্রতি ৫ জন রোগীর জন্য একজন তালিকাভুক্ত নার্স থাকার কথা।

নার্সদের সংগঠন বলছে, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার নার্স অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হয়।

কিন্তু বাংলাদেশে এই চিত্র প্রায় উল্টো বলে জানান মি. মাহমুদ। একজন নার্সকে তিন জন চিকিৎসকের সাথে কাজ করতে হয়। আর প্রতি একশর বেশি রোগীর জন্য একজন নার্স থাকেন। যার কারণে তাদেরকে সামাল দিতে অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করতে হয়। "আর এ কারণেই অভিযোগ আসে যে নার্সরা খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু কারো একার পক্ষে শতাধিক রোগী সামলানো সম্ভব নয়।"

এছাড়া চিকিৎসকদের তুলনায় নার্সদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন থাকে বলে অভিযোগ করেন মি. মাহমুদ। যার কারণে অনেকেই এই পেশায় আসতে চায় না। "ডাক্তারদের যেভাবে দেখা হয়, আমাদের দেশে নার্সদের সেভাবে দেখা হয় না। সেটা অর্থনৈতিক, সামাজিক-দুভাবেই।" বাংলাদেশে নার্সিং শিক্ষার সুযোগও কম বলে মনে করেন সাব্বির মাহমুদ।

এদিকে নার্সদের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে এবং এখন চিকিৎসকদের তুলনায় নার্সদের সংখ্যা বেশি। প্রতিজন চিকিৎসকের বিপরীতে এক জনের বেশি নার্স রয়েছেন।

"আগে চিত্রটা উল্টো ছিল। কিন্তু এখন সেটা নেই। এখন চিকিৎসকের চেয়ে নার্সের সংখ্যা বেশি।" এছাড়া কোভিড-১৯ এর এই পরিস্থিতিতে আরো নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। "কালই আরো ৫ হাজার নার্স যোগ দেবে," তিনি বলেন।

মি. খান বলেন, বাংলাদেশে সরকারি চিকিৎসকের সংখ্যা রয়েছে ৩০ হাজার। আর নার্সের সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। সে হিসেবে চিকিৎসকের তুলনায় নার্সের সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চিকিৎসক এবং নার্সদের এমনকি অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও কোন বৈষম্য করা হচ্ছে না।

"যারা কোভিড হাসপাতালগুলো এবং অন্য হাসপাতালে কাজ করছেন, সরকারি পর্যায়ে সব নার্স ও চিকিৎসকদের এক ভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে। কারো ঘাটতি হওয়ার কোন সুযোগ নাই," তিনি বলেন। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি এন্ড রাইটস সংগঠনটি বলছে, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার নার্স অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়