শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ মে, ২০২০, ১২:৪৯ দুপুর
আপডেট : ১২ মে, ২০২০, ১২:৪৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] করোনায় আশার আলো দেখাল কুষ্ঠের ওষুধ

ডেস্ক রিপোর্ট : [২] সারা পৃথিবী যখন কোভিডের ওষুধ ও প্রতিষেধক খুঁজে চলেছে, মাইকোব্যাকটেরিয়াম-ডব্লিউ নামের ওষুধ সেখানে আর একটু আশার আলো দেখাল। মাইকোব্যাকটেরিয়াম-ডব্লিউ মূলত কুষ্ঠের ওষুধ। প্রথমে কুষ্ঠের জন্য ব্যবহার হলেও পরবর্তীতে ব্যবহার হতে লাগল টিবি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে। তারপর এই ওষুধ ব্যবহার করা হয় ক্যান্সারে। ব্লাডার ক্যান্সারে মৃতপ্রায় রোগীরা প্রাণ ফিরে পেলেন এই ওষুধের ছোঁয়ায়। এবার এল কোভিডের পালা।

[৩] পিজিআই চণ্ডীগড়ের চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা চারজন গুরুতর অসুস্থ কোভিড রোগীর উপর পর পর তিন দিন ০.৩ মিলি মাত্রায় এই ওষুধ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। দেখা যায়, রক্তে যে সংক্রমণের বিষ মারাত্মকভাবে ছড়িয়েছিল, তার মাত্রা কমতে শুরু করেছে। শরীরের আভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গদের অকেজো হওয়ার হারও কমেছে কিছুটা। ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হয়নি। ফলে কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাসট্রিয়াল রিসার্চের তত্ত্বাবধানে ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’-র অনুমতিক্রমে শুরু হয়ে গেল মাইকোব্যাকটেরিয়াম-ডব্লিউ নিয়ে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রস্তুতি পর্ব। তাতে সীলমোহর পড়ল এফডিএ এবং আইসিএমআর-এর।

[৪] কীভাবে হবে এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল
আপাতত ঠিক করা হয়েছে, মোট তিনটি পর্যায়ে এই ট্রায়াল হবে। চলবে তিনটি আলাদা সেন্টারে। পিজিআই চণ্ডীগড়ে, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স, ভোপাল ও দিল্লিতে।
• প্রথম পর্যায়ে ট্রায়াল হবে পিজিআই চণ্ডীগড়ে। আইসিইউ-তে ভর্তি ৫০ জন জটিল কোভিড রোগীর উপর। তার মধ্যে অর্ধেক রোগীকে দেওয়া হবে এই ওষুধ ও অর্ধেক রোগীকে প্ল্যাসিবো অর্থাৎ ওষুধের মতো দেখতে কিন্তু ওষুধ নয় এমন কিছু। এ ক্ষেত্রে তা লবণ-পানি। অন্যান্য চিকিৎসা যেমন চলছিল তেমনই চলবে। ৩-৪ সপ্তাহ রোগীদের খুব ভাল ভাবে নজরে রাখা হবে। তারা কতটা সেরে উঠছেন, অক্সিজেনের চাহিদা কমছে কি না, ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কমছে কি না, প্রত্যঙ্গেরা হারানো কার্যকারিতা কতটা ফিরে পাচ্ছে, মৃত্যুহার কতটা কমছে ইত্যাদি।
• দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে যোগ দেওয়ার জন্য ৫০০ জন এমন মানুষকে বেছে নেওয়া হবে যারা কোভিড রোগীর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে রয়েছেন, অথচ এখনও কোনও উপসর্গ হয়নি। কোভিড রোগীর আত্মীয় ও হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে থেকেই বাছা হবে এদের। ওষুধ দিয়ে দেখা হবে রোগের বিরুদ্ধে তাদের পুরোদস্তুর বা আংশিক প্রতিরোধ গড়ে উঠল কি না।
• তৃতীয় পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অথচ রোগ তত জটিল নয়, এমন রোগীদের দিয়ে দেখা হবে কত তাড়াতাড়ি তারা সেরে উঠলেন, কত জনের অবস্থা খারাপ হল, কত জনের আইসিইউ-এর প্রয়োজন হল কত জনের হল না ইত্যাদি খুঁটিনাটি।
সিএসআইআর-এর কোভিড-১৯ কার্যক্রমের কোঅর্ডিনেটর রাম বিশ্বকর্মা জানিয়েছেন, প্রথম ট্রায়ালটির ফলাফল বুঝতে ৩৫-৪০ দিনের মতো সময় লাগবে। তাতে আশানুরূপ ফল পেলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হবে। অর্থাৎ মাইকোব্যাকটেরিয়াম-ডব্লিউ ওষুধ হিসেবে কাজ করবে কি না বা কতটা করবে তা যেমন দেখা হবে, প্রতিষেধক হিসেবে তার ভূমিকাও দেখা হবে খতিয়ে।

[৫] ওষুধ ও প্রতিষেধক: মাইকোব্যাকটেরিয়াম-ডব্লিউ
যে কারণটির জন্য মাইকোব্যাকটেরিয়াম ওষুধ এবং প্রতিষেধক দুই হিসেবেই কাজ করার ক্ষমতা রাখে, তা হল ইমিউনোমডিউলেশন। এটি ইমিউনোমডিউলেটরি ড্রাগ। অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সে প্রয়োজনমতো বাড়াতে-কমাতে পারে। ফলে গুরুতর রোগীর শরীরে যখন জীবাণুকে হারানোর চেষ্টায় প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মক বেড়ে যায়, নানা রকম রাসায়নিক হু হু করে বেরিয়ে শরীর জুড়ে বিরূপ প্রভাব ফেলে, যাকে বলে ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’, সেই বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এই ওষুধ কমিয়ে এমন মাত্রায় নিয়ে আসতে পারে যাতে জীবাণুও মরে, সঙ্গে কমে শরীর জুড়ে এই ক্ষতির হার। এই কারণের জন্য গুরুতর কোভিড রোগীর চিকিৎসায় এই ওষুধের ভূমিকা থাকতে পারে বলে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা।

[৬] অন্য দিকে আবার প্রয়োজনে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও পারে সে। ফলে যে সব মানুষের রোগের আশঙ্কা রয়েছে, অথচ রোগ এখনও হয়নি, তাদের শরীরে প্রয়োগ করলে সে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যতটা প্রতিরোধ শক্তি দরকার, ততটার জোগান দিতে পারে। হালকা ও মাঝারি অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রেও তার এই একই কাজ। জীবাণুর পরিমাণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, যাতে রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যেতে না পারে, রোগী সুস্থ হতে পারেন চটপট।

[৭] সত্যিই কি সে এত কিছু করে উঠতে পারবে? ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পান্ডা জানিয়েছেন, কয়েক প্রজাতির ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে এই ওষুধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। কাজেই আশা করা যেতেই পারে যে সে কোভিডের বিরুদ্ধেও কাজ করতে পারবে।

চিকিৎসকদের মতে, যে সব দেশে জন্মের পরই টিবি ঠেকাতে এই ওষুধ ভ্যাকসিন হিসেবে দেওয়া হয় (বিসিজি ভ্যাকসিন) কিছু দেশে। যেমন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্থান, ইথিওপিয়া, ইজিপ্ট, সাউথ কোরিয়া ও সাউথ ইস্টের অন্যান্য দেশ। এই সব দেশে কোভিডের ভয়াবহতা বিসিজি না নেওয়া দেশের তুলনায় অনেক কম। কাজেই রোগ প্রতিরোধ, এমনকি, ওষুধ হিসেবেও মাইকোব্যাকটেরিয়াম-ডব্লিউ-এর ভূমিকা থাকা অসম্ভব কিছু নয়। তবে প্রথম ট্রায়াল শেষ না হওয়া অবধি ঘটনার গতিপ্রকৃতি বোঝা সম্ভব নয়।

[৮] দেশজ ওষুধ মাইকোব্যাকটেরিয়াম-ডব্লিউ
এ ওষুধের আবিষ্কারক গুরশরণ প্রাণ তলোয়ার ভারতীয় জীববিজ্ঞানী। তার নাম ও আমাদের দেশের নাম যুক্ত হয়ে এই ওষুধের নাম ‘মাইকোব্যাকটেরিয়াম ইন্ডিকাস প্রাণীই’ বা সংক্ষেপে ‘এমআইপি’। কুষ্ঠ নিয়ে জেরবার থাকার কালে, সেই ১৯৭০ সালে, জীববিজ্ঞানী তলোয়ার ও তার সতীর্থরা এই জীবাণুর আদ্যোপান্ত বুঝে তাকে কুষ্ঠের প্রতিষেধক হিসেবে গড়ে তোলেন। এর পর সময়ের সঙ্গে যত এই ওষুধের অন্যান্য গুণের খবর প্রকাশ্যে এসেছে, তত সে ব্যবহৃত হয়েছে টিবির প্রতিষেধক হিসেবে, ক্যান্সারের চিকিৎসায়। কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে আজ এই ওষুধের দিকে তাকিয়েও আশায় বুক বাঁধছেন বিজ্ঞানীরা।বিডি-প্রতিদিন,প্রিয়ডটকম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়