শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১১ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১১ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ম্যাক্সিম গোর্কির মা, পার্ল এস বাকের মায়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সত্যিকারের রক্তমাংসের মা হয়ে ওঠা

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি : শহীদ আজাদের মা আজাদকে বলেছিলেন, যখন খুব মারবে তখন দাঁত চেপে সহ্য করবা বাবা, কিন্তু মাথা নোয়াবা না। আজাদ তার মায়ের কাছে ইলিশ মাছভাজা দিয়ে ভাত খেতে চেয়েছিলো, আজাদকে মেরে ফেলার পর তার মা আর সারাজীবন ভাত মুখে দেননি। শহীদ রুমির মা জাহানারা ইমাম বলেছিলেন, দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। আপনি কি এটা পারবেন? আমি জীবনে দুইটা মানুষকে মা ডেকেছি, একজন আমার জন্মদাত্রী, অন্যজন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। আমি নিশ্চিত আমার এই দুই মা দেশে যুদ্ধ লাগলে বলতেন, তুই এখনো ঘরে বসে আছিস কেন? (!) আমার মা আমার নাম রেখেছিলেন বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নামে। রাজশাহীতে গণজাগরণ মঞ্চের সময় যখন আমি নিয়মিত হুমকি পেতাম আমাকে রেপ করা হবে, মেরে ফেলা হবে, তখন আমার মা আমার সঙ্গে মঞ্চের পাশে বসে থাকতেন। আমি নিশ্চিত কোনোভাবে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হলে তিনি সবচেয়ে আগে অস্ত্রের সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সবচেয়ে তীব্র আঘাতটা সবচেয়ে শক্তভাবে সহ্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে রিটায়ারমেন্টের পরে এই মেয়ের বাবা ঠিক করেছিলেন ১৭ বছরের কিশোরী মেয়েটিকে বিয়ে দেবেন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ঘরের ছোটছেলের সঙ্গে। তারপরের জীবন ভয়াবহ স্ট্রাগলের। শহরে বড় হওয়া মেয়েটা ঢেঁকি পাড় দেওয়া থেকে শুরু করে এমন কাজ নেই যা করলো না। বাচ্চার জন্ম, বাচ্চার অসুখ, বাচ্চার পড়াশোনা, গ্রামের কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে উঠে আসা, এক হাতে সংসারের সব কাজ, ৪ সন্তানের জন্ম, কিছুই তাকে আটকাতে পারেনি শিক্ষা আর আদর্শের জায়গা থেকে।
আমি আমার জীবনে সবচেয়ে শক্ত মেরুদ-ের সবচেয়ে নীতিবান যে মানুষটা দেখেছি, তিনি আমার মা। আমার বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, ফলে ঘুষ হিসেবে যা এসেছে তা পরের দুইবেলা কী খাবো তা না জেনেও যাকে দৃঢ়চিত্তে ফেরত দিতে দেখেছি, তিনি আমার মা। আমরা ৪ ভাইবোন যার কাছ থেকে প্রতিটি বর্ণ চিনেছি, যাকে কখনো অন্যায়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে দেখিনি, যাকে মাসের শেষ বাজারের টাকা দিয়ে আমার সাধের বই কিনে দিয়ে বাকি দিন আলুভাজি আর ডাল দিয়ে কাটিয়ে দিতে হবে বলে মধুর হাসতে দেখেছি, তিনি আমার মা। আমি ঋণে বিশ্বাস করি না এবং আমি এও জানি, আমার পক্ষে আমার মায়ের মতো হওয়া সম্ভব নয়। মা তো আসলে একটা বোধ। ম্যাক্সিম গোর্কির মা, পার্ল এস বাকের মায়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সত্যিকারের রক্তমাংসের মা হয়ে উঠা। যখন মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার নারীদের ইন্টারভিউ নিয়েছি, ‘জারজ’ বইটা লেখার সময় যখন চোখ দিয়ে ল্যাপটপের সামনে বসে টপটপ করে পানি ফেলেছি চোখের তখন যে নারী মধ্যরাতে উঠে এসে ঘরের দরজায় মধুর হাসি দিয়ে বলেছেন, এটা শেষ করো, তিনি আমার মা।
রাশিয়ানরা তাদের দেশকে ডাকে ফাদারল্যান্ড বা পিতৃভূমি রাশিয়া। তাই বছর তিনেক আগে যখন আমার এক রাশিয়ান বন্ধু জিজ্ঞেস করেছিলো, তোমরা দেশকে মাদারল্যান্ড ডাকো কেন? তখন আমি তাকে শহীদ আজাদ, শহীদ রুমির মা জাহানারা ইমাম আর আমার অতি সাধারণ মায়ের গল্প বলেছিলাম। সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের কয়েক লাখ বীরাঙ্গনা মায়েদের কথা বলেছিলাম, ধর্ষণের ফলে যাদের যোনি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিলো, যারা বায়োলজিক্যাল মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছিলো, কিন্তু তারা জানতো না তারা আস্ত একটা দেশ জন্ম দিয়ে ফেলেছে। আমি আমার সেই রাশিয়ান বন্ধুকে এসব গল্প শেষে আস্তে করে বলেছিলাম, এসব মায়েদের জন্যই আমরা দেশকে মাতৃভূমি ডাকি, বুঝলে? ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়