মির্জা ইয়াহিয়া : করোনাভাইরাসের কারণে যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো তখন দেশের বেশিরভাগ মানুষ কর্মস্থল ছেড়ে নিজের বাড়ি ফিরে গেলেন। এ সময়ের মধ্যে আবার বোরো ধান কাটার মৌসুম চলে আসে। এবার আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কাও ছিলো। এ অবস্থায় দ্রুত ধান কেটে ফেলার একটা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো। কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতির কারণে ধান কাটার শ্রমিক সংকট তৈরি হয়। শ্রমিক আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ছিলো না। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবায় ধান কাটার জন্য কিছু সংগঠন এগিয়ে আসে। তাতেও কাজের কাজ হয়নি। কিন্তু সব আশঙ্কা দূর করে ঠিক সময়ে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। এর জন্য এবার বড় ভূমিকা রেখেছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। কারণ এর মাধ্যমে দ্রুত ধান কাটা যায়। একটি হার্ভেস্টার ১৫০ জন শ্রমিকের কাজ করে দিতে পারে বলে টিভিতে নিউজ দেখেছি।
এবার হার্ভেস্টার ব্যবহার বাড়ার পেছনে কৃষকদের যেমন আগ্রহ ছিলো। তেমনি প্রশাসনও অনেক এলাকায় হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটতে সহায়তা করেছে। অনেক জনপ্রতিনিধিও নিজ নিজ এলাকার কৃষকদের হার্ভেস্টার উপহার দিয়েছেন। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অনুদানের অংশ হিসেবে হার্ভেস্টার দিয়েছে কৃষকদের। এবার প্রমাণ হলো কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে উৎপাদন খরচও কমে আসবে। কিন্তু হার্ভেস্টারের দাম বেশি হওয়ায় তৃণমূলে এর ব্যবহার বাড়ছে না। দাম কীভাবে কমানো যায়, তা সরকারকে ভাবতে হবে। এছাড়া অনুদানের মাধ্যমে সরকার ও এনজিও কৃষকদের জন্য হার্ভেস্টারের ব্যবস্থা করতে পারে। কৃষি ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এটা ক্রয়ে কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে। তবে হার্ভেস্টার অল্প সময়ে অনেক ধান কাটতে পারে। তাই প্রত্যেক কৃষকের জন্য একটি করে প্রয়োজন তা কিন্তু নয়। একটি বড় এলাকার অনেক জমির ধান একটি হার্ভেস্টার দিয়েই কাটা সম্ভব। তাই এর ব্যবহার কমিউনিটিভিত্তিক করলেই ভালো হবে। এবার কিন্তু এভাবেই হার্ভেস্টার ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে একটি প্রশ্ন অনেকেই তুলতে পারেন। তাহলো হার্ভেস্টারের প্রচলন বাড়লে দিনমজুররা বেকার হয়ে যাবে। যখন নতুন কোনো প্রযুক্তি আসে, তখন এ প্রসঙ্গ চলে আসা যৌক্তিক বিষয়। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে, মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান হয়ে যায়। এবার লকডাউন পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক সংকট বেশি ছিলো। কিন্তু ফসলের মৌসুমে এখন প্রতি বছরই শ্রমিকের সংকট তৈরি হয়। তার মানে মানুষ অন্য কাজে চলে যাচ্ছে। তাই হার্ভেস্টারের প্রচলন বাড়লে কৃষি শ্রমিকরা ঠিকই কর্মসংস্থানের পথ বের করে নেবে। তাই কৃষি ও কৃষকের মঙ্গলের জন্য হার্ভেস্টারের ব্যবহার বাড়বে, এ প্রত্যাশা করছি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :