কবীর চৌধুরী তন্ময় : সম্প্রতি সরকার সার্বিক বিবেচনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ ঘোষণার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। তৎপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাবলি অনুসরণপূর্বক ৭ মে, ২০২০ তারিখ যোহরের ওয়াক্ত থেকে সুস্থ মুসল্লিদের মসজিদে জামায়াতে নামাজ আদায়ের সুযোগ প্রদানের পরামর্শ প্রদান করেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামার সঙ্গে পরামর্শ করে’ মসজিদে জামাতে নামাজের জন্য ১২ দফা শর্ত রাখা হয়েছে। ভালো কথা। আমিও দ্বিমত করছি না। কারণ মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আর বাংলাদেশের ডাক্তার ও গবেষকদের মতামত নিয়ে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাসায় থাকার জন্য। কিন্তু আমাদের একশ্রেণির অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে রীতিমতো পিকনিক করতে বেরিয়ে পড়েছিলো। সরকার ছুটি দিয়ে দেশের মানুষকে বাসায় থাকার কথা বললে এই দেশের একশ্রেণির মানুষ উল্টো লকডাউন কী এটি দেখার জন্য দলবেঁধে বাসা থেকে বের হয়েছে, হচ্ছে। দোকানে-দোকানে আড্ডা দিয়েছে, দিচ্ছে। বাসায় বসে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে আলেম-ওলামাদের পরামর্শে। কিন্তু আমরা কতোজন মেনেছি? বাড়ির ছাদে ছাদে দলবেঁধে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছি। দোকান, হাট-বাজারগুলোতে কোনো রকমের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করেছি। কোনো কাজ ছাড়াই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে অনেকে ড্রামের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে এসেছি।
সরকারি কর্মকর্তারা কঠোর হয়েছেন। অনেককে কানে ধরিয়ে লঘু শাস্তি দেওয়ায় আমরা চিল্লাচিল্লি করে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। করোনাভাইরাসের উপসর্গ লুকিয়ে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, র্যাব সদস্যদেরও আক্রান্ত করেছি। করোনা টেস্টে যখন আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিলো তখন এই আমরাই সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেছি। গুজব ছড়িয়েছি। সরকার মৃত্যের সংখ্যা লুকিয়েছে বলে গালাগাল করেছি। আর এখন ধীরে ধীরে যখন ২৪ ঘণ্টায় হাজারের সংখ্যা পূর্ণ হতে চলেছে, এখন আমরা চুপ। বরং এখন আরও বেশি বাইরে আড্ডা দিতে সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছি। এখন মসজিদ খোলা, খোলা হাট-বাজার আর শপিংমলও। কিছুদিনের মধ্যেই গণপরিবহন যাতায়াত শুরু করবে। সরকার দেশের মানুষের মতামতের উপর শ্রদ্ধাশীল। গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক বিধিবিধান বলে কথা। আপনার কথা আাবার না রাখলে আপনি বলবেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। মতপ্রকাশের উপর সরকার বাধা দিচ্ছে। বাক স্বাধীনতা নেই। আমার মনে হয়, বন্ধ না রেখে আসলে সব কিছু খুলে দেওয়াই উত্তম যা আমরা (অনেকে) চাই। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত, বাসায় থাকলে আপনি বাঁচবেন। আপনার পরিবার রক্ষা পাবে। আর বাইরে পা রাখা মানে মৃত্যুর রাস্তায় নিজেকে তুলে দেওয়া। যেকোনো সময় মৃত্যুর মিছিলে আপনার নামও যুক্ত হতে পারে। চিকিৎসা যেহেতু আপনার হাতে, তাই সিদ্ধান্তও আপনার। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :