তানভীর শুভ : নাইট ডিউটির ধকল সামলিয়ে হোটেলে ফেরার পর বিছনায় গা এলাতেই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। মোবাইলের কর্কশ সুরে কাঁচা ঘুমটা ভাঙতেই ওপাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বর-‘শুভ তোর হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, নিচে নাম’। বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে দ্রুত নিচে নেমে দেখি হোটেলের সামনে সাদা রঙের পাজেরো দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলে যে ব্যক্তি নামলেন তার নামের সঙ্গে বিশেষণ লাগাতে গেলে এই লেখা শেষ হবে না। তার উল্লেখযোগ্য কিছু পরিচিতি হলো তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সর্বকনিষ্ঠ তরুণ সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিয়াক সার্জন সোসাইটি অফ বাংলাদেশের সেক্রেটারি, সর্বপ্রথম মিনিমাল ইনভেসিভ পদ্ধতিতে হার্টের অপারেশন তার হাতেই এ দেশে সাফল্যের মুখ দেখে। এ সব অফিসিয়াল পদ-পদবি কিংবা সাফল্যের বাইরে তিনি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের সব তরুণ ডাক্তারদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন তার মানবিক গুণাবলীর কারণে। ছবিতে মাস্ক গগলসে মুখ ঢাকা এই ব্যক্তিটিই আমাদের সবার প্রিয় আশরাফ সিয়াম ভাই। আমার হাতে একটা প্লাস্টিকের পোটলা ধরিয়ে দিয়ে বললো এগুলো তোর জন্য আনছি। সাবধানে থাকিস। হাতের পোটলার দিকে তাকাতেই বিস্ময়ে কোটর ছিঁড়ে চোখ বের হওয়ার উপক্রম, ভেতর থরে থরে সাজানো অনেকগুলো এন-৯৫ মাস্ক। দুর্দিনের এই সময়ে টাকা ঢাললে হয়তো বাঘের দুধ পাওয়া যাবে, কিন্তু এন-৯৫ মাস্ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অনেক খুঁজে যদিওবা কিছু এন-৯৫ মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে সেটার মাঝে অধিকাংশই নকল।
করোনা এ দেশে এসে মানুষের ভেতরকার প্রকৃত পরিচয়টা তুলে ধরছে। গাজীপুরের বনে মাকে ফেলে যাওয়া পুত্র, করোনাতে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন না করতে দেওয়া জনগণ, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া বাড়িওয়ালা কিংবা সিঁড়িতে পড়ে থাকা নারায়ণগঞ্জের খোকন সাহার লাশ যখন আমাদের হতাশার সাগরে নিমজ্জিত করে তখন সিয়াম ভাইয়ের মতো কিছু মানুষের নির্মোহ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমাদের আশার আলো দেখায়। খুব কাছের এক ইএনটি বিশেষজ্ঞ বড় ভাইয়ের আপন চাচাতো ভাই ভোরে কুর্মিটোলার আইসিইউতে মারা যান। দীর্ঘদিন জ্বরে ভোগার পরও তিনি টেস্ট করাননি, যার ফলশ্রুতিতে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর যখন হাসপাতালে আনা হয় ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সাদা এপ্রোন, সাদা মাস্ক আর সাদা পিপিইতে আচ্ছাদিত হয়ে দীর্ঘ করোনাযুদ্ধ সমাপ্তির পর শান্তির সাদা পতাকা উড়ানোর স্বপ্ন নিয়েই আমাদের অজানার পথে ছুটে চলা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :