শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ০৯ মে, ২০২০, ০৫:৫৩ সকাল
আপডেট : ০৯ মে, ২০২০, ০৫:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] কোথাও কেউ নাই ৯৫ বয়সী ইশারনের

মাহমুদুল আলম : [২] মরতে চান স্বামীর ভিটাতেই

[৩] ইশারন নেছার নিজের চার মেয়ের কেউই তাকে রাখতে চান না। সৎ ছেলে তো রাখতে চানই না। সবার কাছেই এখন বোঝা তিনি। কেউ তার কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছে না এমনকি তার কোনো সন্তানই তাকে আর রাখতে বা দায়িত্ব নিতে চান না। কোথাও কোনো আশ্রয় বা ঠাঁই না পাওয়ায় নিরুপায় হয়ে তিনি জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর উত্তরা বাজারের এক দোকানের সামনে বসে বসে কাঁদছেন। জানা গেছে, ৯৫ বয়সী বৃদ্ধার বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে। তিনি ওই এলাকার মৃত মজত আলীর স্ত্রী। তিনি ৫ সন্তানের জননী, তাদের মধ্যে বড় মেয়ে মারা গেলেও বাকি ৪ মেয়েকে তিনি বিয়ে দিয়েছেন মির্জাপুর এলাকায়। তাছাড়া তার সৎ ছেলেও আছে বলে জানা গেছে। আরটিভির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

[৪] স্থানীয়রা জানায়, মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ইশারন নেছার স্বামী মারা যাবার পর তিনি তার স্বামীর বাড়িতে থাকতেন। ৪ মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর তিনি সৎ ছেলেদের একজনের কাছে থাকতেন আর তিনি তার দেখভাল করতেন। কিন্তু সেই ছেলে হঠাৎ করে মারা যায় পরে বৃদ্ধা তার সব বিক্রি করে একই ইউনিয়নের পাখোরতোল এলাকায় সেজো মেয়ে আজিমা বেগমের বাড়িতে উঠেন এবং ১৫-১৬ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে তিনি সেখানেই থাকতেন।

[৫] গত এক মাস আগে বৃদ্ধা ইশারন নেছা তার অন্য মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে হঠাৎ পিছলে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পান। তারপর থেকে তিনি আর হাটতে পারেন না। এই অবস্থায় মাকে টানতে না পেরে মেয়ে আজিমা তার মেয়েকে সৎ ভাইয়ের বাড়িতে রেখে আসলে তার সৎ ভাই বৃদ্ধার দেখাশোনার পর বোন আজিমার বাড়িতে রেখে আসলে আজিমা আবার কয়েকদিন পর তার ভাইয়ের বাড়িতে রেখে আসেন তার মাকে।

[৬] এভাবে একপর্যায়ে তারা তাদের মাকে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বুধবার সন্ধ্যায় রেখে চলে যান। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা রাতেই বৃদ্ধার মেয়ে আজিমার বাড়িতে দিয়ে আসলে পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার আজিমা তার বৃদ্ধা মাকে মির্জাপুর উত্তরা বাজারের একটি দোকানের সামনে রেখে চলে যান।

[৭] বৃদ্ধার সৎ ছেলে জহিরুল ইসলাম জানান, আমি খুবই দরিদ্র মানুষ। তারপরও এক মাস আমার বাড়িতে রেখেছিলাম কিন্তু তিনি বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করেন। আমার স্ত্রীও অসুস্থ তাই তাকে দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আমার বোন আজিমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। এখন তার আপন মেয়েই তাকে রাখতে চান না।

[৮] অন্যদিকে বৃদ্ধার আপন মেয়ে আজিমা বেগম জানান, আমি নিজেই অসুস্থ তাই মায়ের পরিচর্যা করতে পারি না। মা বিছানায় পস্রাব পায়খানা করেন, তিনি হাটা-চলা করতে পারেন না। তাছাড়া মাকে রাখার মতো আমার বাড়িতে কোনো ঘর নাই। তাই তাকে দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করছি। তাই সৎ ভাইয়ের কাছে রেখে এসেছিলাম।

[৯] বৃদ্ধা ইশারন নেছা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার আজ কেউ নেই, আমার আপন মেয়ে ও সৎ ছেলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমাকে আপনারা আমার স্বামীর বাড়িতে একটা ঘর তুলে দেন। আমি সেখানেই যেন মরতে পারি। সবাই আমার মেয়ে আজিমার বাড়িতে রেখে আসলে আমার মেয়ে আবার আমাকে এখানে রেখে চলে যায়।

[১০] এ বিষয়ে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর আলী জানান, বৃদ্ধা ইশারন তার সবকিছু বিক্রি করে তার আপন মেয়ে আজিমার বাড়িতে ওঠেন এমনকি সারাদিন ভিক্ষা করে যা পেতেন তা সব তার মেয়েকে দিতেন। পায়ে আঘাত পাওয়ায় তিনি আর ভিক্ষা করতে না পারায় এখন আর তার মেয়ে তাকে রাখতে চান না তার বাড়িতে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো একটা ব্যবস্থা করতে পারবো কিন্তু দেখভালের দায়িত্ব তার সন্তানদের নিতে হবে। আমরা তার সন্তানদের সাথে বসে আলোচনা করে দেখব কী করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়