শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ০৯ মে, ২০২০, ০৬:৩৮ সকাল
আপডেট : ০৯ মে, ২০২০, ০৬:৩৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনা পরিস্থিতিতে কমেছে অপরাধ : মন্দাতেও শক্তিশালী দেশের অর্থনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট : করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশেই খুন-রাহাজানি ও অন্যান্য অপরাধ কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি অন্যান্য মাসের তুলনায় কমে এসেছে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। দীর্ঘ বন্ধে পড়ল দেশ, সেই ক্ষেত্রে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তবে সব কিছু চিন্তা করে মাঠ পর্যায়ে সার্বিক প্রস্তুতি রেখেই কাজ করে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। করোনা সমস্যা সমাধান ও প্রস্তুতি নিয়ে আগেই কয়েক দফা বৈঠক করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে, অর্থনীতিবিদরাও মনে করছেন যে, যদি বাংলাদেশে দূর্নীতি না হয়, সুশাসন নিশ্চিত হয়- তাহলে করোনা মোকাবেলায় যে পদক্ষেপগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেছে তাঁর সুফল বাংলাদেশ ভোগ করবে। দেখা যাক কোন কোন ক্ষেত্রে মন্দা মোকাবেলায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে-

১. খাদ্য নিরাপত্তা

বাংলাদেশ করোনার সংক্রমণের শুরু থেকেই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন এবং গরীব মানুষজন যেন খাবার পায় তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের নিম্নবিত্ত মানুষদের যেমন বিনামূল্যে খাবার নিশ্চিতের যেমন ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনি নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বল্প মূল্যে খাবার পৌঁছে দেওয়ারও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগের ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও এর সুফল একদম চুইয়ে পড়া মানুষরা ভোগ করছেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশের জন্য সুখবর হলো এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে এই ধান কাটার নিশ্চিত করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত বোরো ধানের প্রায় ৯৫ ভাগ কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে একটি বড় ধরণের সুযোগ করে দিবে।

২. পোশাক খাতে নতুন বাজার

করোনার কারণে বিশ্ব পোশাক বাজারে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। এখন চীন এবং ভারতের পোশাক খাতে প্রায় ধ্বস নেমেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ঝুঁকি নিয়েও পোশাক কারখানাগুলো চালু করেছে। এটা ব্যাপক সমালোচিত হলেও পোশাকের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতামূলক বাজারে ইতিবাচক হিসেবেই দৃশ্যমান হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ পোশাক খাতের নেতৃত্ব দিবে এবং বাংলাদেশে যেহেতু পোশাক কারখানাগুলো চালু রয়েছে, তাই বিশ্বের সব অর্ডারগুলো বেশি বেশি করে আসবে। এর ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত বিশ্বে প্রথম স্থানও দখল করে নিতে পারে বলে মনে করছেন কোন কোন অর্থনীতিবিদ।

৩. বিশ্বে রপ্তানি বাড়বে

শুধু পোশাক খাত নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের রপ্তানির সুযোগ তৈরি করবে করোনাভাইরাস। কারণ এর ফলে অর্থনীতিতে যে টালমাটাল অবস্থা থাকবে, তাতে অনেক দেশই তাঁদের নিজস্ব কলকারখানায় উৎপাদনের চেয়ে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে এবং কম মূল্যে যে সমস্ত জিনিস তৈরি হয়, সে সমস্ত জিনিসপত্রের দিকে ঝুঁকবে। ফলে বাংলাদেশে ওষুধ, চামড়াশিল্প সহ নানা রপ্তানি পণ্যের চাহিদা বাড়বে এবং দেশের রপ্তানি বাজার বড় হবে।

৪. দেশীয় বাজার শক্তিশালী হবে

করোনার পরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের একটি বড় চাহিদা তৈরি হবে। কারণ যেহেতু সরকারের অর্থনৈতিক প্রণোদনাগুলো প্রায় সবস্তরের মানুষের মাঝে পড়েছে, এই প্রণোদনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো বাংলাদেশের বাজারে ব্যাপকভাবে চাহিদা তৈরি করবে। সেক্ষেত্রে যদি আংশিকভাবে সফল হলেও বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক বাজার তৈরি হবে। যেটা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং মজবুত করবে।

৫. নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে

করোনা সঙ্কটের কালে অনেকে চাকরি হারাবে, অনেকে বেকার হবে। এইসময় মানুষের নিজস্ব উদ্ভাবনী এবং উদ্যমী শক্তিতে তাঁরা নিজেরাই উদ্যোক্তা হওবার চেষ্টা করবেন এবং করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রচুর উদ্যোক্তা তৈরি হবে।

আর এইসমস্ত কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে করোনা বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে এসেছে এবং অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন যে বাংলাদেশে মন্দা হবেনা, বরং করোনা পরবর্তী বিশ্বে বাংলাদেশ আরো শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

রাজধানীর থানাগুলো পরিদর্শন করে দেখা যায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় খুন-রাহাজানির মতো বড় অপরাধগুলো কমে এসছে। দু-একটি চুরি ছিনতাই ছাড়া বড় ধরনের তেমন কোনো অপরাধ ঘটেনি। ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ২১টি করে খুনের ঘটনা ঘটলেও মার্চে ১৭টি ও এপ্রিলে ৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া ২০১৯ সালে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল ১৭৬টি।

মাসে গড়ে ১৪টির বেশি ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটে। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২১, ১৬ ও ১৬টি করে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটে। এপ্রিলে এই সংখ্যা কমে ৬টিতে এসেছে। কমেছে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যথাক্রমে ১৭২, ১৯৪ ও ১৮৭টি ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা কমে এসেছে ৪৯ এ। বিগত বছরে অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল ৯৮টি। এই বছরে প্রথম তিন মাসে এই সংখ্যা ১২টি। আর এপ্রিল মাসে অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানা গেছে। গত তিন মাসে রাজধানীর সবগুলো থানা মিলে মাসে গড়ে মামলা হয়েছে ২ হাজার ২০০টি করে। সেখানে এপ্রিল মাসে মামলা রেকর্ড হয়েছে ৩৪৯টি। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে মাসে গড়ে ১৮৪টি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। বছর শেষে চুরিসহ মামলার রেকর্ড ছিল ২ হাজার ২১১টি। ওই হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২০৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৮৭টি, মার্চে ১৫৯টি চুরির মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস চুরির ঘটনা বাড়লেও এপ্রিলে এসে ১৯টি গৃহে চুরির ঘটনা ও ২৭টি অন্যান্য চুরির ঘটনা ঘটেছে।

পুুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান উদ্ধারের ঘটনায় মোট ১৭ হাজার ১৬৬টি মামলা হয়েছিল। সেই হিসেবে মাসে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মামলা হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা কমে এসেছে প্রায় দশ ভাগের এক ভাগে।

তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক শ্রেণীর অপরাধী রয়েছে যারা সমাজে সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ভায়োলেন্স তৈরি করে সমাজকে অস্থিতিশীল করে রাখাই তাদের কাজ। প্রতিটি দেশেই করোনার ন্যায় জরুরি ক্রাইসিস মুহূর্তে অপরাধ কম হয়ে থাকে। তার মানে অপরাধীরা বসে থাকবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে দীর্ঘ লকডাউনে অপরাধ বাড়তে পারে বলে মত প্রকাশ করেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউর রহমান বলেন, লকডাউনের ফলে অবশ্যই অপরাধ কমে যায়। তবে এক শ্রেণির অপরাধী আছে যারা বিশেষ করে চুরি ডাকাতির সঙ্গে জড়িত তারা সুযোগ ফেলেই এই ধরনের অপরাধে জড়িত হবেই। তারপরও লকডাউনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও নজরদারি বেশি থাকার কারণে বড় ধরনের তেমন কোনো অপরাধ ঘটে না। তাছাড়া মানুষের দীর্ঘ সময়ে ঘরে আবদ্ধ থাকার কারণে পারিবারিক ভায়োল্যান্সেরও সৃষ্টি হতে পারে। দীর্ঘ লকডাউনে হলে সেই ক্ষেত্রে অপরাধ বেড়ে যেতে পারে। তবে বড় ধরনের অপরাধ যাতে না ঘটে সেই ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াকেও নজরদারির আওতায় রাখার পরামর্শ দেন এ বিশেষজ্ঞ।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউনের ফলে অপরাধ কমেছে সেই ক্ষেত্রে মামলাও কমেছে। তারপরও পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, বিশ্বের সব দেশেই বিশেষ ক্রাইসিস মুহূর্তে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে চুরি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাগুলো। করোনার মতো মহামারির প্রাদুর্ভাবের আগেই বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছেন কীভাবে এই মহামারি থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং কীভাবে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যায়।

সেই সব দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এখনো। তবে দীর্ঘ লকডাউনে ছোট ছোট অপরাধ বাড়তে পারে বলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি অপরাধ যাতে না বৃদ্ধি পায় সেই বিষয়ে প্রতিটি জেলায় দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তাছাড়া চলমান অভিযানগুলো যেন স্বাভাবিক সময়ের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগিয়ে যায় এই নির্দেশনাও দেওয়া আছে।

সূত্র- খোলা কাগজ ও বাংলা ইনসাইডার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়