শিরোনাম
◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি ◈ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে: সিইসি ◈ ভারতের রপ্তানি করা খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পেয়েছে ইইউ ◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের স্বাক্ষর

প্রকাশিত : ০৭ মে, ২০২০, ০৪:৩৬ সকাল
আপডেট : ০৭ মে, ২০২০, ০৪:৩৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডানা কাটা পড়ছে এয়ারলাইন্সের

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস শুধু লাখ লাখ মানুষের প্রাণই কেড়ে নিচ্ছে না, বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিটি খাত পর্যন্ত নাস্তানাবুদ করে ফেলছে। বিশেষ করে সারা বিশ্বের এয়ারলাইন্স ব্যবসা তথা অ্যাভিয়েশন খাতকে একেবারে খাদের কিনারে ছুড়ে ফেলেছে এ মহামারী। এমতাবস্থায় দেশের এয়ারলাইন্সগুলোও কঠিন সময় পার করছে। করোনার মারাত্মক ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের প্রণোদনাসহ বিশেষ সহযোগিতা চাইছে। অন্যথা দেশের এয়ারলাইন্স ব্যবসার ডানা ভেঙে পড়বে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশে এয়ারলাইন্স ব্যবসায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ছাড়াও বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা, নভো এয়ার ও রিজেন্ট সক্রিয়। সব কটি প্রতিষ্ঠানই কঠিনতম সময় পার করছে। যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকার ফলে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ তার কর্মীদের ৩ মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ বিমান প্রথমে কর্মীদের ওভারটাইম বন্ধ করেও খরচের ভারসাম্য সামলাতে না পেরে সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

বিমানের বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের সরকারিভাবে প্রণোদনাসহ বিশেষ সহযোগিতা দরকার। দেশের অ্যাভিয়েশন খাত কোথায় ঠেকে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সংশ্লিষ্টরা।

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে চারটি সংস্থাকেই। করোনাযুদ্ধে টিকে থাকতে তিনটি বেসরকারি সংস্থাকে তিন বছরের জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশন চার্জ মওকুফ, নীতি সহায়তা এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রণোদনার অর্থ দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও (বেবিচক) প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো চিঠিতে এমন অনুরোধ করা হয়েছে।

বিমান সংস্থাগুলোর মতে, ফাইট অপারেশন বন্ধ থাকলেও কর্মী বাহিনীর বেতন, লিজে আনা উড়োজাহাজের ব্যয়, ঋণের কিস্তি, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ সবই বহন করতে হচ্ছে। বরং বসিয়ে রাখা উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অ্যাভিয়েশন খাত মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। বাংলাদেশ বিমান নিজের খরচে চলে। সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি রাজস্ব আয় করে। অথচ প্রতিষ্ঠান দুটির উপার্জন বন্ধ। অথচ নিয়মিত খরচ তো রয়েছেই। এর বাইরে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর অবস্থাও খারাপ। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো তাদের কর্মীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই কীভাবে অ্যাভিয়েশন খাতকে এগিয়ে নেওয়া যায় এবং করোনা পরিস্থিতির পর স্বাভাবিক হয়ে আসে সব কিছু তা-ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দেশের বিমান পরিবহন খাতের ৭০ শতাংশই বিদেশি বিমান সংস্থার দখলে। বাকি ৩০ শতাংশ দেশীয় এয়ারলাইন্সের দখলে যাদের বছরে প্রায় আট হাজার ৪০০ কোটি টাকার বাজার রয়েছে। স্থানীয় বিমান সংস্থা টিকে না থাকলে দেশের অ্যাভিয়েশন খাত বিদেশিদের হাতে চলে যেতে পারে।

জানা গেছে, করোনা প্রকোপের পর বাংলাদেশ বিমান প্রথমে ১০ ভাগ বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। সংস্থাটির বর্তমান জনবল ৫ হাজার ১৯৭। এ বিপুল কর্মী বাহিনীর বেতন পরিশোধই একমাত্র খরচ নয়। এর বাইরে রয়েছে লিজে আনা উড়োজাহাজের ব্যয়, ঋণের কিস্তি, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। সব মিলে মাসে গুনতে হচ্ছে ন্যূনতম ৬২৮ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও লোকসান আছে। করোনার কারণে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া বাবদ গুনতে হচ্ছে ২৪০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ রকম নানা কারণে খরচ সামলাতে না পেরে দেড় হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা চায় সরকারের কাছে। এর জবাবেই পাওয়া গেছে সোনালী ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ।

প্রসঙ্গত, বিমান চলাচল স্থগিত থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নামিদামি বিমান সংস্থাকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা ছাড় ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, কেবল জনবলের বেতন নয়, উড়োজাহাজ কেনার ফিক্সড লোন, লিজের খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং টিকিট ফেরত বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে।

বিমানের তথ্যমতে, বহরে ১৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে নিজস্ব অর্থে কেনা উড়োজাহাজ রয়েছে মোট ১২টি। বাকি ছয়টি উড়োজাহাজের মধ্যে চারটি ৭৩৭-৮০০ ও দুটি ড্যাশ-৮ লিজে আনা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে ফাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উড়োজাহাজের সবগুলোই বসে আছে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে। করোনা ভাইরাসের কারণে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়া ও ফ্লাইট বন্ধ।

কিন্তু বহরের ১৮টি বিমান রক্ষণাবেক্ষণেই প্রতিমাসে ব্যয় করতে হচ্ছে ২৬৬ কোটি টাকা। বসিয়ে রাখার জন্য উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আরও বাড়ছে। এ ছাড়া লিজ ও ঋণের জন্য মোট ১৭০ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে প্রতি মাসে। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত লোকসান ৫শ কোটি টাকার বেশি। জানুয়ারিতে ২৮ শতাংশ ক্যাপাসিটি লস, ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ শতাংশ, মার্চে ৭৮ শতাংশ। এপ্রিলে ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ। এখন বিমানের খরচ চালানোর জন্য মাসে দরকার ৬২৮ কোটি টাকা।

বেসরকারি বিমান সংস্থার মধ্যে ইউএস-বাংলার বহরে আছে সবচেয়ে বেশি ১৩টি উড়োজাহাজ। আর নভো এয়ারে সাতটি এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজে আছে ছয়টি। বেসরকারি খাতে ইউএস-বাংলা সব অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি সাতটি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করে। টিকিট বিক্রির আয় না থাকলেও ব্যাংকের কিস্তি, উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন কর, সিভিল অ্যাভিয়েশনের নানা চার্জ, বিদেশে সাতটি কার্যালয় পরিচালনার খরচ, পাইলট, ইঞ্জিনিয়ারসহ কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলোকে।

গত এপ্রিল পর্যন্ত ইউএস বাংলার ক্ষতি হয়েছে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির শিকার। তাই তারা কিছু সুবিধা চাইছে সরকারের কাছে। বলছেÑ সিঙ্গাপুর, ভারত, চীনের আদলে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দরকার।

অ্যাভিয়েশন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশের অফিস ভাড়া, কর্মীদের বেতন, এয়ারপোর্ট চার্জ গুনতে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বেবিচকের চার্জ দিতে হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে আগামী তিন বছরের জন্য সব বিমান ও হেলিকপ্টারের যাবতীয় নেভিগেশন, ল্যান্ডিং ও পার্কিং চার্জ মওকুফ করা; প্রণোদনাস্বরূপ অ্যাভিয়েশন শিল্পকে আগামী ১০ বছরের জন্য বিবিধ আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান; যন্ত্রাংশ আমদানি পর্যায়ে ‘আগাম কর’ অব্যাহতি, বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে লেট ফি অন্যান্য দেশের মতো বার্ষিক ৬-৮ শতাংশ হারে ধার্য করার দাবি জানাচ্ছি। আন্তর্জাতিক বাজারে জেট ফুয়েলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড় চাইছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো।

এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে সিঙ্গাপুর বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য ৫০ শতাংশ চার্জ মওকুফ করেছে। সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্ট স্পেস ভাড়াও মওকুফ করে দিয়েছে। ভারত বিমান সংস্থাগুলোকে বাঁচাতে ১১ হাজার ৯০০ কোটি রুপির প্যাকেজ করছে। চীন আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এয়ারলাইন্সগুলোকে অর্থ সহায়তা, অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের চার্জ থেকে অব্যাহতি, অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থাগুলোর জন্য জেট ফুয়েলের দাম হ্রাস করেছে। আর অ্যাভিয়েশন খাতের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলারের ‘রেসকিউ প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়