ডেস্ক রিপোর্ট : [২] ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে অবস্থানের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসা হেফজত ইসলাম এখন কার্যক্রমহীন। অন্যদিকে হেফাজত কর্মীদের নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা ৮৩ মামলার কোনও অগ্রগতি নেই। সংগঠনটির আমির শাহ আহমদ শফীসহ শীর্ষ কয়েকজন নেতা বিবৃতি দিয়ে মাঝে মাঝে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেন। তবে সেই বির্তকিত ১৩ দফা দাবিতে সক্রিয় অবস্থানে আর নেই হেফাজতে ইসলাম।
[৩] আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হয়েছিল। আর হেফাজতের দাবি, শুধু শাপলা চত্বরেই নিহত হয়েছিল শতাধিক। এরপর বিভিন্ন সময় হেফাজত নিজেই নিহতদের তালিকা প্রকাশের কথা বললেও গত ৭ বছরে তারা তা করেনি। ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করাসহ ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসলেও এরপর আর এ দাবিতে মাঠে নামতে পারেনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। বরং দিন দিন কার্যক্রম কমছে এ সংগঠনটি।
[৪]হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী (ফাইল ছবি)
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে লিখিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। ৪ মে লালবাগ জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ওই রূদ্ধদ্বার বৈঠকটি করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যে কোনও মূল্যে ঢাকা ঘেরাও করা হবে এবং অবরোধ পরবর্তী সমাবেশ শেষে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ৫ মের ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচির রূপরেখা ঠিক করতে ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বৈঠকে ১১ সদস্যের একটি উপ-কমিটি করা হয়। মাওলানা নূর হোছাইন কাসেমীর নেতৃত্বে রূপরেখা নির্ধারণের সেই উপ-কমিটিতে জুনায়েদ আল হাবিব, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান প্রমুখ ছিলেন।
[৫]২০১৩ সালের সেই শাপলা চত্বর ছাড়ার পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে হেফাজতের কার্যক্রম। ২০১৫ সালের শেষে দিক থেকে আবারও আলোচনায় আসতে শুরু করে সংগঠনটি। পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন, সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপন করা থেমিসের ভাস্কর্য সরানোর এবং সবশেষ কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে আলোচনায় থাকে হেফাজত। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকও করেন হেফাজত নেতারা। কওমি মাদ্রাসাগুলোর সনদের স্বীকৃতি আদায় এ যাবত সংগঠনটির সর্বোচ্চ অর্জন। আহমদ শফীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ঢাকা মহানগর ও জেলা পর্যায়ে সংগঠনটির কমিটিও রয়েছে। তবে এরপর মাঠের কর্মসূচিতে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি এ সংগঠনকে। বরং কোনও কোনও সময় সংগঠনটির কয়েকজন নেতা ব্যক্তি উদ্যোগে বিবৃতি দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এদিকে, হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বদানকারী বয়সের ভারে ন্যুব্জ আল্লামা আহমেদ শফী গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
[৬] বিগত বছরগুলোতে এ দিনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন থাকলেও এবার এমন কোনও উদ্যোগ নেয়নি হেফাজত। এর কারণ করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের ঘরে থাকার নির্দেশ নাকি সংগঠনটির নেতা আল্লামা আহমদ শফীর অসুস্থতা তাও জানায়নি সংগঠনটি। তবে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ৫ মে শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে যৌথবাহিনী নিরীহ-অভুক্ত লাখ লাখ আলেম ও জনতার ওপর নির্বিচার গণহত্যা চালিয়ে ইতিহাসে এক নতুন কারবালা সৃষ্টি করেছিল। এই রক্তপাত ও গণহত্যা গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু শত চেষ্টা হলেও শাপলা চত্বরের শহীদদের রক্তের দাগ ইতিহাস থেকে মোছা যাবে না। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে বাংলাদেশের আগামীর সুন্দর ইতিহাস বিনির্মাণ হবে না। তবে এই বিবৃতিতেও নিহতদের সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি।
[৭]হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, হেফাজত তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলছে। দাবি-দাওয়া আদায়ে কিছু কৌশল থাকে, প্রয়োজনে মাঠে থাকতে হয়। আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজত তার কৌশলে এগিয়ে চলছে। দৃশ্যমান পদক্ষেপ আছে কী নাই, তা দিয়ে বিবেচনা করে মূল্যায়ন করা সঠিক হবে না।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন
আপনার মতামত লিখুন :