শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ০৫ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ০৫ মে, ২০২০, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল : নিজভূমে অনুপ্রবেশকারী

মাসকাওয়াথ আহসান : ১০ মার্চ পুরান ঢাকা থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল। ৫৪ দিন পর ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্তে বিজিবি তাকে আটক করেছে। করোনা তখন জনপদে ঢুকে পড়েছে, করোনাভাইরাসের জীবনের শুল্ক নেওয়ার আশঙ্কায় মানুষ তখন ভীত। অথচ নিজভূমের গুম কারিগরদের গুমের নেশা থেমে নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের কোনো পদক্ষেপের সমালোচনা করলে কিংবা সরকারের কোনো নীতি নির্ধারকের সমালোচনা করলে তাকে ভিন্নমতের ‘ডিবিপি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গুম কারিগরদের নির্দেশ দেওয়া হয়, এই ডিবিপি হান্ট করার জন্য। সরকার যেন ইউরোপের মধ্যযুগের চার্চ, যে চার্চের বিরুদ্ধাচরণ করলেই তাকে যাজকেরা ডিবিপি বলে ফতোয়া দেয়। অমনি গুমের কারিগরেরা বেরিয়ে পড়ে ডিবিপি হান্টিংয়ে। কাজল বাংলাদেশের প্রায় সমান বয়েসি একজন সাংবাদিক, আলোকচিত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাজল নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময়ের সেইসব তরুণদের মধ্যে একজন, যারা স্বপ্ন দেখেছিলো স্বৈরশাসনের শেকড় উপড়ে, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের সভ্যতাযাত্রা শুরু করবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের প্রধান সূচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মানসেই মানুষ সাংবাদিকতার পেশায় যোগ দেয়। কাজল তার সেই স্বপ্নযাত্রায় প্রতারিত হলেন, সমাজ-রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের দ্বারাই, যারা কালের বিবর্তনে আর ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়’ বিশ্বাস করেন না। আদিম বঙ্গে জমিদারেরা লাখপতি হলে লাখবাতি জ্বেলে জানান দিতো তারা বিরাট ধনী ও প্রভাবশালী হয়েছে। এই সাফল্য উদযাপনে তারা বাইজি এনে নাচাতো। গ্রামের কোনো প্রতিবাদী মানুষ কৃষকের দেওয়া করের টাকায় বাইজি নাচানোর প্রতিবাদ জানালে, জমিদার তার লেঠেল বাহিনী পাঠাতো প্রতিবাদী লোকটিকে শায়েস্তা করতে। হয় প্রতিবাদীর লাশ নদীতে ভেসে উঠতো কিংবা তাকে গ্রামের সীমানা পার করে রেখে আসতো লেঠেলরা। শাসিয়ে দিতো, আর যদি এ গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করিস, জান হারাবি।
২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নব্যধনীদের পাপিয়া বিলাসে’র সমালোচনা করে সাংবাদিক কাজল আওয়ামী লীগের নব্য জমিদারদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। তাকে মামলার দড়ি দিয়ে আদালতে টেনে আনার আয়োজন করে, একজন প্রভাবশালী। পার্টি ইন পাওয়ার ভাইরাস করোনা ভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী হওয়ায় কাজল গুম হয়ে যান। কাজলের পরিবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অনিশ্চিত জীবনের নৌকায় চড়ে বেদনার সাগর পাড়ি দিয়েছে। কাজলের ছেলের কান্নার শব্দ অক্ষর হয়ে ঝরে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কাজলের শুভাকাক্সক্ষীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজলের ছবি দিয়ে পার্টি ইন পাওয়ারকে মনে করিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে, কাজল তো সেই নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ‘অনির্বাণ’। সেই অনির্বাণকে ‘পার্টি ইন পাওয়ারেরা’ ভুলেই গেছে। ৫৪ দিন কাজল নিখোঁজ ছিলো, নিজভূমের গুমের নৃশংস থিয়েটারটি কতকটা প্রাচীন রোমের সেই কলোসিয়ামের মতো, যেখানে গ্যালারিতে বসে রাজন্যবর্গ ও তাদের সহমত ভাইয়েরা নৃশংস মানুষ হত্যার বিনোদন নেয়, কেউ মৃত্যুকূপ থেকে বেঁচে বের হলে তাকে মৃত মানুষের মাথার খুলির মালা পরিয়ে দেয়। গুম কারিগরদের গুমের চিত্রনাট্য খুব একঘেঁয়ে। সেই মধ্যযুগে জমিদারের লেঠেলেরা প্রতিবাদী কৃষককে গ্রামের ত্রিসীমানায় পৌঁছে দেওয়া চিত্রনাট্যের অস্থিধারণ করেই যেন কাজলের ফিরে আসার গল্পটি রচিত। ৫৪ দিন পর ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্তে বিজিবি তাকে আটক করেছে, এমন খবর আসে। কাজলকে গ্রেপ্তার করে হাতকড়া লাগিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়, আসামি কাজলকে দেখে নিরাপরাধ লাগে, আর তাকে যারা হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের দেখে আসামির মতো লাগে। আন্তর্জাতিক মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে, নিজভূমে অনুপ্রবেশকারী হাতকড়া পরা সাংবাদিক কাজলের ছবি দেখে মনে হয়, সে যেন বাংলাদেশের প্রতীকী ও প্রতিভূ একটি চরিত্র। ঠিক এভাবে বেঁচে আছে বাংলাদেশ। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়