শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ০৩ মে, ২০২০, ০৬:০৪ সকাল
আপডেট : ০৩ মে, ২০২০, ০৬:০৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ক্ষতিতে সবজি চাষিরা

ইত্তেফাক : সবজি হিসেবে করলার কদর সব সময়। শুধু তাই নয়, দামের দিক দিয়েও এগিয়ে থাকে করলা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এই দামি সবজি এখন পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের হাটবাজার ও মোকামগুলোতে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ টাকা কেজিতে। শুধু করলা নয়, অন্যান্য সবজিরও একই অবস্থা। মোকামগুলোতে ক্রেতা নেই। আর ক্রেতা না থাকায় দামও নেই। এ অবস্থায় অনেক কৃষক খেত থেকে সবজি তুলছেন না। কারণ শ্রমিকের মজুরি ও হাটে নিতে যে খরচ, তা সবজি বেঁচে উঠছে না। সব মিলিয়ে বড়ো ক্ষতিতে পড়েছেন সবজিচাষিরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে আমাদের জন্য বড়ো বিপদ অপেক্ষা করছে। এমনিতেই করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা ছুটি চলছে। শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে যদি কৃষকেরাও মার খান, তবে এবার তারা উঠে দাঁড়াতে পারবেন না।

নরসিংদী প্রতিনিধি নিবারণ রায় ও শিবপুর সংবাদদাতা আনোয়ার হোসেন স্বপন জানান, করোনার কারণে বাইরে থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবজিপ্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত নরসিংদীর শিবপুর বাজারে আসতে পারছেন না। এ কারণে চাষিরা উত্পাদিত সবজি বাজারজাত করতে পারছেন না। কোনো কোনো কৃষক কষ্ট করে বাজারে সবজি নিয়ে এলেও তা বিক্রি করে রিকশাভ্যানের ভাড়াও ওঠাতে পারছেন না।

এই উপজেলা থেকে প্রতিদিন বেগুন, করলা, শসা, শিম, লাউ, কচু, পটোল, জালি কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শ, কাঁচা মরিচ, টম্যাটোসহ নানা সবজি স্থানীয় বাজারে চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হতো। প্রতি বছর সবজি উত্পাদন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সবজি কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু গত প্রায় দেড় মাস যাবত্ মহামারি করোনার প্রভাবে পরিবহনের সংকটে এবং বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা বাজারে আসতে না পাড়ায় কৃষকেরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

বর্তমানে এই মোকামে পানির দরে সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি করলা ৪ থেকে ৫ টাকা, শসা ১০ টাকা, পটোল ২০ টাকা, লাউ ১০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৮ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তার পরও ক্রেতা নেই। এদিকে ক্রেতা না পাওয়ায় অনেকের খেতেই নষ্ট হচ্ছে সবজি। কৃষকদের কেউ কেউ উত্পাদিত সবজি গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।

শিবপুর উপজেলার বান্ধারদিয়া গ্রামের কৃষক ছোটন মিয়া ‘কৃষকের কোনো মূল্য নেই’ বলে আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে করলা চাষ করে উত্পাদিত প্রতি কেজি করলা প্রথমে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম। সেই করলা এখন ৪-৫ টাকা কেজিতেও কেউ কিনছে না।’

একই কথা বলেছেন সফরিয়া গ্রামের কৃষক শেখ মোহাম্মদ নাজক মিয়া। এক বিঘা জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে বেগুন চাষ করে তিনি মাত্র ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন, বাকি ৩৫ হাজার টাকাই লোকসান।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু জানান, করোনার প্রভাবে কুষ্টিয়ায় প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এখানকার পাইকারি সবজিবাজারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ মণ বেগুন আসে। স্থানীয় আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এই সবজির একটি অংশ ক্রয় করেন। তবে হিসংভাগই চলে যায় ঢাকার কাওরান বাজারের সবজি মোকামে। কিন্তু চাহিদা না থাকায় সবজির দামে বড়ো ধরনের ধস হয়েছে। কুষ্টিয়ার এই পাইকারি বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজিতে। অথচ প্রতি বছর রমজানে বেগুনের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য সবজির দামেও একই অবস্থা।

গত এক যুগে দেশে সবজি উত্পাদনে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সবজি উত্পাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এর কৃতিত্ব কৃষকের। ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে দেশে ৮ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমি থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ টন সবজি উত্পাদন হয়। প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে সবজির উত্পাদন বাড়ছে। কিন্তু করোনার প্রভাবে এখন যদি কৃষক মার খান, তাহলে পুরো দেশকেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে শাক-সবজির বাজারজাতকরণ ও পচনশীল কৃষিপণ্যের চলাচল নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ত্রাণসামগ্রীতে আলু, সবজি, পেঁয়াজ ইত্যাদি কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, লকডাউন এলাকার উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য ঘাটতি এলাকায় পাঠানোর ক্ষেত্রে ট্রাক চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে বাজেটে কৃষকদের স্বার্থে সারসহ সেচকাজে বিদ্যুত্ বিলের রিবেট বাবদ কৃষি খাতে ৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সার্বিক কৃষি খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৯ শতাংশ সুদের স্থলে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ প্রণোদনা প্রদান করবে। আশা করছি, করোনার কারণে আমাদের কৃষি খাতে যে ক্ষতি হবে, তা আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়