কামরুল হাসান মামুন : আচ্ছা করোনায় গরিবরা আক্রান্ত হচ্ছে না? তারা কি হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছুতে পারছে? নাকি তারা করোনায় আক্রান্তই হচ্ছে না। এই পর্যন্ত গণমাধ্যমে যতোজন আক্রান্ত বা মারা যাওয়ার সংবাদ শুনেছি তাদের সবাই অবস্থাসম্পন্ন মানুষ। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব সদ্য প্রয়াত ড. সাদাত হোসেনের ছেলের স্ট্যাটাস পড়ে মনে হলো তার ক্ষেত্রেই যদি এমন হয় তাহলে বাকিদের ক্ষেত্রে কী হবে। তার ছেলের স্ট্যাটাসটি নিচে কাট-পেস্ট করলাম। পড়লে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন এই দেশে সাধারণ মানুষরা কতোটা অসাধারণ অবস্থায় আছে। ‘অসুস্থ হবার টাইম এটা না... গত কয়েকদিন বাবা হারিয়ে আর অসুস্থ মায়ের কারণে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কিন্তু আশা করি যেন কাজে না আসে কারও এই লার্নিংগুলো... পরিবার ও আপনি যেন সুস্থ থাকেন। ১. তদবির না করলে আইইডিসিআর থেকে সহজে নমুনা সংগ্রহ করতে আসে না কেউ। তাই নমুনা সংগ্রহ করতে হতে পারে হাসপাতালে অ্যাডমিটের জন্য এ রকম সিচুয়েশনে যতো আগে সম্ভব যোগাযোগ করুন দেরি না করে। ২. যে হাসপাতালে নেন, নমুনার রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত ডাক্তাররা কোভিড পেসেন্ট হিসেবে ট্রিট করবে আপনার রোগীকে। এটা মূল রোগের ডায়াগনোসিস ও ট্রিটমেন্টকে বিলম্বিত করবে। পেশেন্টের রোগের ধরনই যদি এমন হয় যে দ্রুত প্রপার মেডিকেশন লাগবে, সেক্ষেত্রে ভাগ্য আপনার সহায় হোক। আমার বাবার ক্ষেত্রে ভাগ্য সহায় হয়নি। ডায়াগনোসিস, ট্রিটমেন্ট দুই-ই দেরি হয়ে গিয়েছিলো।
৩. রোগীর যদি কোনোক্রমে শ্বাসকষ্ট হয়ে যায়, প্রায় প্রতিটি প্রাইভেট হাসপাতালই অ্যাডমিশন নিতে গড়িমসি করবে এবং এই সময়ে তদবিরেও কাজ হবে না। বাবা হাসপাতালে থাকার একই সময়ে আমার মায়েরও অ্যানেমিয়া হার্ট অ্যাটাকের কারণে ব্রিদিং সমস্যা হওয়ায় ৩/৪টি হাসপাতাল ঘুরেও অ্যাডমিশন হচ্ছিলো না। পরিচিত ডাক্তারের থ্রুতে শেষমেষ মোটামুটি মানের একটা হাসপাতালে জায়গা হয়, না হলে অ্যাম্বুলেন্সেই মাকে হয়তো হারাতে হতো বাবার সঙ্গেই। কাজেই হাসপাতালের সঙ্গে তর্ক না জুড়ে বরং এফোর্ট দিন কোন হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে, সেটা মোটামুটি হলেও।
৪. প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে সেটি কোভিড-১৯-এর জন্য ডেডিকেটেড হোক না হোক, ডাক্তারদের পিপিই-এর বিল আপনার ঘাড়ে আসবে মেডিকেল ডিসপোসেবলস হেডিংয়ের ভেতর। সো বিল শক একটু লাগতে পারে, রেডি থাকুন। এটি সব প্রাইভেট হাসপাতালের পলিসি নাকি সেটা জানি না অবশ্য। ৫. প্রয়োজনীয় ডাক্তার বা স্পেশালিস্টদের একসঙ্গে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কেউ ছুটিতে, কেউ আসা বাদ দিয়েছে, কেউ ২/৩ দিন আসে। একটু কম এক্সপার্টদের হাতে মাঝেই মধ্যেই ছেড়ে দিতে হবে আপনার পেশেন্টকে এই সময়ে। ৬. পরিশেষে এটা অসুস্থ হওয়ার সময় না, করোনাভাইরাসে ধরলে এক সেন্সে কোনো না কোনো হাসপাতালে হয়তো অ্যাডমিশন পেয়েও যেতে পারেন, সুস্থও হয়ে যাবেন মেবি ঘরে থেকেও। কিন্তু নন করোনা কোনো রোগের টাইম এটি নয় স্পেশালি একটু জটিল ধরনের কিছু হলে। তাই সুস্থ থাকেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান যাতে হাসপাতাল থেকে, ডাক্তার থেকে দূরে থাকতে পারেন শতহস্ত। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :