শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:৩৯ সকাল
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:৩৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শুধু অস্ত্র বিক্রি নয়, নিজেরাও ভাড়াটে কিলার

ডেস্ক রিপোর্ট : লকডাউনে ফাঁকা রাজধানীর রাজপথ। এ সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে নানা অপরাধীচক্র; টাকার জন্য অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ছে মানুষের ওপর। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরের ‘পাটোয়ারী গ্রুপ’, ‘চাপায়-দে গ্রুপ’, ‘ফিল্ম-ঝিরঝির গ্রুপ’, ‘লারা-দে গ্রুপ’ নামের কিশোর গ্যাংগুলো ইদানীং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সুনসান সড়কে পথচারীদের আতঙ্ক এখন এসব চক্র।

এক সপ্তাহ আগে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের ভাঙা মসজিদের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন কারওয়ানবাজারের মমতাজ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি আড়তের কর্মচারী মো. খোরশেদ গাজী। গত ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিন ছিনতাইকারী তার গলায় চাপাতি ঠেকিয়ে, বাট দিয়ে পিটিয়ে ৬১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত শনিবার রাতে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান ও হাজারীবাগ থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত সোহাগ ওরফে ডায়মন্ড সোহাগ ও দিলশাদকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানাপুলিশ। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় চাপাতি ও ছিনতাই হওয়া ৬১ হাজার টাকার ২৮ হাজার টাকা। গত রবিবার সোহাগ ও দিলশাদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতানুগতিক এক ছিনতাইকা-ের তদন্তে নেমে রীতিমতো চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তারা। গ্রেপ্তার দুজন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া

পলাতক তৃতীয়জনের নাম হৃদয়। তিনজনই কিশোর গ্যাং চাপায়-দে গ্রুপের সদস্য। হৃদয় মোহাম্মদপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিট যুবলীগের এক নেতার ছোটভাই। ওই নেতা তসিফ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি। তার শেল্টারেই চলে চাপায়-দে গ্রুপ। উল্লিখিত তিনজন ছাড়াও এ গ্যাংয়ের অন্য সদস্যরা হলোÑ নিঝুম, শাহেদ, জুম্মন, শাকিল, শাকিব, রুবেল, রাকিব, ইউসুফ এবং স্থানীয় কিছু বখাটে কিশোর-যুবক। ইন্টারনেটে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে তারা অন্য গ্যাংয়ের সদস্যের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও রয়েছে। বিশেষ করে পাটোয়ারী গ্রুপের অন্যতম সদস্য ফালান ও শামীমের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র রয়েছে। তারা মহল্লার ফাঁকা রাস্তায় শুধু ছিনতাই-ই করে না, কিলার ও ফাইটার হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা তো বটেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাড়ায় যায়। অবৈধ অস্ত্র কারবারের সঙ্গেও সম্পৃক্ত তাদের কেউ কেউ। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ রোড এলাকা থেকে এই কিশোর গ্যাংয়ের ৩ অস্ত্রবাজ রুবেল হোসেন, সোহাগ আলী ও মো. সোহাগকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম পিস্তল ও ১৮৭ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২। তারা রাজনৈতিক কর্মকা-ের জন্য অস্ত্রসহ ভাড়ায় যায় এবং অস্ত্র ভাড়া দেয় ও বিক্রি করে।

জানা গেছে, ভারত সীমান্ত হয়ে তারা অস্ত্র ও গুলির চালান দেশে আনে। একটি ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম পিস্তল প্রায় ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। গুলির জন্য আলাদা দাম দিতে হয় ক্রেতাদের। এ ছাড়া একটি ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম পিস্তল, সঙ্গে দুই রাউন্ড গুলি দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকায় ভাড়া চলে। সপ্তাহ চুক্তিতেও পিস্তল ভাড়া নেয় কেউ কেউ। এ ক্ষেত্রে একটি পিস্তলের ভাড়া পড়ে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। গুলির জন্য দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। শুটারগান ও পাইপগানও ভাড়া দেয় চক্রের সদস্যরা।

শুধু তাই নয়, কিশোর গ্যাংয়ের একটি চক্র সংঘবদ্ধ ছিনতাইচক্রের সঙ্গে মিশে তাদের ভাড়া করা মাইক্রোবাসে ‘ডিবি’ ও ‘র‌্যাবের’ স্টিকার লাগিয়ে ছিনতাই করত। ব্যাংক ও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে বের হওয়া ব্যক্তিদের টার্গেট করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা সরাসরি ছিনতাই কার্যক্রম পরিচালনা করতো। কখনো টার্গেটকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে সর্বস্ব লুট করে নির্জন স্থানে ফেলে দিত। বর্তমানে লকডাউনের কারণে রাস্তায় মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত নজরদারির কারণে এ গ্রুপ এখন গা ঢাকা দিয়ে আছে।

কিশোর গ্যাংয়ের অন্য একটি চক্র ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং শপিংমলের সামনে ছিনতাই করত। তারা রাস্তা পারাপারের সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকা ব্যাগ চাকু দিয়ে কেটে ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ছোঁ মেরে নিয়ে কেটে পড়ত। এ চক্রের কিছু সদস্য রাজধানীতে সক্রিয় আছে। আর করোনার কারণে বর্তমানে বেশিরভাগই নিজ নিজ গ্রাম বা শহরতলিতে অবস্থান করছে।

ছিনতাইয়ের শিকার খোরশেদ জানান, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় সপরিবারে থাকেন তিনি। ২৩ এপ্রিল রাতে পাইকারি পেঁয়াজ কেনার জন্য ৬১ হাজার টাকা নিয়ে বাসা থেকে কারওয়ানবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মদিয়া হাউজিংয়ের ভাঙা মসজিদের সামনে তিনজন ছিনতাইকারী চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে তার পকেটে থেকে ৬১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। প্রথমে তিনি টাকা দিতে না চাইলে তার মাথায় চাপাতির উল্টো পাশ দিয়ে আঘাত করে হৃদয়। অন্যরা গলায় ঠেকিয়ে ধরে বলে, যা আছে সব দিয়ে দে। পরে ৯৯৯-এ কল করে ঘটনাটি জানান তিনি। পরদিন সকালে থানায় মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. প্লাবন আহমেদ রাজীব জানান, বাদীর দেওয়া একটি ক্লু ধরে জানা গেছে, ছিনতকারীরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এর পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতা সোহাগ উরফে ডায়মন্ড সোহাগ এবং তার অন্যতম সহযোগী দিলশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাতক ছিনতাইকারীসহ চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ ছিনতাইকা-ের তদন্তে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে জানিয়ে এসআই রাজীব বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। যেখানে রাজনৈতিক দলের নেতা ছাড়াও স্বনামধন্য কয়েকজন জড়িত। তদন্তের স্বার্থে আপাতত তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়